আন্তর্জাতিক

৪২ বছর পর মা জানলেন, কফিনে শিশুর মরদেহ ছিল না

৪২ বছর ধরে সন্তানের সমাধিতে প্রত্যেক সপ্তাহে ফুল দিয়ে আসছেন মা লিডিয়া রিড। এতগুলো বছরে এমন একটাও সপ্তাহ কাটেনি যে সপ্তাহে তিনি সন্তানের কবরের কাছে যাননি।

Advertisement

সেই ১৯৭৫ সাল থেকে প্রতি সপ্তাহে একগোছা ফুল রেখে আসতেন সন্তান গ্যারি রবার্ট প্যাটনের কবরের উপর। মৃত সন্তানের স্মৃতিতে বিলাপ করতেন তিনি।

কিন্তু গত মাসে হঠাৎ সেই দৃশ্যটা পাল্টে গেছে। মায়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে গ্যারির কফিন খুলে বিশেষজ্ঞরা যা দেখলেন, তাতে অবাক না হয়ে উপায় থাকে না।

কফিনে শিশুর খেলনা থেকে পোশাকের টুকরো সবই রয়েছে, কেবল নেই কোনো মানব শরীরের দেহাবশেষ!

Advertisement

১৯৭৫ সালের ঘটনা। তখন ৩৪ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ২৬ বছরের রিড। প্রসববেদনা ওঠায় তাকে ভর্তি করানো হয় স্থানীয় হাসপাতালে।

চিকিৎসকরা দেরি না করে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন। গ্যারির শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ বলে জানানো হয় রিডকে। দিন কয়েক পরে রিডকে ছেড়ে দেয়া হলেও গ্যারিকে রাখা হয় লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে।

তবে রিডের অভিযোগ, সন্তানকে ভালভাবে দেখতেও দেয়া হয়নি তাকে। এর পরেই রিডকে হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গ্যারির শরীরের বেশির ভাগ অঙ্গই কোনো কাজ করছে না। মায়ের অনুমতি পেলেই তারা খুলে দেবেন লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম।

সারাজীবন সন্তান কষ্ট পাবে ভেবে ভগ্ন হৃদয়ে অনুমতি দেন মা। তার পরেই রহস্যময় পর্ব শুরু হয়ে যায়। রিড তখনই দাবি করেছিলেন, তার সন্তান ফর্সা ছিল, মাথায় বেশি চুল ছিল না।

Advertisement

কিন্তু যে শিশুকে কফিনে রাখা হচ্ছিল, তার মাথা ভর্তি চুল ছিল, ফর্সাও ছিল সে। রিড তখনই প্রতিবাদ জানান। তবে তাকে চিকিৎসকরা বোঝাতে থাকেন, তিনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। সন্তান হারানোর দুঃখে তিনি প্রলাপ বকছেন। তাই ভুল দেখছেন তিনি।

চিকিৎসকদের যুক্তি মেনে নেন রিড। সন্তানের কফিন বয়ে নিয়ে যান নিজের হাতে। সন্দেহ হচ্ছিল তখনও। এত হালকা কেন কফিন! মানসিক স্বাস্থ্যের কথা উল্লেখ করা হয় তখনও।

তার পর কেটে গেছে বহু বছর। স্কটল্যান্ডে শিশুদের অঙ্গ পাচারের বিশাল এক চক্রের কথা জানাজানি হয়ে যায় ১৯৯৯ সালে। তাদের সঙ্গে বেশ কিছু হাসপাতালের যোগসাজশের প্রমাণও পাওয়া যায়।

এবার সন্দেহের ভিত্তিতে হামপাতালে গিয়ে কথা বলেন রিড। তবে হাসপাতাল থেকে তাদের জানানো হয়, তাদের শিশুদের সঙ্গে তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।

তারপরেও নিশ্চিত হতে পারেন না রিড। হাসপাতালের সঙ্গে পাচার চক্রের নাম একের পর এক জড়িয়ে পড়ায় রিড আবেদন করেন গ্যারির কফিন পরীক্ষার।

আদালত অবশেষে সেই আবেদনে সাড়া দেয়। কফিন তুলে দিন কয়েক আগে পরীক্ষা করে হতবাক হয়ে যান রিড। সেখানে কোনো মানুষের দেহাবশেষ পাওয়া যায়নি।

তাহলে ওই কফিনে কোনো শিশুর মরদেহই ছিল না। তার সন্তান গ্যারি কি তাহলে জীবিত আছেন? সেই উত্তর অবশ্য তার জানা নেই। নিজেদের মৃত সন্তানের মরদেহ হিসেবে কীপন পুঁতে রাখা শত শত মায়ের প্রশ্ন, তাদের সন্তানরা কি আসলেই মারা গিয়েছিল?

নাকি তাদের অঙ্গ কেটে বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল? নাকি তারা বেঁচে আছে? থাকলে কোথায় আছে তারা? কি ঘটেছিল তাদের সঙ্গে? রিডের মতো অসংখ্য মা এখন উত্তরের খোঁজে আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন।

সূত্র : দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট

কেএ/আইআই