জাতীয়

হোল্ডিং ট্যাক্সে সমন্বয় : ব্যয়ের বোঝা বাড়বে ভাড়াটিয়াদের

রাজধানীর বাসিন্দাদের বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্সে সমন্বয় ও সমতা এনেছে দুই সিটি করপোরেশন। বাড়িওয়ালাদের অভিযোগ হোল্ডিং ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে তবে সিটি করপোরেশন বলছে, হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়নি। আগের মতো বছরে ১২ শতাংশ হারে ট্যাক্স নেয়া হচ্ছে। তবে বর্তমান ভাড়ার সঙ্গে হোল্ডিং ট্যাক্স সমন্বয় করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্সের মধ্যে আনা হচ্ছে সমতা।

Advertisement

ঢাকা সিটি করপোরেশনের সেবার পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় হোল্ডিং ট্যাক্স সমন্বয় করা সময়ের দাবি বলে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৫০০ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪৮০ কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। বর্তমান বাসাভাড়া বিবেচনায় নিয়ে এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আদালতে রিটের কারণে ট্যাক্স আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন। ওই বছর দক্ষিণে ১৯৫ ও উত্তরে এই খাত থেকে ২৯০ কোটি টাকা আদায় করা হয়।

তবে গত মাসে হাইকোর্টে রিট নিষ্পত্তি হওয়ায় বর্তমান ভাড়া অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স সমন্বয়ের কাজ করছে দুই সিটি করপোরেশন। ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে সমন্বয় করে বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করা হবে।

দুই সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, গত বাজেটে ৪৯৫ কোটি টাকার হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হয়নি। ৯০ সালের বাড়িভাড়ার হিসাবে এতদিন দিয়ে আসা হোল্ডিং ট্যাক্স এখন বর্তমান ভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় হচ্ছে। যে কারণে হোল্ডিং ট্যাক্স আগের চেয়ে ক্ষেত্র বিশেষে টাকার পরিমাণে কয়েকগুণ বাড়ছে।

Advertisement

এদিকে বাড়ির মালিকরা বলছেন, হঠাৎ করে ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে, যার বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক। সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে এ ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। এতে বাসাভাড়া বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে।

তবে সিটি করপোরেশন বলছে, ৯০ সালের পর গত ২৭ বছরে অনেকের হোল্ডিং ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট (মূল্যায়ন) করা হয়নি। এবার সেগুলো বর্তমান ভাড়া অনুযায়ী অ্যাসেসমেন্ট করায় তাদের কাছে সেটি বেশি মনে হচ্ছে। আবার যারা নতুন বাড়ি করেছেন কিংবা আগে অ্যাসেসমেন্ট করেছেন তাদের ট্যাক্স খুব বেশি বাড়েনি। ১৯৯০ সালের বাসাভাড়ার মূল্য অনুযায়ী এত বছর সিটি করপোরেশন রাজধানীর বাড়ির মালিকদের থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করত। আগের সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বর্তমান ভাড়ায় হোল্ডিং আদায় করার জন্য হোল্ডিং ট্যাক্সে সমন্বয় করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

রাজধানীর শান্তিনগর ও আরামবাগে দুটি বাড়ির মালিক মকিদুর রহমান। এতদিন ধরে হোল্ডিং ট্যাক্স একরকম দিয়ে এলেও এবার অনেক বেশি ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকে বাসার বার্ষিক ট্যাক্স ধরা হচ্ছে ১৮ হাজার টাকা। এক দফায় তা বাড়িয়ে এবার সাড়ে ৪২ হাজার টাকা করা হয়েছে। এভাবে একবারে এত বৃদ্ধি একেবারেই অস্বাভাবিক। এই হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে হলে বাসার ভাড়াও আমাদের বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, এমনিতেই সব দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। এর মধ্যে হোল্ডিং ট্যাক্স এত পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে যে নতুন করে বাসাভাড়া না বাড়িয়ে আমাদের কোনো উপায় থাকবে না।

Advertisement

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার বাসার মালিক আব্দুস সাত্তার প্রামাণিক বলেন, একদিকে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে। এর মধ্যে যদি হোল্ডিং ট্যাক্সের পরিমাণ হঠাৎ বাড়িয়ে দেয় তাহলে তো আমাদের বাসাভাড়াও না বাড়িয়ে উপায় থাকবে না। বাসাভাড়া দিয়েই আমাদের সংসার চলে। এ ক্ষেত্রে বাড়তি ট্যাক্সের অংশ তো ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকেই আমাদের আদায় করে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাসাভাড়া না বাড়িয়ে কোনও উপায় দেখছি না।

দীর্ঘদিন ঢাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, বছর গেলেই বাসার মালিকদের ভাড়া বাড়ানোর প্রবণতা দীর্ঘদিনের। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়লে সবকিছুই চাপিয়ে দেয়া হয় ভাড়াটিয়াদের ওপর। যা বেতন পাই তার অর্ধেকই বাসাভাড়া দিতে চলে যায়। এখন আবার মালিকরা বাসাভাড়া বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন।

তারা বলছেন, ট্যাক্স বেড়েছে তাই বাসাভাড়া বাড়ানো হবে। আসলে তো ট্যাক্স বাড়েনি। আগে বাসার মালিক পুরো বাসা থেকে ৫০ হাজার টাকা ভাড়া তুলত, এখন মাসে দুই লাখ টাকা তোলে। আগেও ১২ শতাংশ ট্যাক্স দিত এখনও ১২ শতাংশই দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু এই ট্যাক্সের টাকার পরিমাণ বৃদ্ধির অংশটুকুও বাসার মালিক ভাড়াটিয়েদের ওপর চাপাতে চাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে বাড়িভাড়া আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বেলাল বলেন, বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়নি। বর্তমান ভাড়ার সঙ্গে শুধু সমন্বয় করা হয়েছে। আগে রাজধানীবাসী ১৯৯০ সালের বাড়িভাড়ার মূল্য অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতেন। এখন থেকে বর্তমান ভাড়া অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করবেন বাসার মালিকরা।

এ বিষয়ে একটি উদাহরণ টেনে সিটি করপোরেশন এক কর্মকর্তা বলেন, ৯০ সালে যে বাসার ভাড়া তিন হাজার টাকা ছিল, সেটা এখন ২৫/৩০ হাজার টাকা হয়েছে। বর্তমান ভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় করে এখন নতুন হোল্ডিং ট্যাক্স ঠিক করা হচ্ছে। এতদিন অনেক বাড়িওয়ালা ৯০ সালের বাড়িভাড়ার হিসাবে হোল্ডিং ট্যাক্স দিয়েছেন, এখন থেকে বর্তমান ভাড়ার হিসেবে দেবেন।

হোল্ডিং ট্যাক্সের টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রবীন্দ্র শ্রী বড়ুয়া বলেন, নিয়মানুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পরপর সাধারণত সমন্বয় করার নিয়ম। ঢাকা শহরে প্রতি বছরে বাড়িভাড়ার ধরন পাল্টায়। নতুন বাড়ি নির্মাণ হয়, নতুন ভাড়া নির্ধারণ হয়। কিন্তু বিগত ২৭ বছর সিটি করপোরেশনে কোনো সমন্বয় হয়নি।

তবে সব এলাকায় একই রেটে বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করা হয় না। গুলশানে ট্যাক্সের হার একরকম। ওই ট্যাক্সের হার রামপুরা এলাকায় আদায় করা যায় না। প্রতি ওয়ার্ডের বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্সের জন্য আলাদা আলাদা রেট আছে- যোগ করেন তিনি।

বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়িভাড়ায় প্রভাব পড়বে কি না- এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাড়িভাড়া বাড়ার কোনো কারণ নেই। রাজধানীতে এমনিতেই প্রতি বছর বাড়িভাড়া বৃদ্ধি পায়। বাড়ির মালিক এতদিন কম টাকা ট্যাক্স দিয়ে এসেছেন। এখন তিনি যে পরিমাণ বাড়িভাড়া আদায় করেন সেই পরিমাণ ট্যাক্স পরিশোধ করবেন।

এএস/একে/এমএআর/আরআইপি