জাতীয়

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ১৩৭ কোটি টাকার সহায়তা

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৪ জেলার ৭ লাখ ৭৬ হাজার ২০২ কৃষককে ১৩৬ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫১ টাকার পুনর্বাসন সহায়তা দেবে সরকার।

Advertisement

এর মধ্যে হাওরের ৬ জেলায় বোরো আবাদে এবং উত্তর-মধ্যাঞ্চলের ১৮ জেলায় গম, ভুট্টা, সরিষা, চীনাবাদাম, খেসারি ও বোরো ধান আবাদে কৃষকরা সহায়তা হিসেবে বীজ, রাসায়নিক সার (ডিএপি ও এমওপি) ও নগদ সহায়তা পাবেন।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরের ছয় জেলা এবং দেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলের ১৮ জেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা নিয়ে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এ তথ্য জানান।

পুনর্বাসন সহায়তার জন্য ইতোমধ্যে অর্থ ছাড় করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, উপকরণও জেলায় জেলায় পৌঁছে গেছে। মাঠ পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে যে কমিটি রয়েছে তারা তালিকা চূড়ান্ত করে কৃষকদের হাতে সহায়তা পৌঁছে দেবে।

Advertisement

এক প্রশ্নের জবাবে মতিয়া চৌধুরী বলেন, পুনর্বাসন কার্যক্রমে কোনো অনিয়ম হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, পাহাড়ী ঢল ও আকষ্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জে কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় আগামী বোরো মৌসুমে ৬ লাখ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে ১১৭ কোটি টাকার বীজ, ডিএপি ও এমওপি সার এবং নগদ এক হাজার টাকা করে দেয়া হবে।

এছাড়া দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, নাটোর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক লাখ ৭৬ হাজার ২০২ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে রবি মৌসুমে ১৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫১ টাকার বীজ, ডিএপি ও এমওপি সার এবং শাকসবজির বীজ দেয়া হবে। গম, ভুট্টা, সরিষা, চিনাবাদাম, খেসারি, বোরো ধান চাষে তারা এই সহযোগিতা পাবেন।

গমের ক্ষেত্রে উপকারভোগী কৃষকের সংখ্যা ১৯ হাজার, ভুট্টায় ১৮ হাজার, সরিষায় ৫০ হাজার ৮০২, চিনাবাদামে ২ হাজার, খেসারিতে ৪ হাজার ৪০০ এবং বোরো ধানে ৮২ হাজার জন এ সহযোগিতা পাবেন।

Advertisement

কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রমে প্রত্যেক কৃষক প্রতি এক বিঘা জমি চাষাবাদের জন্য এসব কৃষি উপকরণ ও নগদ টাকা পাবেন বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।

৬ জেলায় প্রত্যেক কৃষক নগদ এক হাজার টাকা ছাড়াও ৫ কেজি বোরো ধানের বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার পাবেন।

১৮ জেলায় গমের ক্ষেত্রে প্রত্যেক কৃষক ২০ কেজি বীজ, ভুট্টায় ২ কেজি বীজ, সরিষায় এক কেজি বীজ, চিনাবাদামে ১৫ কেজি বীজ, খেসারিতে ৮ কেজি বীজ ও বোরো ধানের ক্ষেত্রে ৫ কেজি বীজ পাবেন।

গম, ভুট্টা, সরিষা ও রোরো ধানের ক্ষেত্রে প্রত্যেক কৃষক ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার পাবেন। চীনাবাদামের ক্ষেত্রে ৫ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি ও খেসারির ক্ষেত্রে ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার পাবেন বলেও জানান মতিয়া চৌধুরী।

হাওরাঞ্চলে কৃষি পুনর্বাসনের প্রত্যাশিত সুফল তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এ পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে ৬ জেলায় ৬ লাখ বিঘা (৮০ হাজার ১৬২ হেক্টর) জমিতে বোরো ধান চাষ সম্ভব হবে। এতে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৪ দশমিক ০৪৮ মেট্রিক টন হিসেবে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৫ টন চাল উৎপাদিত হবে। প্রতি টন চালের বিক্রয় মূল্য ৪০ হাজার টাকা ধরে এক হাজার ২৯৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকার চাল উৎপাদিত হবে। প্রতি ১ টাকা ব্যয় করে ১১ টাকা ৯ পয়সা আয় করা সম্ভব হবে। এতে ব্যয়ের অনুপাতে আয় হবে ১১ গুণ।

দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ১৮ জেলার কৃষি পুনর্বাসনের প্রত্যাশিত সুফলের বিষয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, গমে প্রতি এক টাকা ব্যয়ে ৮ টাকা আয় হবে। এছাড়া ভুট্টায় প্রতি এক টাকা ব্যয়ে ১৮ টাকা, সরিষায় প্রতি এক টাকা ব্যয়ে ১৩ টাকা, চিনাবাদামে প্রতি এক টাকা ব্যয়ে ১০ টাকা, খেসারিতে প্রতি এক টাকা ব্যয়ে ১০ টাকা, বোরো ধানে প্রতি এক টাকা ব্যয় করে ২২ টাকা আয় হবে।

এবার বন্যার পর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রথমে ৭ হাজার ৭৮০ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের পুনর্বাসনে ৯০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বিতরণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়। এরপর বন্যায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দশটি ফসলে ৫ লাখ ৪১ হাজার ২০১ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে ৫৮ কোটি ৭৭ লাখ ১৯ হাজার ৩১৫ টাকার প্রণোদনা দেয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কৃষি সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্সহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরএমএম/এআরএস/এএইচ/আরআইপি/আইআই