সারাবিশ্বেই অক্টোবর বিপ্লবের তুলনীয় কোনো বিপ্লব ঘটেনি উল্লেখ করে ১২টি বাম রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, অক্টোবর বিপ্লব সামাজিক সম্পর্ক ও সম্পদের মালিকানাকে মীমাংসা করেছে।
Advertisement
সম্পদের মালিক কে হবে, পাঁচ শতাংশ মানুষ নাকি পঁচানব্বই ভাগ মানুষ, সেটিকে মীমাংসা করেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে রাশিয়ায় লেনিনের নেতৃত্বে অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
বিকেল চারটায় বিভিন্ন সঙ্গীত উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বলা হয়ে থাকে জাতীয়তাবাদীরাই মুক্তিযুদ্ধ করেছে। কিন্তু বামপন্থীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের ভেতরে থেকে কোনো প্রকার বিদেশি সাহায্য ছাড়াই অবহেলিত জনপদে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছে।
তিনি বলেন, ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব এখনও প্রাসঙ্গিক এবং তাৎপর্যপূর্ণ। সমাজতন্ত্রের পতন হয়েছে বলা হলেও আসলে অনেক রাষ্ট্র সমাজতন্ত্র থেকে সরে গেছে। ফলে ওইসব দেশে নারীকে পণ্য করা হয়েছে। সমাজতন্ত্রের পতনের পর অধ্যাপকরা ভিক্ষুকে পরিণত হয়েছেন।
Advertisement
উদ্বোধনী বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী চীন-রাশিয়া-ভারত ও মিয়ানমারের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, তারা এখনও মিয়ানমারের গণহত্যায় সমর্থন দিচ্ছে। বিশেষ বক্তা হিসেবে আলোচনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশের সব মানুষের আন্দোলনে, ছাত্র আন্দোলনে, সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনে সব আন্দোলনে অক্টোবর বিপ্লবের চেতনা আছে।
এটা বার্মার নির্যাতিত মুসলমান বা ভারতের নিপীড়িত মানুষের আন্দোলনে, সর্বত্র অক্টোবর বিপ্লবের চেতনা আছে। আনু মুহাম্মদ বামপন্থী দলগুলোকে অক্টোবর বিপ্লবের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সারাদেশে এই চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে। সবাইকে অক্টোবর বিপ্লবের চেতনায় কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সবার মধ্যে যোগসূত্র থাকতে হবে, সমন্বয় করতে হবে।
এ সময় তিনি শাসকদলের দেশ পরিচালনার সমালোচনা করে বামপন্থীদলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, এখন নতুন করে রাজনীতি দরকার। নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আর ঐক্যবদ্ধ হতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরতে হবে। ফিরতে হবে রুশ বিপ্লবে, যে রুশ বিপ্লবের চেতনা মুক্তিযুদ্ধে আমাদের স্লোগান তোলার প্রেরণা দিয়েছে।
এছাড়া সমাবেশে বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান, বাসদ নেতা শুভ্রাংসু চক্রবর্তী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির মোশরেফা মিশু, গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, বামনেতা হামিদুল হক, মোশাররফ হোসেন নান্নু, শামসুজ্জামান মিলন, নাসির উদ্দিন আহমেদসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।
Advertisement
সমাবেশ শুরুর আগে ১২টি বামপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা রুশ বিপ্লবের ওপর নানা রকম ফেস্টুন, ব্যানার, প্রতিকৃতি বহন করে মিছিল করে। সমাবেশে মার্কস, এঙ্গেলস, লেনিন, মাও সে তুংয়ের প্রতিকৃতি দিয়ে নানা প্রচারণা ব্যবহার করা হয়। রাত সাড়ে সাতটার দিকে সমাবেশ শেষ হওয়ার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এমএম/এমআরএম/জেআইএম