দেশজুড়ে

রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প : খাস জমির ক্ষতিপূরণ আদায়ের পাঁয়তারা

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। একটি প্রভাবশালী চক্র নদী পয়স্তী চরের খাস জমি দীর্ঘকাল দখলের পর এখন মালিকানা দাবি করে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ আদায়ের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। অবৈধ দখলদারদের কারণে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের কুলিং প্ল্যান্ট এবং নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার প্রকল্পটির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য রাশিয়ার সরকারকে অনুরোধ করলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় জমি অধিগ্রহণ প্রলম্বিত হচ্ছে। বিষয়টির রহস্য উদঘাটন জরুরি হয়ে পড়েছে।রূপপুর পারমাণবিক এলাকা থেকে ৫ দশকে পদ্মা নদী ২ কিলোমিটার সরে যাওয়ায় এক বিশাল চরের সৃষ্টি হয়।  এ চরের জমির পরিমাণ প্রায় ১২শ একর।  এলাকার প্রভাবশালী মহল চরের নদী পয়স্তী জমি দীর্ঘ ৩০ বছর দখল করে চাষাবাদ করে আসছে।  বাহির চর এবং চর রূপপুর সংলগ্ন নতুন এ চরের নামকরণ করা হয়েছে ‘রূপকণিকা’।  রূপকণিকা চরের ৮শ একর জমিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ‘কুলিং প্ল্যান্ট’ নির্মাণ এবং ‘নিরাপত্তা বেষ্টনী’ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে আণবিক শক্তি কমিশন।  ভূমি মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গত বছর আগস্ট এবং অক্টোবর মাসে দু`দফা পদ্মা চরের এ জমি পরিদর্শনে আসেন।  আণবিক শক্তি কমিশনের সেক্রেটারি পাবনা জেলা প্রশাসককে এ জমি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্য গত বছর চিঠি পাঠায়।  ঈশ্বরদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জানিয়েছেন, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে চরের এ জমি ব্যবহারের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।  অবৈধ দখলদাররা এখন এ জমির মালিকানা দাবি করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের পাঁয়তারা করছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে চরের জমিতে নানা ফসলের আবাদ হচ্ছে।  স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, এখানে তার ৪ বিঘা লিচু বাগান রয়েছে।  পৈত্রিক সূত্রে এ জমির মালিকানা দাবি করে তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুৎ প্রকল্পে তার জমি অধিগ্রহণ করলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।  পাকশী ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মোক্তার হোসেন জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, ২৭৩ জন কৃষক এ জমির মালিক।  সরকার এ জমি অধিগ্রহণ করলে ফসল ও জমির ক্ষতিপূরণ অবশ্যই দিতে হবে।  তার মালিকানাধীন ১০০ বিঘা জমিও এখানে রয়েছে বলে তিনি জানান। ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম সেলিম জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, প্রকল্প সংলগ্ন পদ্মা চরের জরিপ সম্পন্ন হয়েছে।  নতুন চরের নামকরণ করা হয়েছে ‘রূপকণিকা’।  যা শীঘ্রই গেজেটে অন্তর্ভূক্ত হতে যাচ্ছে।  উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যেই প্রকল্পের এ জমি দখলমুক্ত করতে মাইকিং করে নোটিশ জারি করেছে।  রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে সাইড ইনচার্জ এ বি এম রুহুল কুদ্দুস এ জমি প্রকল্প কাজে ব্যবহারের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে জাগো নিউজকে জানান, প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ বিলম্বিত হচ্ছে।  দখলদারদের দখলে রয়েছে জমি।  কাজে ধীর গতির এটিও একটি কারণ।উল্লেখ্য, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন এবং পয়স্তী জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে কাজ করেন।  এ নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় চিঠি চালাচালিও হয়েছে কয়েক দফা।  মিটিং ঢাকা এবং রূপপুর প্রকল্প এলাকায়ও (পাকশী) হয়েছে।  সেটেলমেন্ট বিভাগের কর্মচারিরা রাত-দিন কাজ করে জমি সনাক্ত করেছে। মৌজাটির নতুন নামকরণ (রূপকণিকা) করার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতাদের আত্মীয়-স্বজন ও নিকটজনেরা এই সব পয়স্তী জমি ভোগ দখল করেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যেই ওই সব দখলদাররা জমি যাতে সরকার অধিগ্রহণ করতে না পারে তার জন্য দেন দরবার দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছে।প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটির কাজ উদ্বোধন করেন।  রাশিয়ার অর্থ সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে এটি।  প্রকল্পটির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিশেষ নজর রয়েছে বলে একাধিকবার জানিয়েছেন এই প্রকল্প সফরে আসা একাধিক মন্ত্রী।আলাউদ্দিন আহমেদ/এমজেড/এমএস

Advertisement