দেশের শেয়ারবাজারের ওপর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। যে কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যে পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করছেন ক্রয় করছেন তার থেকে বেশি। গত ১৩ মাস ধরেই এ চিত্র বিরাজ করছে।
Advertisement
সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যে পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করেছেন তার থেকে ১৭৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকার বেশি শেয়ার ক্রয় করেছেন। আর মোট লেনদেন আগস্টের তুলনায় বেড়েছে ১১৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা বা ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী। মাঝে মে মাসে কিছুদিন বাজারে মন্দা দেখা দিয়েছিল। এ সময় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে যায়। সেই সুযোগই নিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় তারা শেয়ার ক্রয়ে মনোযোগী হয়েছেন।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই শেয়ারবাজারে বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কম থাকায় বিক্রয়ের থেকে ক্রয় বেশি করেন তারা, যার ধারাবাহিকতা সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসেও অব্যাহত ছিল।
Advertisement
সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মোট লেনদেন করেন ৯৪৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, যা আগস্ট মাসের তুলনায় ১১৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা বা ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। জুন মাসে বিদেশিদের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৮৩২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
মাস
ক্রয়
বিক্রয়
Advertisement
বিক্রির থেকে ক্রয় বেশি
সেপ্টেম্বর-২০১৭
৫৬১ কোটি টাকা
৩৮৬ কোটি টাকা
১৭৫ কোটি টাকা
আগস্ট-২০১৭
৪৩২ কোটি টাকা
৪০১ কোটি টাকা
৩১ কোটি টাকা
জুলাই-২০১৭
৬২৫ কোটি টাকা
৪২৪ কোটি টাকা
২০১ কোটি টাকা
জুন-২০১৭
৭৩১ কোটি টাকা
৩৪১ কোটি টাকা
৩৯০ কোটি টাকা
মে-২০১৭
৫২৫ কোটি টাকা
৩৭১ কোটি টাকা
১৫৪ কোটি টাকা
এপ্রিল-২০১৭
৪৬৯ কোটি টাকা
৩৯৯ কোটি টাকা
৭০ কোটি টাকা
মার্চ-২০১৭
৭১১ কোটি টাকা
৩৮১ কোটি টাকা
৩৩০ কোটি টাকা
ফেব্রুয়ারি-২০১৭
৪৩৬ কোটি টাকা
১৯৭ কোটি টাকা
২৩৯ কোটি টাকা
জানুয়ারি-২০১৭
৬১১ কোটি টাকা
৪২৫ কোটি টাকা
১৮৬ কোটি টাকা
ডিসেম্বর-২০১৬
৬৮১ কোটি টাকা
২৯৫ কোটি টাকা
৩৮৬ কোটি টাকা
নভেম্বর-২০১৬
৪০৯ কোটি টাকা
২৫৪ কোটি টাকা
১৫৫ কোটি টাকা
অক্টোবর-২০১৬
৪৭৫ কোটি টাকা
২৬২ কোটি টাকা
২১৩ কোটি টাকা
গত ১২ মাসের মতো সেপ্টেম্বর মাসজুড়েও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ক্রয়ের আগ্রহ ছিল বেশি। মাসটিতে বিদেশিরা ক্রয় করে ৫৬০ কোটি ৫১ লাখ টাকার। এর বিপরীতে বিক্রি করে ৩৮৬ কোটি ৫ লাখ টাকা। অাগের মাস আগস্টে বিদেশিদের ক্রয় ছিল ৪৩২ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর বিপরীতে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪০০ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন, সেই কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালোভাবে পর্যালোচনা করেন। তারা গুজবের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করেন না। দেশের শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরেই মন্দাভাব ছিল। অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে যায়। হয়তো সে কারণেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ক্রয়ে মনোযোগী হয়েছেন। বর্তমানে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ যে হারে রয়েছে তা বাজারের জন্য ভালো।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান বলেন, ২০১০ সালের মহাধসের পর প্রায় ছয় বছর শেয়ারবাজারে মন্দাভাব ছিল। এখন সেই মন্দা অনেকটাই কেটে গেছে। দরপতনের কারণে অনেক কোম্পানির শেয়ার দাম আকর্ষণীয় পর্যায়ে কমে। এতে হয়তো বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বেশি শেয়ার ক্রয় করছেন এবং শেয়ারের দাম আরও বাড়তে পারে এমন ধারণা থেকে শেয়ার বিক্রি কমিয়ে দিয়ে ধরে রাখছেন।
তিনি বলেন, বিদেশিদের শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয়ের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, যখন শেয়ারের দাম কমতে থাকে তখন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ক্রয়ের পরিমাণ বেড়ে যায়। আবার বাজার যখন ঊর্ধ্বমুখী থাকে তখন বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যায়। কিন্তু আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা ঠিক উল্টো আচরণ করেন। দাম কমে গেলে তারা হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দেন, আবার ঊর্ধ্বমুখী বাজারে শেয়ার ক্রয় করেন। বিনিয়োগকারীদের মনে রাখতে হবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবসময় সর্বনিম্ন দামে শেয়ার ক্রয়ের চেষ্টা করতে হবে।
এমএএস/জেডএ/এমএস