আন্তর্জাতিক

যে কারণে জাতিসংঘের সফর বাতিল করল মিয়ানমার

রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের পরিস্থিতি জানতে জাতিসংঘের নির্ধারিত একটি সফর বাতিল করেছে মিয়ানমার। খারাপ আবহাওয়ার অজুহাতে আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত জাতিসংঘের সব সংস্থার প্রধানদের সফর স্থগিত করেছে দেশটি।

Advertisement

গত ২৫ আগস্টের পর থেকে শুরু হওয়া দমন-পীড়নের মধ্যে এটাই মিয়ানমারে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের প্রথম সফরের কথা ছিল।

মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক মিন থেইং ডেইলি ইলেভেনকে জানান, খারাপ আবহাওয়ার কারণে আমরা কূটনীতিকদের মংডো সফর স্থগিত করেছি। এ ব্যাপারে কূটনীতিকদের সঙ্গে আলাপও করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা তাদের অপেক্ষা করার কথা বলেছি। তারা আমাদের পুনরায় শিডিউল নির্ধারণের অনুরোধ করেছেন। তবে ২ অক্টোবর পর্যন্ত সফর স্থগিত করা হয়েছে।

Advertisement

মিয়ানমার আরও জানিয়েছে, কূটনীতিকরা বৃহস্পতিবার ভোর ৫টায়ই ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে পৌঁছান। ৬টা ৩০ মিনিটে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের রওনা দেয়ার কথা ছিল। তবে ইয়াঙ্গুনের বৈরী আবহাওয়া সকাল ৮টা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকায় সফর নিয়ে কূটনীতিকরা আলোচনা করেন। পরে সবার নিদ্ধান্তে সেই সফর স্থগিত করা হয়।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফানে দুজারিক গত বুধবার জানান, জাতিসংঘের সব সংস্থার প্রধানরা রাখাইন রাজ্য ঘুরে দেখবেন। তাদের সঙ্গে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রদূতের আসার কথা ছিল।

কথা ছিল বেছে বেছে তারা সহিংসতাপূর্ণ এলাকায় যাবেন। এরপর বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পরিকল্পনা ছিল। তবে ইতোমধ্যে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘের সব সংস্থার প্রধানদের রাখাইনে যাওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, সেনাবাহিনীর তাণ্ডবে এক মাসে চার লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে রাখাইন ছেড়ে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বর্তমানে সেই সংখ্যা চার লাখ ৮০ হাজারে পৌঁছেছে।

Advertisement

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধদের নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট এবং ঘরবাড়িতে আগুন দেয়ার কথা জানায়। স্যাটেলাইটসহ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিছু সাংবাদিকের তোলা ছবিতে রোহিঙ্গাদের গ্রাম পুড়ে ছাই হতে দেখা যাচ্ছে।

তবে সেনাবাহিনীর দাবি, তারা কেবল সন্ত্রাসীদের টার্গেট করছে। সেনাবাহিনী গত সপ্তাহে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৪০ হিন্দুকে হত্যা করেছে রোহিঙ্গারা।

তবে রাখাইনে ঠিক কী ঘটছে, এখন পর্যন্ত তার সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন। কারণ এখন পর্যন্ত সেখানে দেশের বাইরের কাউকে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি মিয়ানমার। তারা শর্তসাপেক্ষে নিজেদের পছন্দমতো কিছু স্থানে নিয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কয়েকজন সাংবাদিককে কথা বলতে দিয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, রাখাইন রাজ্যে বহু মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের জন্য খাবার, কাপড়সহ ওষুধপত্র প্রয়োজন।

রোহিঙ্গারা বছরের পর বছর ধরে মিয়ানমারে বসবাস করেও সেখানকার নাগরিকত্ব পায়নি। মিয়ানমার সরকার তাদের রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকারই করে না। তাদের দাবি, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে সেখানে গিয়ে বসতি স্থাপন করেছে।

বৌদ্ধরা সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক। অতীতেও বহুবার তারা রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা, নির্যাতন করে হত্যা করেছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় রাখাইন ছাড়ার ঢল শুরু হয়।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে রয়েছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী নেত্রী অং সান সু চি। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রাখাইনে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

সূত্র : ইলেভেন

কেএ/আইআই