২০১০ সালে একনেকে পাশ হওয়া বাগেরহাটের সাইনবোর্ড থেকে বগী পর্যন্ত ৫৬ দশমিক ৬২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণ কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ শিডিউল অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শরনখোলায় বিক্ষোভ হয়েছে। শরনখোলা-মোড়েলগঞ্জ উপজেলার প্রায় ২ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠির চলাচলের একমাত্র এ সড়কটি নির্মাণ কাজের দীর্ঘসূত্রতা ও অনিয়মের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে।বহু প্রতিক্ষিত এ সড়ক নির্মাণে অনিয়মের বিষয়টি ইতোমধ্যে এলাকাবাসী স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেনকে অবহিত করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন। সাংসদ জানান, বহু প্রতিক্ষিত এই সড়ক নির্মিত হলে পর্যটকদের সুন্দরবনে আসা-যাওয়াব পথ সুগমসহ এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের কষ্ট লাঘব হবে। তাই এ সড়ক নির্মাণে দুর্নীতি, অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। একই সঙ্গে তিনি রাস্তার কাজ সঠিকভাবে আদায় করে নেয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান।জানা গেছে, ২০০৭ সালে সিডর ও আইলার পর থেকে বাগেরহাট সাইনবোর্ড-মোড়েলগঞ্জ-শরনখোলা আঞ্চলিক সড়কটি চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের সভায় ৫৬ দশমিক ৬২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাগেরহাটের সাইনবোর্ড-মোড়েলগঞ্জ-শরনখোলা উপজেলা সংযোগ সড়কটিকে আঞ্চলিক মহাসড়কে রূপান্তরিত করে ৩ বছরের মধ্যে এর উন্নয়নে ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। সড়ক বিভাগ থেকে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের পর ওই বছরের ১ জুলাই থেকে আঞ্চলিক এই মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়।২০১১-১২ অর্থ বছরে এই সড়কের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করা হয় ২৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই সড়কের উন্নয়ন কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সড়ক বিভাগ থেকে অবশিষ্ট টাকা বরাদ্দ না হওয়ায় বন্ধ থাকে রাস্তার নির্মাণ কাজ । ২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর যোগাযোগমন্ত্রী মো. ওবায়দুল কাদের এ আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ পরির্দশনে এসে অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেন। পরের বছর ২০১৩ সালে এ আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণের ব্যয় পুননির্ধারণ করা হয় ১ কোটি ২৭ লাখ টাকায় । অর্থ বরাদ্দের পর টেন্ডার আহ্বান করা হয় ওই বছরের শুরুতেই।অনুসন্ধানে জানা যায়, একনেকে পাশ হওয়া এ সড়কে র্দীঘ ৫ বছরে কাজের অগ্রগতি বলতে ২৮টি কালভার্ট ও ৩টি ব্রিজ। এছাড়া সড়কে বালি ও কিছু কিছু স্থানে ইট দিয়ে দায়সারা কাজ করা হয়েছে। কয়েক স্থানে কার্পেটিং হলেও তার মান নিম্ন। পুরোনো সড়কের ব্লাকটব উঠিয়ে নিয়মানুযায়ী সাববেজ, মেকাডমের কাজ না করে এবং কার্পেটিং-সিলকোড নির্ধারিত মাপের না করে দায়সারাভাবে সম্পন্ন করা হচ্ছে দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের বহু প্রতিক্ষিত আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ। এমনকি গত বছরে শরণখোলা বাজার থেকে বকুলতলা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার সড়কের কাজ নিম্নমানের হওয়ায় ও সিলকোড অসমাপ্ত রাখায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন স্থানীয়রা।সরেজমিনে আঞ্চলিক এ মহাসড়কের নির্মাণ কাজ দেখতে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে মোড়েলগঞ্জ ও শরনখোলার দুটি অংশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় পিচ ঢালাই হলেও অধিকাংশ স্থানে ইটের খোয়া ফেলে রুলারের কাজ চলছে। ২ উপজেলার সীমিত অংশ ছাড়া বাকি রাস্তার চরম দুর্দশা। খানাখন্দে ভরা এ রাস্তার বাকি অংশ দিয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে শতশত যাত্রীবাহী যানবাহন। এ রুটে ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী বেশ কিছু পরিবহন সরাসরি শরনখোলা থেকে চলাচল করছে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। প্রায় ৫৭ কিলোমিটারের এ ভাঙা সড়কে চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা।শরনখোলা উপজেলার তাফালবাড়ী বাজারের বাসিন্দা রাজিব হাওলাদার জাগো নিউজকে জানান, দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে এ সড়ক। অথচ নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে এটি। এ সড়কের বকুলতলা অংশে প্রায় অর্ধ কি.মি জায়গায় লোকাল পাঁজার তিন নম্বর ইট ব্যবহার করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে আউটসাইড পাইলিং টেকসই না করেই রাস্তা কার্পেটিং করা হয়েছে। যা ৪/৫ মাসের মধ্যেই দেবে যেতে পারে।শরনখোলা উপজেলার মধ্যকদমতলা গ্রামের ইউপি সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম মোল্লা জাগো নিউজকে জানান, শিডিউল মোতাবেক রাস্তার কোনো কাজই হয়নি। প্রায়ই ইঞ্জিনিয়ারদের অনুপস্থিতিতে ঠিকাদাররা শ্রমিকদের দিয়ে যা ইচ্ছা তাই কাজ করেছে। কার্পেটিং ও শিলকোডের পরিমাপ ৭৫ মিলিমিটার নির্ধারিত থাকলেও তা সঠিকভাবে করা হয়নি।এ ব্যাপারে বাগেরহাট জেলা সড়ক-জনপদ বিভাগের প্রকৌশলী মো. নাহিন রেজা জাগো নিউজকে বলেন, এ সড়ক নির্মাণ কাজে অনিয়ম হলে তদন্ত করে দেখা হবে। সড়কের কাজ নিম্নমানের হলে সংশ্লিষ্ট কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চীপ এডিশনাল ইঞ্জিনিয়ার খুলনা কাজী মোহাম্মদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, কাজের মান খারাপ হওয়ার কথা নয়। যদি খারাপ হয় তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।শওকত আলী বাবু/এমজেড/আরআইপি
Advertisement