সকাল ৭টা। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে (০১ অক্টোবর, রোববার) সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তাঘাট তুলনামূলকভাবে অনেকটাই ফাঁকা। নিউমার্কেট থেকে সোজা পূর্বদিকের রাস্তা ধরে পুরোনো একটি সাইকেলের প্যাডেলে দ্রুত পা চালিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখী যাচ্ছিলেন হালকাপাতলা গড়নের এক বৃদ্ধ। বয়স আনুমানিক প্রায় ৭০ বছর।
Advertisement
মাথায় সাদা টুপি, গায়ে সাদা পাঞ্জাবি, আকাশী সাদা চেক লুঙ্গি ও চোখে কালো চশমা। সাইকেলের সামনে ও পেছনে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্যাকেট। বিশ্ব প্রবীণ দিবসে সাত সকালেই তিনি ছুটে চলছেন। জানতে চাইলে জানান, নাম এম এ খালেক। পেশায় পত্রিকার হকার।
গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ হলেও বর্তমানে হাজারিবাগ এলাকায় তিন ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীসহ বসবাস করছেন। জীবিকার তাগিদে সাইকেলে চেপে ভোর থেকে দিনভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিভিন্ন কার্যালয় ও আবাসিক হলে ছুটে বেড়ান। দিনভর ছুটে চলা পত্রিকা বিক্রির আয় দিয়েই তার সংসারের চাকা ঘুরে।
আলাপকালে এম এ খালেক জানান, প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাড়ে ৬শ’ কপি পত্রিকা বিলি করেন তিনি। ফজরের নামাজের পর পরই কাকডাকা ভোরে হাজারিবাগের বাসা থেকে বেরিয়ে এলিফ্যান্ট রোডে বিভিন্ন পত্রিকার কপি সরবরাহ করে সাইকেলে চেপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছুটে আসেন। সকাল ১০টার আগেই পত্রিকা বিতরণের কাজ শেষ করেন। এরপর বিভিন্ন অফিসে পাওনা টাকা পেতে তাগাদা প্রদান শুরু করেন তিনি।
Advertisement
তিনি বলেন, সরকারি টাকার বিল পেতে গলদঘর্ম পোহাতে হয়। বহু বছর যাবত পত্রিকা বিলির কাজ করায় সবাই চেনেন। বিল পেতে ঘুষ দিতে না হলেও কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিলের কাগজে সই নেয়ার জন্য দিনভর ব্যস্ত থাকতে হয়। আজ বিশ্ব প্রবীণ দিবস, তা জানেন কি না কিংবা ছেলে মেয়ে থাকতে কেন এ বয়সে দিনভর ছুটোছুটি করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মরণের আগে আর জিরানের (বিশ্রাম) জো (সুযোগ) নেই। সবগুলো ছেলেমেয়ে পড়াশুনা করছে। সাইকেলে দিনভর ছুটে না বেড়ালে তাদের থাকা খাওয়া ও পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে বয়স বাড়লেও দিনভর ছুটোছুটি করতে হয়।
আগের চেয়ে পত্রিকার চাহিদা কমছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘এখনও পত্রিকার বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে।’ যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে কি না -প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘খুব বেশি চাওয়া পাওয়া নেই। তাই কম আয়েই ছেলে-মেয়েদের মধ্যে হতাশা নেই।’
এমইউ/আরএস/আরআইপি
Advertisement