বেনাপোল চেকপোস্টের ইমিগ্রেশন পুলিশ পাসপোর্টধারী যাত্রীদের কাছ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা ঘুষ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। বৈধপথে ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াতের সময় পাসপোর্টধারীদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে এ ঘুষ আদায় করা হয়। বেনাপোল চেকপোস্টের ঘুষ আদায় ওপেন সিক্রেট হলেও তা বন্ধ করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। এখান থেকে আদায়কৃত টাকা বিভিন্ন মহলে যাওয়ায় উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ এটেছেন।ঘুষের টাকা না দেওয়ায় যাত্রীকে মারপিট করা, ভ্রমণকর না নিয়ে পাসপোর্টে সিল মারারও অভিযোগ রয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশের বিরুদ্ধে। এর ফলে সরকার ভ্রমণকরের লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার যাত্রী চলাচল করে থাকে।ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার আত্মীয় পরিচয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম খান বেপোরোয়া হয়ে উঠেছেন। নিম্নপদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রায়ই দুর্ব্যবহার করে থাকেন। তার চাকরির মেয়াদ রয়েছে কয়েক মাস। এ কারণে কেউ কিছু বলেন না তাকে। এর আগে তিনি ২০১০ সালের ২২ মার্চ বেনাপোল পোর্ট থানায় ছিলেন। মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে ৬ মে বেনাপোল বল্ডফিল্ড মাসে বৈশাখী মেলায় বোমা হামলার ঘটনায় তাকে ক্লোজড করে যশোর পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়। থানা পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে মেলায় জুয়ার আসর বসানো হয়। এ নিয়ে দু`পক্ষের বোমা হামলায় একজন নিহত ও ১০ জন সাধারণ মানুষ আহত হয়।চেকপোস্ট সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম খানের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ঘুষ বাণিজ্য ও পাসপোর্ট যাত্রী হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। কয়েকদিন আগে ঢাকা-কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী পরিবহন কর্তৃপক্ষ ওসির ঘুষের প্রতিবাদে পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি দেয়। এরপর তিনি পরিবহন ম্যানেজারদের ডেকে ক্ষমা চেয়ে সে যাত্রা রক্ষা পান।ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পরিবহনে চলাচলকারী পাসপোর্টযাত্রীদের নানাভাবে হয়রানির হাত থেকে বাচতে ওসি আসলাম খানকে পরিবহন খাত থেকে প্রতি মাসে ৩ লাখ টাকার উপরে ঘুষ দিতে হয়। এছাড়াও অন্যান্য খাত থেকে ওসির আরো আয় মাসে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার উপরে।ভারতগামী পাসপোর্টযাত্রীদের বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পাসপোর্টে প্রাইভেট সার্ভিস লেখা থাকলে নেওয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা, নবায়ন জাল বলে দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা, নামের বানানের অক্ষর ভুল হলে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা, কোনো মহিলা পাসপোর্টযাত্রী একা ভারতে গেলে তার কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে তিন হাজার থেকে দশ হাজার টাকা, পাসপোর্টে ভারতসহ অন্য দেশের ভিসা থাকলে নেওয়া হচ্ছে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা, জন্ম তারিখের সঙ্গে আইডি কার্ডের মিল না পেলে নেওয়া হচ্ছে দুই হাজার টাকা।এসব টাকা নেওয়ার জন্য ইমিগ্রেশনে ওসির রয়েছে কয়েকজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিগত কর্মচারী। তারা হলেন, শরিফুল, রুস্তম, ঝন্টু, শাহীন, রতন ও বাবুল। ওসির ছত্র ছায়ায় লালিত এসব কর্মচারী ইমিগ্রেশনে এমন কোনো অনিয়ম নেই যে তারা করে না। ভ্রমণকর ফাঁকি থেকে শুরু করে যাত্রীছাড়া পাসপোর্টে সিল মারা সকল কাজ কর্তার নির্দেশে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে করে থাকে তারা। আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে বাধ্যতামূলকভাবে ঘুষ আদায় ও হয়রানির কারণে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বিভিন্ন দেশে।সম্প্রতি ঢাকার এক সাংবাদিকের ভাই শাহাজাদা চিকিৎসার জন্য ভারত যাওয়ার সময় তার কাছে লাগেজ ব্যবসায়ী বলে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন ওসি আসলাম খান। তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে ভুয়া এএসপি বানিয়ে ও পকেটে একটি পুলিশের নায়েকের পরিচয়পত্র ঢুকিয়ে দিয়ে বেনাপোল পোর্ট থানায় সোপর্দ করেন। পরে আদালত থেকে সে জামিন পেয়ে ওই পথেই ভারতে যায়। এভাবে প্রতিনিয়ত নানাভাবে পাসপোর্ট যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে।এ বিষয়ে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম খান বলেন, সব অভিযোগ সত্য না। সাধারণ যাত্রীদের হয়রানি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় কিছু অসাধু পাসপোর্ট দালাল ইমিগ্রেশনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বেনাপোল ইমিগ্রেশনকে দালালমুক্ত করতে সব রকম আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। এখানে আমি বা আমার কোনো লোক দ্বারা যাত্রীদের হয়রানি এবং যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো টাকা আদায় করা হয় না।জামাল হোসেন/এআরএ/আরআই
Advertisement