আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারের আশ্বাসে ফেরার ভরসা নেই রোহিঙ্গাদের

রাখাইন রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলার পর মঙ্গলবার শরণার্থীরা এ ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করে।

Advertisement

৬০ বছর বয়সী আমিনা খাতুন বলেন, ‘অামরা যদি সেখানে ফিরে যাই, আবার আমাদের এখানে ফিরে আসতে হবে। তারা যদি আমাদের নাগরিক অধিকার দেয়, তাহলে আমরা যাব; এর আগে যারা ফিরে গেছে, তাদের আবার পালিয়ে আসতে হয়েছে।’

গত মাসে আনোয়ারা বেগম নামের একজন রয়টার্সকে বলেছিলেন, তিনি তৃতীয়বারের মতো পালিয়ে এসেছেন। ১৯৭৮ সালে একবার পালিয়ে এসে কয়েক বছর পর ফিরে যান তিনি; এরপর ১৯৯১ সালে আবার পালিয়ে এসে ১৯৯৪ সালে ফিরতে পারেন। তবে ২০১৭ সালে তাকে আবারও পালিয়ে আসতে হয়েছে।

৫৫ বছর বয়সী আনোয়ারা আর ফিরতে চান না। তার ভাষায়, ‘আমি আর ফিরে যেতে চাই না। আমি মিয়ানমার সরকারকে বিশ্বাস করি না। প্রত্যেকবার তারা আমাদের ফিরিয়ে নিতে চায়। তারপর আমরা ফিরে যাই; এরপর তারা প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে।’

Advertisement

২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও পুলিশের বেশ কিছু তল্লাশি চৌকিতে হামলার অজুহাতে তাণ্ডব শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা। জীবন বাঁচাতে এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

রাখাইনের সহিংসতাকে পাঠ্যপুস্তকে উল্লিখিত গণহত্যার উদাহরণের সঙ্গে তুলনা করেছে জাতিসংঘ। রাখাইন ছেড়ে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে বলেও মনে করে জাতিসংঘ।

তবে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছে মিয়ানমার সরকার। দেশটির দাবি, তারা কেবল উগ্রপন্থী রোহিঙ্গাদের টার্গেট করেছে; যারা ২৫ আগস্ট তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়েছিল।

মিয়ানমার সরকার আরও বলছে, যাচাই-বাছাইয়ের পর রাখাইনের নাগরিক প্রমাণিত হলে তাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে বাংলাদেশের সঙ্গে করা ১৯৯৩ সালের চুক্তি মোতাবেক।

Advertisement

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সোমবার একমত পোষণ করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকার। শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র।

বহু শরণার্থী সন্দিহান

‘সবকিছু পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, এমনকি মানুষও পুড়িয়ে মারা হয়েছে’, রাখাইন ছেড়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী আবদুল্লাহ এ ধরনের মন্তব্য করেন। যাচাই-বাছাইয়ের পর মিয়ানমার সরকার যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলছে সেটাও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।

রোহিঙ্গারা জানান, বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার সরকার মুসলমানদের নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য অস্বীকৃতি জানানোই মূল সমস্যা। সেখানকার প্রতিকূল পরিস্থিতি ঠিক করতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ জনগোষ্ঠী হিসেবে ট্রিট করা বন্ধ করতে হবে।

যদিও মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে চায়নি। তারা কেবল ১৯৯৩ সালের চুক্তি মোতাবেক যেসব শরণার্থী নিজেদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে পারবে; তাদেরই ফিরিয়ে নেবে।

মঙ্গলবার দুটি দেশের পক্ষ থেকেই প্রক্রিয়া শুরুর ব্যাপারে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সেই প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল হবে।

২৫ আগস্টের পর থেকেই পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে; তবে মিয়ানমার বলছে ২০১৬ সালের অক্টোবরের সহিংসতায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৮৭ হাজার শরণার্থীকে চিহ্নিত করে ফিরিয়ে নেয়া হবে।

বাংলাদেশি কর্মকর্তা বলছেন, অনেক রোহিঙ্গার কোনো নথিপত্র নেই। সে কারণে তাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া নমনীয় করার ব্যাপারে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে মিয়ানমার জানিয়েছে, তারা ঠিক করবে কারা যাচাই কাজ শুরু করবে। তবে বাংলাদেশ চায়, আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা এর সঙ্গে যুক্ত হোক।

সূত্র : রয়টার্স

কেএ/পিআর