আর্জেন্টিনার কথা বললেই যে কারোরই চোখের সামনে ভেসে উঠবে বলি নিয়ে লিওনেল মেসির দুরন্ত ছুটে চলা কিংবা দিয়েগো ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে উল্লাস। ফুটবলের দেশ হিসেবেই আমাদের কাছে আর্জেন্টিনা সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তবে আমাদের দেশে এখন আর ফুটবলের সেই সোনালি সুদিন নেই। দেশে চলছে এখন ক্রিকেটের জয়জয়কার। তবু বিশ্বকাপ ফুটবল এলেই দেশের আকাশে ওড়ে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকা।
Advertisement
তবে দেশের ক্রিকেটপ্রেমী আর্জেন্টিনা ভক্তদের জন্য রয়েছে বেশ খুশির খবর, কারণ আর্জেন্টিনারও রয়েছে একটি জাতীয় ক্রিকেট দল। যারা একসময় বাংলাদেশের বিপক্ষেও খেলেছিল। ১৯৯৪ এবং ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফিতে। খেলেছিল আকরাম খান বাহিনির বিপক্ষেও। যদিও তারা বাংলাদেশকে হারাতে পারেনি।
আর্জেন্টিনায় ক্রিকেটের ইতিহাস কিন্তু অনেক পুরনো। আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট ক্রিকেট শুরুরও অনেক আগে থেকেই আর্জেন্টিনা পরিচিত ক্রিকেটের সাথে। ১৮০৬ সালেই আর্জেন্টিনায় ক্রিকেটের সূচনা। তবে ১৮৬৮ সালে উরুগুয়ের সাথে প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ খেলে তারা। এরপর থেকে উরুগুয়ের বিপক্ষে ২৯টি ম্যাচ খেলে আর্জেন্টিনা ২১টিতে জয়লাভ করে। ফুটবলের মতো ক্রিকেটেও ১৮৮৮ সালে ব্রাজিল ও চিলির বিপক্ষেও ম্যাচ খেলে আর্জেন্টিনা।
১৯১২ সালটা আর্জেন্টিনার ক্রিকেটের জন্য স্মরণীয় একটা বছর। সে বছর বিখ্যাত মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) একটা দল এসেছিল আর্জেন্টিনা সফরে। সেই দলের সঙ্গে তিন ম্যাচের একটা সিরিজও খেলেছিল আর্জেন্টিনা। প্রথম ম্যাচে তারা হারিয়েও দিয়েছিল এমসিসি একাদশকে! সেটাই ছিল আর্জেন্টিনার প্রথম প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। ১৯৭৯ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনার গ্রুপসঙ্গী ছিল বারমুডা, পূর্ব আফ্রিকা, পাপুয়া নিউগিনি এবং সিঙ্গাপুর। যদিও কোন ম্যাচ জিততে পারেনি আকাশী-সাদা জার্সিধারীরা।
Advertisement
১৯৭৪ সালে আইসিসির সদস্যপদ লাভ করে মেসির দেশ; কিন্তু সংস্থাটির স্বদিচ্ছার অভাবে সেভাবে খেলাটি আর্জেন্টিনায় জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। হয়তো একটু যত্ন এবং পরিচর্যা পেলে আর্জেন্টিনা হতে পারতো ফুটবলের মত, ক্রিকেটেরও পারশক্তি!
১৯৮৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আইসিসি ট্রফিতে উপস্থিতি ছিল আর্জেন্টিনার, ১৯৯৪ আর ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফিতে ওরা খেলেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষেও, যদিও দুটি ম্যাচেই জিতেছিল টাইগারেরা। সেই স্মৃতি মনে করে পরে সেই দলের একজন খেলোয়াড় বার্নান্দো ইরিগোয়েন বাংলাদেশের এক সাংবাদিককে বলছিলেন, ‘কেনিয়া আর কুয়ালালামপুরে ওই প্রথম যাওয়া আমাদের। আমরা ক্রিকেটের ছোট্ট দেশ, তাই সব কিছুই নতুন মনে হয়েছে। বিশেষ কোনো খেলোয়াড়ের কথা মনে নেই। তোমাদের একজন খেলোয়াড়ের জার্সি চেয়ে নিয়েছিলাম। গোঁফ আছে আর মোটাসোটা ছিল।’
বাংলাদেশি ওই সাংবাদিকের মোবাইলে ছবি দেখে বেশ উচ্ছাস্বিতভাবে বলেন, ‘হ্যাঁ, ওর জার্সিই নিয়েছিলাম। ওটা পরেই এখানে (আর্জেন্টিনাতে) অনেক ম্যাচ খেলেছি। পরে সেটা নষ্ট হয়ে যাবে, এই ভয়ে তুলে রেখেছি। এখনো আছে।’ বাংলাদেশি সেই ক্রিকেটারের নাম আকরাম খান, যার হাত ধরেই বাংলাদেশ ১৯৯৭ সালে জিতেছিল আইসিসি ট্রফি।
২০০৭ সালে আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগে সবশেষ ‘লিস্ট-এ’ পর্যায়ের ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল আর্জেন্টিনার। সেবার গ্রুপ পর্বে ওদের প্রতিপক্ষ ছিল ওমান, আরব আমিরাত এবং ডেনমার্ক। সে বছর ওয়ার্ল্ড লিগের ডিভিশন থ্রি তে রানারআপ হয়েছিল মেসি-ম্যারাডোনার দেশ। এরপরে শুধু পিছিয়েই গিয়েছে আর্জেন্টিনার ক্রিকেট, ২০১৩ সালে নেমে গিয়েছে ডিভিশন সিক্সে, সেখানে চতুর্থ স্থানে ছিল তারা।
Advertisement
ক্রিকেটের জন্য নেই তাদের পর্যাপ্ত অবকাঠামো। তবে রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে এখন প্রায় ২০টির মত ক্রিকেট মাঠ রয়েছে। রয়েছে বেশ কিছু স্কুল ক্রিকেট দল। তাদের একটি নারী ক্রিকেট দলও এখন গড়ে উঠেছে।
ফুটবলের মতই ক্রিকেট জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারতো আর্জেন্টিনা। হয়তো সে দেশে ফুটবল জোয়ার আর আইসিসির সে ভাবে উদ্যোগ না থাকায় সম্ভবনাময় একটা ক্রিকেট দল প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছে।
এমএএন/আইএইচএস/পিআর