মতামত

ভারতের বিপক্ষে আসল বাঘ বাংলাদেশের পেসাররাই

ভারতের বিপক্ষে সবে শেষ হওয়া টেস্ট ম্যাচে মাত্র একজন পেসার নিয়ে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। বৃষ্টির কারণে এই নেতিবাচক কৌশলের চরম খেসারত অবশ্য দিতে হয়নি স্বাগতিক বাংলাদেশকে। তবে ড্র পেলেও লজ্জা এড়াতে পারেনি স্বাগতিকরা। ৫ দিনের ম্যাচ মাঠে গড়ায়নি দুদিনও। তারপরও ডুবতে হয়েছে ফলো-অনের লজ্জায়। দেশের পেসারদের টেস্ট খেলার যোগ্য মনে করেননি আমাদের ক্রিকেট থিংক ট্যাংক। যদিও বাস্তব চিত্রটা পুরোই ভিন্ন। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সবগুলো ওয়ানডে বিজয়ের মূল কারিগর কিন্তু বাংলাদেশের পেসাররাই। এছাড়াও জয়ের সম্ভাবনা জাগানিয়া ম্যাচগুলোতেও আমাদের পেসাররাই ছড়ি ঘুরিয়েছে ভারতীয় ব্যাটসম্যনদের।ওয়ানডে লড়াইয়ে ভারতকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ হারিয়েছে তিন বার। প্রথম জয়টি ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর। তিন ম্যাচের ওই ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সফরকারী ভারতকে ১৫ রানে হারায় বাংলাদেশ। ম্যাচে বাংলাদেশের ২২৯ রানের জবাবে সফরকারিরা অল আউট হয় ২১৪ রানে। ভারতের পতন হওয়া ১০ উইকেটের ৬ উইকেট শিকার করেন তিন পেসার মাশরাফি মর্তুজা, তাপস বৈশ্য ও খালেদ মাহমুদ। সফরকারী দলের দুজন ব্যাটসম্যান কাটা পড়েন রান আউটের খাড়ায়। বাকি দুই উইকেট বাহাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিকের। ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি পান মাশরাফি। ব্যাট হাতে ৩১ রানে অপরাজিত থাকার পর বোলিংয়ে  ৯ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ২ উইকেট পান ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। তাপসের বোলিং ফিগারটি ছিল ১০-২- ৩৫-২। মাত্র ৪০ রান খরচায় ২ উইকেট নেন খালেদ মাহমুদ।ভারতের বিপক্ষে টাইগারদের দ্বিতীয় জয় ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে। ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে শচীন- সৌরভ-শেবাগ-দ্রাবিড়-যুবরাজ- ধোনি সমৃদ্ধ ভারতকে ৫ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। ম্যাচে মাত্র ১৯১ রান তুলতেই দম ফুরিয়ে যায় দলটির। মাশরাফি একাই ধসিয়ে দেন ভারতকে। মাশরাফির বোলিং ফিগারটি আবারও স্মরণ করা যাক ৯.৩-২ -৩৮ -৪! বলা বাহুল্য ম্যাচ সেরা মাশরাফি। ম্যাচে নড়াইল এক্সপ্রেসকে অবশ্য সুযোগ্য সঙ্গ দিয়েছিলেন দুই বাহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক ও রফিক।ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ জয়ে মুখ্য অবদান অবশ্য বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। ২০১২ সালে এশিয়া কাপের ওই ম্যাচে ভারতের গড়া বিশাল স্কোর তাড়া করে জেতে টাইগাররা। ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেটে ২৮৯ রান সংগ্রহ করে ভারত। ব্যাটিং স্বর্গভূমিতে  দলটির রান যে তিনশো পেরোয়নি এর পুরো কৃতিত্ব মাশরাফির। রান উৎসবের ওই ম্যাচে ১০ ওভার বোলিং করে মাত্র ৪৪ রান খরচায় দলের পক্ষে সর্ব্বোচ্চ ২ উইকেট নেন মাশরাফি।ক্রিকেটে ভারতের মূল শক্তি তাদের ব্যাটিং। বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটিং লাইন আপ তাদের। এমন দলের বিপক্ষে বোলিং করাটা সবসময়ই খুব বড় একটা চ্যালেঞ্জ। এই বড় চ্যালেঞ্জেটা নিতে পিছপা হয়নি আমাদের পেসাররা। ম্যাচ জেতাতে না পারলেও বেশ অনেকবারই ভারতীয় শিবিরে আতঙ্ক ছড়াতে সমর্থ হয়েছে টাইগার পেসাররা। গত বছর তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটির কথাই স্মরণ করা যাক না। মিরপুরে ১৭ জুন বৃষ্টি বিঘ্নিত ওই ম্যাচে তাসকিন আহমেদ যে আগুন ঝরিয়েছিলেন তার কি কোনো তুলনা হতে পারে? বৃষ্টির কারণে পুননির্ধারিত ম্যাচটি ছিল ৪১ ওভারের। তাসকিন তোপে মাত্র ২৫.৩ ওভারেই ১০৫ রানে অলআউট হয় ভারত।  ৮ ওভার বোলিং করে মাত্র ২৮ রান দিয়ে ৫ জন ভারতীয় ব্যাটসম্যানকে শিকারে পরিণত করেন তাসকিন। সীমাহীন ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে হাতছাড়া হয় প্রাপ্য জয়। বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যায় ৫৮ রানে। কিন্তু তাতে মিথ্যা হয়ে যায় না তাসকিনের আগুন ঝরানো বোলিং।.এবারে আসা যাক এবারের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল  ম্যাচে। ঐতিহ্যবহুল মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে এই বিতর্কবহুল ম্যাচটি বারবার আসবে উদাহরণ হিসাবে। এই ম্যাচে বীরত্ব গাথার সবটুকু জুড়ে আছে  বাংলাদেশের পেসাররা। ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে ৭৫ রান তুলে নিলেন দুই ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। বড় ঝড়ের পুর্বাভাস। ধাওয়ান বিদায় নেয়ার পর উইকেটে আসলেন রান মেশিন বিরাট কোহলি। ভারত রানের সৌধ গড়বে এটাই তখন বাস্তবতা। কিন্তু দৃশ্যপট বদলে দিলেন রুবেল হোসেন। ব্যক্তিগত ৩ রানে উইকেটের পেছনে ধরা পড়লেন কোহলি। ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই অজিঙ্ক রাহানেকে (১৯) শিকারে পরিণত করলেন তাসকিন।ব্যাটের উপর শুরু হল পেসারদের দাপট। এই চাপ ধরে রাখার জন্য আক্রমণে আসলেন মাশরাফি। তার বলে পুরোপুরি পরাস্ত হলেন সুরেশ রায়না। তখন ১০ রানে খেলছিলেন রায়না। রিভিউ নিয়েও উইকেট পেলেন না মাশরাফি। অজুহাত দেখানো হল বল পড়েছিল লেগ স্টাম্পে।  বাংলাদেশের পেসারদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আম্পায়ারদের সাহায্য নেয়া ছাড়া আর কোনো পথই যেন ছিলো না ভারতের। এরপর ডেঞ্জারম্যান রোহিত শর্মার বেলায় নির্লজ্জতার চূড়ান্ত করলেন আম্পায়াররা। বোলার পেসার রুবেল। মিড উইকেট পরিষ্কার ক্যাচ। নো বলের অজুহাতে জীবন ফিরে পেলেন রোহিত শর্মা। ভারত ম্যাচ জিতল, আর নৈতিক জয়টা হলো টাইগার পেসারদের, সর্বোপরি বাংলাদেশের।মেলবোর্নের  তিন মাস পর ওয়ানডেতে আজ আবার মুখোমুখি বাংলাদেশ - ভারত। সর্বশেস টেস্ট ম্যাচে পেসাররা ছিলেন ব্রাত্য। কিন্তু রেকর্ড বলছে ভারতীয় শিবিরের জন্য আসল হুমকি বাংলাদেশের পেসাররা। এমনি অবস্থায় আজ মিরপুরে কতজন পেসার নিয়ে মাঠে নামবে স্বাগতিকরা, বড় হয়ে উঠেছে  এ প্রশ্নটাই। মাশরাফি- তাসকিন-রুবেল ত্রয়ী থাকবেন তো? অতি আশাবাদীরা মনে করছেন এই ত্রয়ীর সঙ্গে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০ ম্যাচে ম্যাজিক দেখানো পেসার মুস্তাফিজুর রহমানও আজ থাকতে পারেন সেরা একাদশে। কিন্তু পেসারদের প্রতি একটা অলিখিত ঊন্নাসিকতা আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট থিংক ট্যাংকের, সেই  সত্যটিও যে সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে বারবার।এইচআর/আরআইপি

Advertisement