দেশজুড়ে

সিলেটের সড়কে গাড়ি চলে হেলেদুলে

সিলেটে মহাসড়ক থেকে শুরু করে আঞ্চলিক সড়ক পর্যন্ত সর্বত্রই ভাঙাচোরা বেহাল দশা। কোথাও কোথাও সেতু থেকে সড়কের অর্ধেক ধসে খালে পড়ে গেছে। বড় বড় গর্ত বাঁচিয়ে চলতে গিয়ে সড়কে প্রায়ই ঘটছে দুটো গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ। সড়কে ঝরে পড়ছে তাজা প্রাণ। নিম্নমানের কাজ, বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণেই সড়কের এই বেহাল দশা। এই বেহাল দশা কাটাতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৪০ কোটি টাকা।

Advertisement

সিলেটের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক সিলেট-তামবিল মহাসড়ক। প্রতিদিন শত শত ট্রাক এই সড়কে যাতায়াত করে। ভারতের সঙ্গে সংযোগ সড়ক হিসেবে পাথর-বালুসহ নানা পণ্য বোঝাই ট্রাক দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। পর্যটন শহর সিলেটে প্রতিদিন শত শত গাড়ি জাফলং আসে। কিন্তু সিলেট-তামাবিল সড়কে বড় বড় গর্ত গুনে শেষ করা যাবে না। আর বৃষ্টি হলে তো এসব গর্তে পানি জমে কাদাপানি খালের মতো হয়ে যায়। গাড়ি চলে হেলেদুলে। দু'ঘণ্টার যাত্রায় সময় লাগে চার ঘণ্টা। এই সড়কটি গত জানুয়ারি থেকেই ভাঙাচোরা।

অভিযোগ রয়েছে, শুরুতে কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহৃত হয়েছে। যে কারণে এবার বৃষ্টি বেশি হওয়ায় নিম্নমানের উপকরণ বৃষ্টির জলে মিশে গিয়ে ভেতরের মাটি বের হয়ে গেছে।

সিলেটে আগত কয়েকজন পর্যটক জানালেন, সিলেট তামাবিল সড়কে বৃষ্টির দিনে কাদাপানি আর রোদের সময় ধুলোবালি। মূলত রাস্তার ভাঙনের কারণেই পর্যটকদের এই ভোগান্তি। অনেকে এখন জাফলংয়ে আসতে চান না রাস্তা খারাপের কারণে। আবার রাস্তা ভাঙার কারণে ২ হাজার টাকার বদলে গাড়ি ভাড়া ৪ হাজার টাকা লাগছে।

Advertisement

হাইওয়ে পুলিশ বলছে, গত ৯ মাসে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চন্ডিপুল থেকে শেরপুর পর্যন্ত অংশে অন্তত ৪শ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছে অনেকে। দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে সড়কের গর্ত থেকে চাকা বাঁচাতে গিয়ে চালকেরা গাড়ি দুর্ঘটনায় মুখে নিয়ে যান। এমনকি কোথাও কোথাও সেতুর মাঝখানে গর্ত হয়ে লোহা বের হয়ে গেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ উদাসীন।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয়রা যখন সড়কের ভাঙনের বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগে যোগাযোগ করেন, তখন ইট নিয়ে সড়কে নামেন তাদের শ্রমিকেরা। গর্তে ইট বিছিয়ে তারা চলে যান। দু'দিনের বৃষ্টিতে আর গাড়ির চাকার চাপে সেই ইট পানিতে গলে মিশে যায়। আবার সড়কের অবস্থা হয় যেই-সেই। আবার রোদের দিনে পাথর ও গালা বোঝাই ট্রাক এসে সড়কে সামান্য পাথর আর বালু ছিটিয়ে গালা ছড়িয়ে চলে যান। এতই নিম্নমানের এই মেরামত যে, একদিকে গর্ত ভরে দেয়া হয়, অন্যদিকে চাকার ঘষায় উঠে পড়ে। এতে আবার সড়কের বেহাল দশা দেখা দেয়।

শুধুই সিলেটের মহাসড়কই নয়, বেহাল দশা ও চরম অবহেলার শিকার জেলার আঞ্চলিক বিভিন্ন মহাসড়কও। এসব সড়কে গর্তের পাশাপাশি আরও ভয়াবহ সমস্যা রয়েছে। সিলেটের বাদাঘাট সড়কে বাদাঘাট সেতুতে সড়ক ধসে পাশের খালে পড়ে গেছে। সড়ক অর্ধেক পড়ে গিয়ে ৩০ ফুটের সড়ক হয়েছে ১৫ ফুট। এই সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চালাতে হয় যানবাহন। গত দু'মাস ধরে সড়ক ধসে পড়েছে। কিন্তু একবারের জন্যও দেখেও যাননি সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কেউ।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, সিলেটের মহাসড়কগুলোর বেহাল দশা কাটাতে সিলেট থেকে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। অক্টোবর মাসে এই বরাদ্দের ব্যাপারে মহাসড়ক পরিদর্শন করবেন সওজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এরপর বরাদ্দ দেয়া হবে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে আগামী নভেম্বর মাসে সিলেটের মহাসড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।

Advertisement

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত বলেন, বন্যা-অতিবৃষ্টির কারণে সড়কের বেহাল অবস্থা। কিছু কিছু সড়কে কাজ শুরু করা হবে। আর বাকি সড়কে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ এলে কাজ শুরু হবে। আশা করছি, অক্টোবর মাসেই বরাদ্দ পাওয়া যাবে।

ছামির মাহমুদ/এফএ/আইআই