বিনোদন

সম্রাট হবে বিনোদনের পুরো প্যাকেজ : ইন্দ্রনীল

ছিলেন ছা পোষা একজন কর্মজীবী। হঠাৎ মডেলিংয়ের সূত্রে শোবিজের প্রতি নেশা জন্মায় তার। তারপর সেই তাগিদেই ২০০৪ সালে ‘শুকরিয়া: টিল ডেথ ডু আস অ্যাপার্ট’ নামক চলচ্চিত্র দিয়ে অভিনয়ে যাত্রা শুরু করেন আজকের জনপ্রিয় অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। তবে সেটি বাংলা ছিলো না। টালিগঞ্জে ২০০৮ সালে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় বিপরীতে ‘জানালা’ দিয়ে অভিনয় শুরু করেন।  তারপর ‘অটোগ্রাফ’ দিয়ে বাজিমাত করেন। ইন্দ্রনীলের গল্পের পাতায় বাকীটুকু ইতিহাস। একের পর এক চলচ্চিত্রে কাজ করেই চলেছেন তিনি। স্বস্তা জনপ্রিয়তায় নয়, গল্প আর চরিত্রকে পুঁজি করেই তার এগিয়ে চলা। তাইতো, টলি পাড়ায় বলা হয়, এ যুগের সৌমিত্র ইন্দ্রনীল। সম্প্রতি মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত বাংলাদেশের ছবি ‘সম্রাটদ্য কিং ইজ হেয়ার’ ছবির শুটিং করে গেলেন এই অভিনেতা। শুটিং এর ফাঁকে জাগো নিউজকে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন চলচ্চিত্র ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে নানা কথা। সঙ্গে ছিলেন লিমন আহমেদজাগো নিউজ : ঢাকাতে এটি আপনার দ্বিতীয় ছবি হতে যাচ্ছে। তবে কী এখানে নিয়মিত হচ্ছেন?ইন্দ্রনীল : দেখুন ব্যাপারটি এভাবে বলা মুশকিল। গত বছর আমি এখানে রেদওয়ান রনির চোরাবালিতে কাজ করেছি। হয়তো অনেকের ভালো লেগেছে, অনেকের লাগেনি। তবে আমি নিজের মত করেই কাজ করার চেষ্টা করেছি, যেটা আমার কাছে আমার পরিচালক, সহকর্মী ও ভক্তরা আশা করেন। তারই ধারবাহিকতায় এবার রাজের সাথে কাজ করছি। আশা করছি ছবিটি ভালো হবে। তারপর কেউ ডাকলে আবারো আসবো। না ডাকলে আমার কিছু করার থাকবে না। এখানে নিয়মিত-অনিয়মিত হবার কোনো ব্যপার নেই। আমি শিল্পী। যেখানেই ডাক পাবো সেখানেই কাজ করতে যাবো। সে ঢাকাই হোক, কিংবা হলিউড।জাগো নিউজ : চোরাবালি ছিলো অপরাধ জগতের গল্প নিয়ে অ্যাকশান ছবি। সম্রাট ছবিতেও মাফিয়াদের গল্প। দু’টি কাজ প্রায় একই হয়ে গেল না?ইন্দ্রনীল : মোটেও না। দু’টি ছবির গল্প আলাদা, মেজাজ আলাদা, ফ্লেভারটাও আলাদা। আর সবচাইতে বগ কথা হলো ছবি দুটি নির্মাণ করছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন দুজন মানুষ। তাদের কাজের ধরণ, রুচি, পছন্দ-অপছন্দের অনেক পার্থক্য। চোরাবালি আর সম্রাটেও তাই আকাশ পাথাল পার্থক্য।জাগো নিউজ : ‘সম্রাট-দ্য কিং ইজ হেয়ার’ সম্পর্কে কিছু বলুন ?ইন্দ্রনীল : বিনোদনের পূর্ণাঙ্গ একটি প্যাকেজ হচ্ছে সম্রাট ছবিটি। এখানে ভালো লাগার মতো গল্প আছে, ডায়ালগ আছে, থ্রিলার আছে, টুইস্টও থাকবে। আর আমাদের ইন্ড্রাষ্ট্রিগুলোতে একটি ছবির হিট হতে রোমান্স-অ্যাকশান-নাচ-গানসহ যা লাগে তার সবই আছে। দর্শকরা ছবিটি দেখে বিনোদিত হবেন। তাদের ভালো লাগবে বলেই বিশ্বাস আমার। জাগো নিউজ : ছবির গল্প ও আপনার চরিত্রটা কেমন?ইন্দ্রনীল : দু:খিত, এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে মানা। থাকুক না একটু টুইস্ট। দর্শক হলে গিয়েই জেনে যাবেন না হয়। তবে এটুকু বলছি যে এটি আন্ডারগ্রাউন্ড’র গল্প নিয়ে নির্মিত হচ্ছে। সিনেমাতে আমি রাজা চরিত্রে অভিনয় করছি। জাগো নিউজ : বাংলাদেশের দুই সুপারস্টার আপনার সাথে ছবিতে অভিনয় করছে। তাদের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন? ইন্দ্রনীল : কাজের জায়গায় অপু ও শাকিব দুজনেই বেশ মনযোগী এবং সহযোগীও। শাকিব বেশ মিশুক ও হাসি খুশি স্বভাবের। অপুও বেশ মিষ্টি একটা মেয়ে। তাদের সাথে তেমন করে মিশবার সুযোগ আমার হয়নি। যতটুকু দেখেছি তাতে আমি মুগ্ধ। জাগো নিউজ : বাংলাদেশের দুই তরুণ নির্মাতার সাথে কাজ করেছেন। দুজনের সাথে কাজের তুলনাটা কেমন?ইন্দ্রনীল : আমি আগেই বলেছি রনি ও রাজ দুজন দু’টি মানুষ। তাদের আলাদা দু’টি সত্ত্বা। স্বভাব, রুচি, কাজের ধরণ -সবকিছুই আলাদা। কেউ কারো মতো হয় না। তুলনা না করে বরং এই দুজনের মধ্যে একটি মিলের কথা আমি বলতে পারি। সেটি হলো দুজনেই দারুণ মেধাবী ও পরিশ্রমী। তারও বড় ব্যপার ওরা এদেশের চলচ্চিত্র শিল্পটাকে নিয়ে ভাবে। কীভাবে এটিকে বিশ্বমানের করা যায় তার সন্ধাণ করে। মোট কথা হলো এদের ভালো কাজের পিপাসা আছে। একজন মানুষকে সফল হতে গেলে যে জিনিসটি থাকা খুব বেশি প্রয়োজন। জাগো নিউজ : আপনি তো বেশ কিছু ইন্ড্রাষ্ট্রিতে ঘুরেফিরে অনেক গুণী নির্মাতার সাথে কাজ করেছেন। নতুনদের সাথে কাজ করতে কেমন লাগছে? ইন্দ্রনীল : দেখুন আমি অনেক গুণী নির্মাতার ফিল্ম এ কাজ করেছি ঠিক। কিন্তু নতুনদের সাথে আমার কাজের সংখ্যা অনেক বেশি। ক্যারিয়ারের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ আমি নতুন পরিচালকদের সাথে করেছি। কারণ তাদের আইডিয়া ভালো লাগে, অনেক ট্যালেন্ট আছে, পরিশ্রমের ক্ষমতা আছে। সবমিলে নতুনদের কাজ করতেই ভালো লাগে। জাগো নিউজ : আপনাকে সচরাচর গতানুগতিক ধারার নায়ক চরিত্রে দেখা যায় না। সব গল্প প্রধান ছবিতেই আপনি কাজ করেন। কেন?ইন্দ্রনীল : আসলে যেটি আপনার ভালো লাগে না সেটি কী আপনি কখনো করবেন? করবেন না। আমারও ঠিক তাই। ওসব ফেক-ভিত্তিহীন ছবিতে লাল প্যান্টু, হলুদিয়া গেঞ্জি-শার্ট পড়ে গদগদ নায়িকা কোলে তুলে নাচানাচি করা নায়ক হতে চাই না আমি। জানি এতে তারকাখ্যাতি কম। কোনো সমস্যা নেই। আমার অভিনয়ের তৃপ্তি প্রয়োজন, স্টারডম লাইফ নয়। আমি কাজ করার ক্ষেত্রে প্রথমেই দেখি আমার চরিত্রটি। তারপর গল্প-বাজেট-পরিচালক বিবেচনা করি। এসব কিছু ইতিবাচক ছিলো বলেই আপনাদের এখানে কাজ করতে এলাম।

Advertisement

জাগো নিউজ : ‘অরুন্ধতী’ ছবিতে একজন ভয়ংকর কালা যাদুকরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এটি আপনার ক্যারিয়ারে কোন নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট ফেলছে কি? ইন্দ্রনীল : না, আমার তা কখনোই মনে হয়নি। আমার ফিল্ম’র দর্শক আলাদা। তারা অভিনয় দেখতে থিয়েটারে যায়। আমার ফিল্ম দেখে কোন দর্শক বলবেন না যে, দাদা কি একটা লাল প্যান্ট পড়েছেন ফাটিয়ে দিয়েছেন দাদা। দেব কিংবা জিত যে টাইপের ফিল্ম করে ঐ টাইপের ফিল্ম আমি করিনা। ওইসব ছবিকে বাণিজ্যিক বলে আমাদের অফট্র্যাক বলা হয়। বলি, সব ছবিই বাণিজ্যিক। কেউ কেউ মাগনা দেখাবে বলে ছবি বানায় না। তবে যেটা কোট করার বিষয় সেটি হলো, ফেক গল্পের ছবি আর বেশিদিন এই উপমহাদেশে চলবে না। এখনই দেখুন প্রসেনজিত দাদাও দারুণ সব চরিত্রনির্ভর ছবিতে কাজ করছেন। কলকাতায় কমার্শিয়াল ফিল্ম এখন আর সেরকম করে চলছে না। ফেইক সিনেমার দর্শক কমছে। এখন ভিন্নধারার সিনেমাই ভালো ব্যবসা করছে। জাগো নিউজ : অটোগ্রাফ ছবিতে আপনাকে একজন স্বপ্নবাজ তরুণ পরিচালকের চরিত্রে দেখা গিয়েছিলো। বাস্তবে ছবি নির্মাণের ইচ্ছা আছে?ইন্দ্রনীল : এখন অবধি এ বিষয় নিয়ে ভাবিনি। দেখা যাক, সামনে কী হয়।জাগো নিউজ : বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে কিছু বলুন ? ইন্দ্রনীল : এদেশের ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে আমার কোন আইডিয়া নেই। রনি ও রাজের ছবিতে কাজ করার সময় টিমের কয়েকজনের সাথেই পরিচয় হয়েছে। অল্প কিছু মানুষ দিয়ে তো আর পুরো একটা ইন্ড্রাষ্ট্রিকে মাপা যায় না। তবে যাদের সাথে এখণ পর্যন্ত মিশেছি তারা মুগ্ধ করেছেন। এই মুগ্ধতার জোরেই বারবার এখানে এসে কাজের স্বপ্ন দেখি। জাগো নিউজ : আপনার স্বপ্নের কোন চরিত্র। সুযোগ পেলে যেখানে কাজ করতে চান? ইন্দ্রনীল : ফেলুদা আমার খুব প্রিয় একটি চরিত্র। এই চরিত্রে কাজ করার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু হলোনা। ওটা এখন আবীর (টালিউডের নায়ক) করছে। জাগো নিউজ : অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছেটা কী ছোটবেলা থেকেই ছিলো?ইন্দ্রনীল : একদমই না! আমার ইচ্ছে ছিল ক্রিকেটার হওয়ার। কলেজ লাইফ পর্যন্ত ওটাই চেষ্টা করেছি। এরপর চাকরীও করা হয়েছে। অভিনেতা হবার ইচ্ছেটা আসলে মডেলিং শুরু করার পর থেকে আসে। ওই সময়টায় অভিনয়ের মধ্যে ঝুঁকে পড়ি। জাগো নিউজ : অবসর কাটে কিভাবে? ইন্দ্রনীল : শুটিং না থাকলে পরিবার ও মুভি দেখেই সময় কাটে। আমি খুব পরিবারকেন্দ্রীক মানুষ। সুযোগ হলেই স্ত্রী আর মেয়েকে সময় দেবার চেষ্টা করি। জাগো নিউজ : বাংলাদেশের আপনার কোন জিনিসটা ভালো লেগেছে? ইন্দ্রনীল : আসলে যতোবার এখানে এসেছি ততোবারই খুব কম সময় কাটিয়েছি। শুটিংয়ের বাইরে গিয়ে ঘুরাঘুরি করার মতো সময় হয়নি। তবে একটা বিষয় টের পেয়েছি সেটি হলো এদেশের মানুষ অনেক অতিথিপরায়ণ। আর কলকাতার চাইতে এখানকার মানুষেরা অনেক প্রাণবন্ত, মিশুক।জাগো নিউজ : শুটিং বন্ধ করিয়ে আপনার সময় নষ্ট করলাম হয়তো। ইন্দ্রনীল : তেমন কিছু নয়। এটাই জীবন। একটু আধটু অনিয়ম হলে মন্দ হয় না। তাছাড়া আপনার উছিলায় আমিও একটু জিরিয়ে নিলাম। হা হা হা.....জাগো নিউজ : অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আবার দেখা হবে নিশ্চয়ই?ইন্দ্রনীল : আপনাকেও ধন্যবাদ। আর দেখার কথা বললেন তো, ব্যাটে বলে মিলে গেলে প্রতি মাসেই দেখা হতে পারে।ছবি সৌজন্যে : এ এইচ মুরাদএলএ/আরআইপি