বিশেষ প্রতিবেদন

পুরুষের সুন্দরী লাগে, তাই আমেনারা ‘এভ্রিল’ হয়

 ‘৩৬-২৪-৩৬’ এটিই তোমার পরিচয়। এই মাপের বাইরে চুল পরিমাণ গেলেই তুমি সুন্দরী নও। তোমার সুন্দর একটা মন থাকতে পারে, তাতে পুরুষের মন গলবে না। বুকের মাপ ৩৬ ইঞ্চি হলেই তোমাতে সৌন্দর্যের আয়না মেলে ধরবে পুরুষ। তোমার কোমর ২৪ ইঞ্চি হলেই তুমি কেবল আবেদন রাখতে পার। পশ্চাৎদেশের বেড় ৩৬ ইঞ্চির বেশি হলেই নারী তুমি পুরুষের কাছে অযোগ্য।

Advertisement

সুন্দরী প্রতিযোগিতা নিয়ে ওঠা সাম্প্রতিক বিতর্ক প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল নারীবাদী লেখক, কলামিস্ট জব্বার হোসেনের সঙ্গে। একটি বিশেষ মানদণ্ডে এমন সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিরোধিতা করেন জব্বার হোসেন।

এভ্রিল ঝড়ে কাঁপছে মিডিয়াপাড়া। এভ্রিল খবরে অস্থির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও। যেন এভ্রিলের রূপে দুনিয়ার সব নারীর রূপই উবে গেছে। আবার এভ্রিল কান্নায় রোহিঙ্গা কান্নাও যেন চাপা পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

নানা বিতর্ক সৃষ্টির মধ্য দিয়ে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ‘অন্তর শোবিজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। চূড়ান্ত ফলাফলে বিচারকদের উপেক্ষা করে জান্নাতুল নাঈম এভ্রিলের নাম ঘোষণা করে ব্যাপক সমালোচনায় পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। এমন সমালোচনায় ঘি ঢালে যখন এভ্রিলের বিয়ের কথা ফাঁস হয়ে যায়।

Advertisement

আত্মপক্ষ সমর্থন করে এভ্রিলও ফেসবুক লাইভে এসে কান্না করেন। বাল্যবিয়ের বিপক্ষে অবস্থান নেন তিনি।

‘অনেকে বলেছে, আমার বিয়ে হয়েছে, কেন আমি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি? এটা একটা প্রতারণা। কিন্তু আমি মনে করি না, আমার বিয়ে হয়েছে। যেখানে আমি একটা দিনও ছিলাম না। তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম’- বিয়ে নিয়ে প্রতারণার বিপক্ষে এমন মন্তব্য এভ্রিলের।

তবে তার (এভ্রিল) আত্মপক্ষ সমর্থন নিয়েও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে নানা মহলে।

এই ‘প্রতারণার ফাঁদ’ কি এভ্রিলের একার গড়া- এমনটি মনে করেন না রাজনীতিক ও নারীনেত্রী আমেনা কোহিনুর। তিনি বলেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ফাঁদে পড়া আর দশজন নারীর মতোই একজন এভ্রিল। তবে এভ্রিলও তার প্রতারণার দায় এড়াতে পারেন না।

Advertisement

তিনি মনে করেন, বাল্যকালে যদি এভ্রিল বিয়ে করে থাকেন, তাহলে সেটাও পুরুষের (তার বাবা) মতে হয়েছে। আমেনার নাম যদি জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল হয়, তবে সেটাও পুরুষের চাহিদার কারণে। আবার বিচারকদের মতামত উপেক্ষা করে এভ্রিলকে চ্যাম্পিয়ন করা হয়েছে, সেই পুরুষের ইচ্ছাতেই। আমার মনে হয় না, এভ্রিলকে এভাবে চ্যাম্পিয়ন করার ক্ষেত্রে কোনো নারীর হাত আছে!

এই নারীনেত্রী সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিরোধিতা করে বলেন, ‘পুরুষের সুন্দরী লাগে। আর এমন সুন্দরী হয়ে উঠতে পুরুষের পাতা ফাঁদেই নারীরা পা দেয়। এভ্রিল যদি প্রতারণা করে থাকেন সেটাও কোনো না কোনো পুরুষের প্ররোচনাতেই।’

নারীবাদী লেখক জব্বার হোসেন বলেন, এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা, যেটা সমাজের দৈন্যতাই প্রকাশ করে। নারীর যে কোনো স্বাধীনতা নেই, তারই প্রমাণ মেলে এসব প্রতিযোগিতায়। সুন্দর পুরুষ নির্বাচনে এমন কোনো আয়োজন নারীরা করে বলে আমার জানা নেই।

‘নারী কতটুকু পোশাক পরবে আর কতটুকু খুলবে, তা সম্পূর্ণ পুরুষের ইচ্ছাতেই হয়। আর বোকা নারীরা পুরুষের এসব লালসার শিকার হন।’

তিনি বলেন, একজন নারীর কুমারিত্বই (ভার্জিনিটি) এখন সৌন্দর্যের বা সম্মানের মাপকাঠি। রূপ প্রকাশের একমাত্র কারণ যেন অবিবাহিত থাকা। বিবাহিত হলে তার আর রূপ থাকে না, তাই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়াও তার জন্য পাপ হয়ে দাঁড়ায়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন নারীকে কখনই মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। এ কারণেই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় আমেনারা এভ্রিল হয়ে ওঠে।

এএসএস/এমএআর/আরআইপি