রাজনীতি

বিএনপি সবসময় হিন্দুদের পাশে থাকবে : ফখরুল

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারদীয় শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছিয়ে দিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে আছে এবং সবসময় থাকবে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে ভক্ত-পূণ্যার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

‘আজকে আপনাদের সামনে এসেছি, আমাদের দলের পক্ষ থেকে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানানোর জন্যে। আপনারা জানেন, দেশনেত্রী চিকিৎসার জন্য বিদেশে আছেন। তিনি আমাকে বলেছেন যে তুমি যাবে যখন আমার শুভেচ্ছা তাদের কাছে পৌঁছে দিও।’

‘আমরা এওটুকু আশ্বাস দিতে পারি যে, আমরা আপনাদের পাশে আছি, সবসময় থাকব এবং আপনাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা অবশ্যই আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে সংগ্রাম করব।’

Advertisement

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, দেবী দূর্গা যে আবির্ভুত হয়েছিলেন পৃথিবীতে অশুরকে পরাজিত করবার জন্যে, অন্যায়কে পরাজিত করবার জন্যে, নির্যাতন-নিপীড়নকে পরাজিত করবার জন্যে, সত্য-সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্যে এবং তিনি (দেবী দূর্গা) পরাজিত করেছিলেন সেই অশুরকে, অসত্যকে, অসুন্দর ও অন্যায়কে। সেজন্য এই পূজা সকলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পূজা।’‘আমরা এখন এই পৃথিবীতে একটা নষ্ট সময়ের মধ্যে বাস করছি। আমরা দেখছি যে, হিংসা-প্রতিহিংসা, গণহত্যা-হত্যা । মানুষ মানুষকে হত্যা করছে, পশুর মতো নির্যাতন করছে। এই পশুত্বকে পরাজিত করা, এই পশুত্বকে হারিয়ে দেয়া, মানুষকে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, মানবতার জয়গান গাওয়া- এটা ছিলো দেবীদূর্গার একান্ত লক্ষ্য তিনি সফল হয়েছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘আজকেও বাংলাদেশে আমাদের অধিকার আমরা পুরোপুরি ভোগ করতে পারি না, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আমরা ভোগ করতে পারি না। আমরা সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করতে পারি না।’

‘আসুন আজকে আপনাদের শুভ দিনে সার্বজনীন এই উৎসবে আমরা এই প্রার্থনা করি- বাংলাদেশে যেন শান্তি আসে, সকলের যে কণ্যাণ হয়, সকলে যেন অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে এবং সকলে যেন একটা সুন্দর, ন্যায় প্রতিষ্ঠার দিকে যেতে পারে-এটাই হোক আজকে আমাদের আরাধ্য।’

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে অনেক জমি বেহাত হওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি শুনেছি যে, এই মন্দিরের অনেক জমি-সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে এবং কিছুদিন ধরে এটা অনেকেই দখল করে নেয়ার চেষ্টা করছে বিভিন্ন জায়গা। আমার মনে আছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামার বাবর সাহেব নির্দেশ দিয়েছিলেন এখান যে সমস্ত দখলদার আছে, অবৈধ দখলী আছে তাদেরকে উচ্ছেদ করার জন্য। তারা উচ্ছেদ করেছিলেন।’‘আমরা এওটুকু আশ্বাস দিতে পারি যে, আমরা আপনাদের পাশে আছি, সব সময় থাকব এবং আপনাদের ন্যায় সঙ্গত অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা অবশ্যই আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে সংগ্রাম করবো।’

Advertisement

বিকেল সাড়ে ৫টায় পুরনো ঢাকা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আসেন বিএনপি মহাসচিব। বিকেলে কক্সবাজার থেকে বিমানবন্দর থেকে প্রথমে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কেরানীগঞ্জের বাড়ির পূজামণ্ডপ ও ফরাসগঞ্জ নুকুল সাহার পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। পরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, বনানী মাঠে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করে তিনি ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের শুভেচ্ছা জানানোর অনুষ্ঠানে সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা গৌতম চক্রবর্তী, সানাউল্লাহ মিয়া প্রমূখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

এ সময়ে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জি, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার রায়, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল, সাবেক সভাপতি কাজল দেবনাথসহ পূজা উদযাপন কমিটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি‘র আসম আবদুর রব, সিপিবি‘র সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বাসদের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান, জাসদ একাংশের শরীফ নুরুল আম্বিয়াসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এসে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এছাড়া সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামানের নেতৃত্বে বিচারকগণ, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের মহাপরিচালনক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিবউদ্দিনও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাও তার পরিবারের সদস্য ও হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে বিকেলে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এসে পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন এবং ভক্ত ও পূণ্যার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

এমএম/আরআইপি