বনজ-ফলজ-ঔষধি বৃক্ষের সঙ্গী ফসল হিসেবে বোম্বাই মরিচের বাণিজ্যিক চাষ পিরোজপুরের কৃষি অঙ্গনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ভাগ্য বদলে দিয়েছে এ চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার কৃষকের। খেতের ছোট ছোট চারাগুলোতে লাল টুকটুকে বোম্বাই মরিচের এ নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখলে যে কারও মন আনন্দে উদ্বেলিত হবে নিঃসন্দেহে।
Advertisement
তবে মরিচ চাষিরা জানিয়েছেন, এতদিন ভালোভাবে তাদের চাষাবাদ চললেও এবছর গোড়া পঁচা রোগ দেখা দিয়েছে। এলাকার অনেক খেতে দেখা দিয়েছে এ রোগের প্রদুর্ভাব। অন্যান্য কৃষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে কিটনাশক দেয়া হলেও কোনো কাজ হয় না।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আবুল হোসেন তালুকদারের ভাষ্য, ওই রোগটির নাম ডাইব্যাক। এটি এক জাতীয় ছত্রাক। বাজারে বিভিন্ন প্রকার ছত্রাকনাশক পাওয়া যায়, তা পরিমাণ মত ব্যবহার করলে এ রোগ কমে যাবে।
জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার মেহগনি, রেইন্ট্রি, চাম্বল, আম, লিচুসহ বিভিন্ন নার্সারি বাগানের ফাঁকে এমনকি বাড়ির আঙিনায়, খালি জায়গায় বোম্বাই মরিচ চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। স্বরূপকাঠী উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানা, রায়েরহাট, মিয়ারহাট, মুসলিমপাড়া, ভীমরুলি, ব্রাহ্মণকাঠি ও সঙ্গতকাঠিসহ প্রায় ২০টি গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ তাদের ভাগ্য বদলেছেন এই বোম্বাই মরিচ চাষ করে।
Advertisement
সচরাচর সব ধরনের মরিচের চেয়ে বেশি ঝাল ও ঘ্রাণ সমৃদ্ধ বোম্বাই মরিচ আন্তর্জাতিকভাবে Chilli pepper নামে বেশি পরিচিত। উত্তর পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশে এর ব্যাপক চাষ রয়েছে। এছাড়া আমেরিকা, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়াতে এর চাষ রয়েছে।
বাংলাদেশের সিলেটে এক সময় বেশি চাষ হতো। ১২ থেকে ১৪ বছর ধরে স্বরূপকাঠিতে বাণিজ্যিক ভাবে বোম্বাই মরিচ চাষ হচ্ছে।
চাষিরা জানান, কার্ত্তিক মাসের শেষ দিকে শুরু হয় বোম্বাই মরিচ চাষের কার্যক্রম। প্রথমে বেড তৈরি করে বীজ বপন করে চারা উৎপাদন করা হয়। পরবর্তীতে অগ্রহায়নের মাঝামাঝি বেড থেকে চারা তুলে সারিবদ্ধভাবে মেহগনি চারার সঙ্গে খেতের আইলে বোম্বাইয়ের চারা রোপন করা হয়। এরফলে প্রখর রোদের হাত থেকে বোম্বাই মরিচের চারাগুলো রক্ষা পায়।
প্রতি বিঘা জমিতে রোপণ করা হয় প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার বোম্বাই চারা। প্রতি বিঘায় উৎপাদন হয় অন্তত দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মরিচ।
Advertisement
চাষিরা আরও জানালেন, বিঘা প্রতি জমিতে মরিচ চাষের জন্য খরচ হয় মাত্র ৪০-৪৫ হাজার টাকা, আর উৎপাদিত মরিচ বিক্রি করে আয় হয় প্রায় দেড়-দুই লাখ টাকা। প্রতি মৌসুমে বৈশাখ-জৈষ্ঠ ও আষাঢ় এই তিন মাস মরিচ উৎপাদন ও বেচা- কেনা চলে পুরোদমে।
উৎপাদিত মরিচ স্বরূপকাঠীর মুসলিমপাড়া, মাহামুদকাঠি, জিন্দাকাঠি, আটঘরের হাট এবং পার্শ্ববর্তী বানারীপাড়ার স্থানীয় আড়তে পাইকারি হিসেবে বিক্রি করেন কৃষকরা। স্থানীয় বাজারে পাইকাররা প্রতি হাজার মরিচ ৪শ থেকে ৫শ টাকায় কেনেন। পরে মরিচগুলো প্যাকেটজাত করে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠান হয়।
এলাকার কৃষকরা জানান, লাভজনক এ বোম্বাই মরিচ চাষে কৃষি অফিসের সাহায্য বা পরামর্শ তারা সেভাবে দিতে পারছেন না।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে, এ অঞ্চলে বোম্বাই জাতের মরিচ চাষ কয়েক বছর ধরে শুরু হলেও মরিচ চাষের বিষয়ে কোনো ধরনের পরামর্শ বা সহযোগিতা দেয়ার জন্য কোনো পদ্ধতি এখনও চালু করেনি সরকার। কৃষিবিদরা আরও বলছেন, এ অঞ্চলের বোম্বাই মরিচ চাষে সরকারের পক্ষ থেকে যদি সকল ধরনের সাহয্য সহযোগিতা করা হয় তাহলে স্বরূপকাঠীর পেয়ারার মতই মরিচের সুনাম সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে।
হাসান মামুন/এফএ/এমএস