খেলাধুলা

গোল্ডেন বুট ও জাফর ইকবালের জন্মদিন

জাফর ইকবালের উত্থানের শুরুটা গত মৌসুমে। আরামবাগের জার্সি গায়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে ৫ গোল করে আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন বান্দরবানের এ যুবক। বুধবার ভুটানের থিম্পুতে শেষ হওয়া সাফ অনুর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপটা তো নিজেরই করে নিয়েছেন চট্টগ্রাম আবাহনীর এ উইঙ্গার। ভারত ও ভুটানের বিপক্ষে জোড়া গোল, একটি মালদ্বীপের বিরুদ্ধে। চার ম্যাচে ৫ গোল করে জিতেছেন সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন বুট। বাংলাদেশের রানার্সআপ হওয়ার প্রধান কারিগরও তিনি।

Advertisement

বুধবার ছিল জাফর ইকবালের ১৮তম জন্মদিন। থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়াম থেকে হোটেলে ফিরে রাতে দলের সদস্যরা কেক কেটে পালন করেন এ টুর্নামেন্টের বড় তারকার জন্মদিন। রাতটা হতে পারতো লাল-সবুজ জার্সিধারীদের আরো বড় উৎসবের উপলক্ষ্য। জাফর ইকবালের জন্মদিন পালন অনুষ্ঠানে থিম্পুর টিম হোটেল হতে পারতো এক টুকরো বাংলাদেশ। তা হয়নি চ্যাম্পিয়ন হতে না পারায়। ব্যক্তি জাফর ইকবালের অর্জনটাই বা কম কিসের?

ঘরোয়া ফুটবলে জার্সি বদলিয়েও গোলের দেখা মেলেনি জাফর ইকবালের। মিলবে কী করে? মৌসুমের শুরুতেই চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত, প্রিমিয়ার লিগে চট্টগ্রাম আবাহনীর প্রথম একাদশেই এখনো জায়গা করে নিতে পারেননি। গোটা তিনেক ম্যাচে বদলি হিসেবে খেলেছেন। তাও শেষ দিকে ৫/১০ মিনিটের মতো। ঘরে মাঠে গোলের খাতা খুলতে না পারলেও যুব সাফে ৫ গোল করে জাতীয় দলের হয়ে ধারাবাহিকতা ধরে রাখার আত্মবিশ্বাস জমিয়েছেন ১৮ বছরের এ যুবা।

কেমন কাটলো এ টুর্নামেন্ট? ‘আসলে শেষটা রাঙানো হলো না। আমরা ভুটানে এসেছিলাম ভালো খেলার এবং ভালো কিছু করার লক্ষ্য নিয়ে। প্রথম ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে ওভাবে কামব্যাক করে জয়ের পরই আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। ওই ম্যাচের পরই শিরোপা জয়ের স্বপ্নটা পুরোপুরি জাগ্রত হয়; কিন্তু হলো না। আমি ৫ গোল করেছি, গোল্ডেন বুট জিতেছি। ভালো লাগছে। তবে আরো ভালো লাগতো যদি ট্রফি নিয়ে ফিরতে পারতাম’- থিম্পু থেকে জাগো নিউজকে বলছিলেন যুব সাফের নায়ক জাফর ইকবাল।

Advertisement

নিজেদের দল সম্পর্কে জাফর ইকবালের সনদ, ‘আমরা এখানে একটা পরিবারের মতো কাটিয়েছি। এ দলে যারা আছি তারা সবাই ভালো ফুটবলার। সবারই চেষ্টা আর প্রতিজ্ঞা ছিল ভালো কিছু করার, দেশে ভালো খবর পাঠানোর। আমরা শেষ ভালোর কাছাকাছি গিয়ে থেমেছি।’

বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জন্য এ টুর্নামেন্টের বড় দুঃখের নাম নেপাল। হিমালয়ের এ দেশটির কাছে হেরেই শিরোপ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে বাংলাদেশের। ওই ম্যাচে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেও হার নিয়ে ফিরতে হয়েছিল জাফর ইকবালদের। বিশ্বনাথের লাল কার্ড এবং গোলরক্ষকের শিশুসূলভ একটি গোল হজমই ওই ম্যাচের ভাগ্য লিখে দিয়েছিল।

বিশ্বনাথ তো অনেক আপসেট তাই না। ওই ম্যাচ ড্র করলেও ট্রফিশূন্য ফিরতে হতো না। ‘আসলে কোনো খেলোয়াড়ই চান না এভাবে দলের বিপদ ডেকে আনতে। আমরা কেউই বিশ্বনাথকে দোষারোপ করিনি। ওতো সামান্য ভুল করেছে। তবে সে ভুলের অনুশোচনা বিশ্ব সব সময়ই করে। বারবার বলেছে, কেনো ওটা করতে গেলাম। আমার জন্যই এমন হলো’- বলছিলেন জাফর ইকবাল।

জন্মদিনে দেশের বাইরে। বাবা-মা’র সঙ্গে কথা হয়েছে? তারা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন? ‘ম্যাচের পরও কথা হয়েছিল। আজও (বৃহস্পতিবার) হয়েছে। আমি গোল করেছি, পুরস্কার পেয়েছি। এজন্য বাবা-মা বলেছেন, ভালো খেলেছো। যদি চ্যাম্পিয়ন হতে পারতা আরো ভালো লাগতো আমাদের। সামনে আরো ভালো করে খেলবা’- ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জাফর ইকবাল।

Advertisement

ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে মনের মধ্যে কোনো জিদ ছিল? ‘এক বছর আগে এই মাঠে জাতীয় দল হেরেছে ভুটানের কাছে। ওই দলে আমিও ছিলাম; কিন্তু খেলার সুযোগ হয়নি। সাইডলাইনে বসেছিলাম, ম্যাচের পর অনেক কান্নাকাটি করেছি। আমার সব সময়েই মনে হয়েছিল ভুটানকে হারাতে পারবো। হারিয়েছি। ম্যাচের পর জাহিদ ভাই (জাতীয় দলের জাহিদ হোসেন) আমাকে ফোন দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বলেছেন- তোরা দারুণ খেলেছিস, দারুণ কাজ করেছিস’-জবাব জাফর ইকবালের।

আগের তিন ম্যাচে ২ গোল। সব ম্যাচেই খেলেছেন পুরো সময়। তো ভুটানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আপনাকে ৫৪ মিনিটে নামানো হলো। এটা কী কোচের কৌশল ছিল? ‘হ্যা। কোচ আমাকে বলেছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে নামানোর কথা। তার উদ্দেশ্যটা বুঝতে পেরেছিলাম। তিনি যেটা চাইছিলেন সেটাই হয়েছে’- থিম্পু থেকে জাফর ইকবাল।

আরআই/আইএইচএস/জেআইএম