দেশজুড়ে

হাসপাতালের বর্জ্য রাস্তায়, সুস্থ মানুষও অসুস্থের পথে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে জেলার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কার্যক্রম। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে জেলা সদর হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালগুলোর বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে এখানকার পরিবেশ।

Advertisement

জেলার বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের সারাদিনের জমানো বর্জ্য প্রতিদিন রাতে হাসপাতালের সীমানা প্রাচীরের অভ্যন্তরে ও হাসপাতালের সামনের সড়কে ফেলা হয়। সদর হাসপাতালের বর্জ্যের পাশপাশি রাতের আঁধারে সড়কের পাশে কয়েকটি রেস্টুরেন্টের বর্জ্যও ফেলা হয়। সকালে পৌরসভার বর্জ্য সংগ্রহকারী গাড়ি এসে বর্জ্য না সরানো পর্যন্ত নাকে রুমাল চেপেই সদর হাসপাতাল সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয় পথাচারীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের সব ধরনের বর্জ্য পরিশোধনের মাধ্যমে অপসারণের লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদফতর থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। ইনসিনেরেটর মেশিনের মাধ্যমে এক হাজার ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রায় পরিশোধন করে বর্জ্যগুলো অপসারণ করা হবে মর্মে ওই ছাড়পত্র দেয়া হয়।

জেলা সদর হাসপাতালের ইনসিনেরেটর মেশিন থাকলেও অধিকাংশ বর্জ্য ফেলা হচ্ছে হাসপাতালের অভ্যন্তরের ডাস্টবিন ও সামনের সড়কে। এসব বর্জ্য সঠিকভাবে অপসারণ না করায় পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি মানুষের মধ্যে রোগ-জীবাণুও ছড়াচ্ছে।

Advertisement

সদর হাসপাতাল সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী পথচারী আকবর হোসেন জানান, প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে তিনি যাতায়াত করেন। বর্জ্যের দুর্গন্ধের কারণে নাকে রুমাল চেপে চলাচল করতে হয়। সাধারণ মানুসের এমন দুর্ভোগেও সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ে না।

আরেক পথচারী হেলাল মিয়া জানান, বর্জ্যের স্তূপ থেকে যে দুর্গন্ধ বের হয় তাতে সুস্থ মানুষেরও অসুস্থ হওয়ার উপক্রম। বর্জ্য সরানোর পরও ব্লিচিং পাউডার না ছিটানোর কারণে দুর্গন্ধ থেকে যায়।

জেলা পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শুধুমাত্র চারটি বেসরকারি হাসপাতালের পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে।

এগুলো হলো, পৌরশহরের সেবা ক্লিনিক, ডক্টরস্ কেয়ার হাসপাতাল, মডার্ন জেনারেল হাসপাতাল ও খেয়াম মেডিকেল সেন্টার। অবশ্য বেসরকারি কিছু হাসপাতাল ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছে বলেও জানা গেছে।

Advertisement

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায় ডা. মো. শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা অধিক ক্ষতিকারক বর্জ্যগুলো ইনসিনেরেটর মেশিনের মাধ্যমে পুড়িয়ে ফেলি। সাধারণ বর্জ্যগুলো হাসপাতালের নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলা হয়। পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে আমরা একাধিকবার বলেছি বর্জ্যগুলো যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। তবে সরকারি হাসপাতালের জন্য পরিবেশ অধিদফতর থেকে ছাড়পত্র নিতে হয় কী না সেটি আমার জানা নেই। যদি ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই আমরা ছাড়পত্র নিব।

তবে পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, সঠিকভাবে বর্জ্য অপসারণের জন্য সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালকেই পরিবেশ অধিদফতর থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। হাসপাতালগুলোকে একাধিকবার নোটিশ পাঠালেও তাতে কর্ণপাত করছে না কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে জেলা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মুছাব্বের হোসেন মুহাম্মদ রাজিব জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেয়ার জন্য নোটিশ পাঠিয়েছি। ইতোমধ্যে কিছু হাসপাতাল নোটিশে সাড়া দিয়ে ছাড়পত্রের জন্য আবেদনও করেছে। আমরা সেসব আবেদনগুলো পর্যালোচনা করে দেখছি। যারা ছাড়পত্র নেবে না তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আজিজুল সঞ্চয়/এফএ/এমএস