বিশেষ প্রতিবেদন

স্মার্ট কার্ডে ব্যয় ৫০ কোটি টাকা কমানোর পরিকল্পনা

উন্নত মানের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট কার্ড তৈরির ব্যয় ৫০ কোটি টাকা কমানোর পরিকল্পনা করেছে আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর অ্যানহান্সড অ্যাক্সেস টু সার্ভিস (আইডিয়া) প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। ব্যয় কমানো হলেও স্মার্ট কার্ডের ভোটারদের তথ্য থাকবে একই। আকারেরও কোনো পরিবর্তন হবে না। তবে কার্ডে যে উন্নতমানের লেমিনেটিং পেপার ব্যবহার হতো, এখন থেকে আরেকটু কম মূল্যের পেপারে তা মোড়ানো থাকবে।

Advertisement

এ-সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, চূড়ান্ত করে শিগগিরই তারা কমিশনের অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করতে পারবেন। এর আগে কমিশনের মৌখিক নির্দেশনা নিয়ে এ কাজ শুরু করা হয় বলে জানান তারা। জানা যায়, এখন স্মার্ট কার্ডের সঙ্গে একটি সুদৃশ্য খাম এবং খামের ভেতরে কার্ডটি সংরক্ষণ ও ব্যবহারের নির্দেশিকা-সংবলিত একটি চিরকুট থাকে। আগামীতে সেগুলো বাদ দেয়া হচ্ছে। এই খাম ও নির্দেশিকার জন্য ৬-৭ টাকা ব্যয় হত। কিন্তু স্মার্ট কার্ড পাওয়ার পর অনেকে ইসির কর্মকর্তাদের সামনেই তা ছিঁড়ে বা ছুড়ে ফেলেছেন।

এ ছাড়া প্রতিটি বিতরণ কেন্দ্রে ২৫০ কার্ডের জন্য আলাদা বক্স নম্বর দিয়ে সেগুলো সংরক্ষণ করা হত। এর জন্য জনবল এবং জায়গাও বেশি লাগতো। আইডিয়া কর্তৃপক্ষ বলছে, অপরিহার্য নয়; এমন উপাদান স্মার্ট পরিচয়পত্র থেকে বাদ দেয়া হলে কোনো ক্ষতির শঙ্কা নেই। বরং সময়, জনবল এবং ব্যয় কমবে।

স্মার্ট কার্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিয়া প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও এইআইডি উইংয়ের ডিজি ব্রি. জে. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘স্মার্ট কার্ডের ব্যয় সংকোচনে একটা পর্যালোচনা চলছে। পর্যালোচনার মধ্যে কার্ডের খাম ও নির্দেশনা রাখা হচ্ছে না। এতেই আমাদের ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা সেভ হচ্ছে। কারণ কার্ডটি পাওয়ার পর খামটি ছিঁড়ে ফেলা এবং নির্দেশিকায় কী লেখা আছে তা পড়েও দেখা হচ্ছে না।’

Advertisement

এ দিকে ফ্রান্সের ওবার্থু কোম্পানির সঙ্গে গত জুনে চুক্তির পরিসমাপ্তিতে গত ২৭ আগস্ট থেকে নিজস্ব ব্যবস্থায় স্মার্ট কার্ড মুদ্রণ হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী তাদের বিনিয়োগ করা অর্থে মুদ্রণ ও বিতরণ চলবে স্মার্ট কার্ডের। আসছে নতুন বছর অর্থাৎ জানুয়ারি মাস থেকে সরকারি অর্থায়নে কার্ড ভোটার নাগরিকদের হাতে পৌঁছে দেবে ইসি। এর জন্য কত টাকা লাগবে সে-সংক্রান্ত কোনো হিসাব এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে, এর আগে সরকারের অর্থের অপচয় ও ব্যয় সংকোচনে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে আইডিয়া সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন কমিশনকে ডেমোর মাধ্যমে তাদের ব্যয় সংকোচনের পুরো তথ্য-উপাত্ত দেখানো হবে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নয় কোটি ভোটারকে স্মার্ট কার্ড দেয়ার কথা ছিল। গত ২৫ মে পর্যন্ত মাত্র ১৮ লাখ নাগরিককে স্মার্ট কার্ড দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ মাত্র ২ শতাংশ কার্ড বণ্টন হয়েছে। আরো বাকি রয়েছে আট কোটি ৮২ লাখের বেশি।

স্মার্ট কার্ডের বিষয়ে ফ্রান্সের ওবার্থুর টেকনোলজিসের সঙ্গে ২০১৪ সালে ৮০০ কোটি টাকার চুক্তি করে ইসি। তাদের সঙ্গে চুক্তি ছিল নয় কোটি কার্ডের। দফায় দফায় পিছিয়ে সেই কার্ড বিতরণ শুরু হয় ২০১৬ সালে। তাদের অনুরোধে প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়ানো হয়। মেয়াদ বাড়ানোর পরও কোনো লাভ হয়নি; আগের অবস্থায় ছিল স্মার্ট কার্ড মুদ্রণ ও বিতরণের কাজটি। পরে তাদের সঙ্গে সব চুক্তি বাতিল করে নিজস্ব উদ্যোগে কার্ড মুদ্রণ হচ্ছে। আর নিজস্ব অর্থায়নে আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে মুদ্রণ ও বিতরণ চলবে।

এইচএস/এআরএস/আরআইপি

Advertisement