আইন-আদালত

প্রধান বিচারপতির ছুটিতে শূন্যতা সৃষ্টির প্রশ্নই আসে না

প্রধান বিচারপতি হঠাৎ করে ছুটিতে যাওয়ায় বিচার বিভাগে কোনো ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হবে না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ বিষয়ে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আজকে এক মাসের জন্য ছুটির কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতিকে জ্ঞাত করেছেন। ফলে আগামীকাল উনি আপিল বিভাগের বেঞ্চে বসবেন না। অন্য বিচারপতি যারা আছেন তারা বিচারকার্য পরিচালনা করবেন।

Advertisement

দীর্ঘ অবকাশের পর আবার কেন এক মাসের ছুটির আবেদন করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনি রাষ্ট্রপতির কাছে কী লিখেছেন সেটা তো আমি দেখিনি। তবে সাংবিধানিক পদে যারা থাকেন তাদের বলার প্রয়োজন পড়ে না। তিনি ছুটিতে যাবেন এটাই জ্ঞাত করানো, যাতে সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারে। পরবর্তী পদক্ষেপ কী জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখন কে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি পদক্ষেপ নেবেন এবং ওনার (প্রধান বিচারপতি) এই ছুটিকালীন অবস্থায় প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব কে পালন করবেন সে সম্পর্কে একটি গেজেট নোটিফিকেশন করা হবে। তিনি বলেন, এটা সচরাচর দেখা যায় প্রধান বিচারপতির অবর্তমানে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি যিনি থাকেন তিনিই এই দায়িত্ব পালন করেন।

প্রধান বিচারপতি চাপে পড়ে ছুটির আবেদন করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সঠিক কথা নয়। যিনি সাংবিধানিক পদে থাকেন সব সময় তিনি নিজেই সরকারকে জ্ঞাত করেন। ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের কারণে বা তার কোনো প্রভাব আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় তো তিনি একা দেননি। অন্যান্য বিচারপতিও ছিলেন এমনকি এটা সর্বসম্মতভাবে রায় দিয়েছেন। সুতরাং এখানে রায়ের জন্য প্রধান বিচারপতিকে একা দায়ী করা হবে কেন? এটা ঠিক কথা নয়।

প্রধান বিচারপতির হঠাৎ ছুটিতে যাওয়ায় বিচার বিভাগে কোনো শূন্যতা সৃষ্টি হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একদমই না। শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তার কারণ অন্য বিচারপতিরা আছেন তারাই বিচারকার্য চালাবেন। প্রধান বিচারপতির এই ছুটির ঘটনাটি নজিরবিহীন নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

Advertisement

এদিকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার হঠাৎ এই ছুটি সংক্রান্ত খবরে বিহ্বল হয়ে পড়েন আইনজীবী সমিতির নেতারা। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে তার বাসভবনে গিয়ে প্রবেশের অনুমতি না পেয়ে ফিরেন আসেন। সংবাদ মাধ্যমের খবর শুনে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে তার বাসভবনে যান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারা। আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীনের নেতৃত্বে বারের সদস্যরা তার বাসভবনে যান। কিন্তু সেখানে প্রবেশের অনুমতি না মেলায় ফিরে আসতে হয়েছে তাদের।

পরে সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, তারা শুনেছেন তিনি (প্রধান বিচারপতি) হঠাৎ ছুটির কথা জানিয়েছেন। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ কোনো আমলেই আদালত খোলার প্রাক্কালে প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির এমন ছুটিতে জাতি উদ্বিগ্ন এবং তারাও উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে বারের পরবর্তী কার্যক্রম কী হবে তা ঠিক করতে আগামীকাল সকাল সাড়ে ৯টায় জরুরি বৈঠক ডেকেছেন বলেও জানান আইনজীবী সমিতির সভাপতি।

এদিকে প্রধান বিচারপতির ছুটিকালীন কে হচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সেটিও এখন দেখার অপেক্ষায়। তবে আইন অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হলে আপিল বিভাগের বর্তমান জ্যেষ্ঠ সদস্য বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞাই নিয়োগ পাবেন বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, এটা সচরাচর দেখা যায় প্রধান বিচারপতির অবর্তমানে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি যিনি থাকেন তিনিই এই দায়িত্ব পালন করেন।

এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে হবেন সেটি গেজেট প্রকাশ হলেই দেখতে পাবেন। গেজেট প্রকাশের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও তিনি জানান।

Advertisement

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ছুটি নেয়ায় আপিলে এখন পাঁচজন বিচারপতি রয়েছেন। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠতাক্রমে আছেন বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিয়া, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায় ১ আগস্ট প্রকাশিত হয়। ওইদিনই পূর্ণাঙ্গ রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়। রায় প্রকাশের পর এ নিয়ে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সংক্ষুব্ধ হয়। বিশেষ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপন্থী আইনজীবীরা। তারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও তোলেন।

এফএইচ/ওঅার/বিএ