বিগত দু’দশকে শিশু সুরক্ষায় বাংলাদেশে আইনী কাঠামো শক্তিশালী হয়েছে; নেওয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ। কিন্তু সামগ্রিক বিবেচনায় ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণে স্পষ্টত শিশুর প্রতি সহিংসতার দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বরং ভয়াবহতা ও নৃশংসতা বেড়েছে। শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রে দ্রুত বিচারের সাম্প্রতিক দৃষ্টান্তের পরও দেখা যাচ্ছে নির্যাতন চলছেই। বিশেষ করে পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন করে হত্যার ঘটনা সমাজকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের পাশবিকতার অবসান হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য নতুন করে ভাবতে হবে কেন এক শ্রেণির মানুষ এতোটা বিকারগ্রস্ত হয়ে নারকীয় তাণ্ডব শুরু করলো।
Advertisement
২০১৫ সালের ৩ আগস্ট খুলনার এক মোটর গ্যারেজের কর্মী রাকিবের পেটে বায়ু ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। তখন এ নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। একই কায়দায় হত্যা করা হয়েছে বগুড়ার কাহালুর এক সিরামিক কারখানার শ্রমিক রাসেলকে। একে অন্যের সঙ্গে তামাশার একপর্যায়ে রুবেল নামের আরেক শ্রমিক রাসেলের পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে দেয়। অসুস্থ রাসেলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি। দেখা যাচ্ছে শিশু নির্যাতনের অমানবিকতার খবর যত বেশি প্রচার হচ্ছে বিকারগ্রস্ত মানুষজন তাতে যেন আরও উৎসাহ পাচ্ছে। নইলে একই কায়দায় বার বার শিশুদের ওপর নির্যাতন নেমে আসছে কেন? প্রশ্ন হচ্ছে এ ধরনের পৈশাচিক ঘটনার শেষ কোথায়?
শিশুরা নির্যাতনের শিকার হলেও নানা পারিপার্শ্বিক কারণে তারা বিচার চাইতে পারে না।শিশু নির্যাতন বন্ধ না হওয়ার এটিও বড় কারণ। পরিসংখ্যান বলছে ২০১৫ সালে ১৯৩ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এটা যে কোনো সুস্থ সমাজের জন্য অশনি সংকেত। একটি সভ্য সমাজ এভাবে চলতে পারে না। শিশুরাই আগামী। তাদের পরিচর্যা করে সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির উন্মেষ ঘটাতে হবে। পাশাপাশি অপরাধের শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। রাসেল হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যাবে না। মনে রাখতে হবে, যে সমাজে শিশুরা নিরাপদ নয় সে সমাজ কখনো সভ্য সমাজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।
এইচআর/জেআইএম
Advertisement