জয়পুরহাট সদর উপজেলার জয়পুরহাট-পাঁচবিবি সড়কের পার্শ্বে পাকুরতলী নামক স্থানে অবস্থিত জয়পুরহাট বিএড কলেজ। এই শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজটি প্রায় এক যুগ ধরে চলছে কোনো স্থায়ী শিক্ষক ছাড়াই। মাত্র ৩ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে শুধু শুক্রবারে ৩ ঘণ্টা চলে এ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজটি। এ ছাড়া কোনো নিয়ম-নীতি না থাকলেও ওই শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজটির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোর্স ফি বাবদ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে কলেজটির অধ্যক্ষ ও সভাপতির বিরুদ্ধে। জানা গেছে, ২০০০ সালের দিকে স্থাপিত হয় জয়পুরহাট বিএড কলেজ নামের শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজটি। বর্তমানে কলেজটির জন্য ব্যাংকে খোলা সাধারণ ও সংরক্ষিত তহবিলে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা মজুত রাখার বিধান থাকলেও তা নেই দীর্ঘ দিন ধরে। মাত্র ২টি শ্রেণি কক্ষ থাকলেও শুধু শুক্রবারে একটি মাত্র শ্রেণি কক্ষে শুধু ৩ ঘণ্টা পাঠদান করা হয় বলে সরেজমিনে দেখা গেছে। কলেজ স্থাপনের জন্য ১ একর ৫২ শতক জমি থাকা বাধ্যতামূলক হলেও সেখানে কলেজের নিজস্ব কোনো জমিও নেই। ভূয়া দলিল দেখিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখে ধুলা দিয়ে অথবা তাদের ম্যানেজ করে প্রতি বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধন নবায়ন করে নেয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কলেজটি দফায় দফায় পরিদর্শনও করেছে। এতো অনিয়মের মধ্যেও বহাল তবিয়তে চলছে কলেজটি। এই কলেজের অফিস সহকারী কাম হিসাবরক্ষক গোলাম মোস্তফা জাগো নিউজকে জানান, ২০০০ সালে স্থাপিত এই কলেজটির আগের হিসাব জানা না থাকলেও ২০০৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভর্তি হন ১৫০৪ জন আর পরীক্ষা দেন ১২৪৮ জন শিক্ষার্থী। ২০০৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতি জন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা কোর্স ফি আদায় করা হয়েছে। সে হিসেবে ওই সময়ে ভর্তিকৃত ১০৩৯ জন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোর্স ফি আদায় করা হয়েছে ৭ কোটি ৭৯ লাখ ২ হাজার ৫ শত টাকা। আর ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতি জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কোর্স ফি বাবদ আদায় করা হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা করে। এই সময়ের মধ্যে মোট ৪৬৫ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কোর্স ফি বাবদ আদায় করা হয়েছে ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫ হাজার টাকা। হিসেব মতে ২০০৩ সাল থেকে সর্বমোট কোর্স ফি আদায় করা হয়েছে ১৪ কোটি ৭৬ লাখ ৭ হাজার ৫শ টাকা। এতোগুলো টাকা কীভাবে খরচ করা হয়েছে তার কোনো হিসেব বা কোনো প্রকার অডিট রিপোর্ট দেখাতে পারেননি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এছাড়া এই শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজটিতে কমপক্ষে ১৩/১৪ জন শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নেয়ার কথা থাকলেও ক্লাস নিচ্ছেন মাত্র ৩ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক। তাদের মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, মাত্র ৩ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়েই ক্লাস নেয়া হলেও কাগজে কলমে প্রয়োজনীয় শিক্ষক দেখানো হচ্ছে, সে বিষয়টি অধ্যক্ষই ভালো বলতে পারবেন। তবে তিনি শুধু কোর্স ফি আদায়ের সময় কলেজে আসেন, অবশিষ্ট সময় স্বপরিবারে ঢাকা বসবাস করেন বলে এই খন্ডকালীন শিক্ষক জানান। কলেজের প্রহরী মজিবর রহমান ও অফিস সহকারী হাফিজার রহমান জানান, শুধু শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কলেজ খোলার সময়টুকুতে কিছু শিক্ষার্থী আসলেও অধিকাংশই ক্লাসে আসেন না। শুধু চুড়ান্ত পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক বেশ কয়েকজন বিএড শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে জানান, হাইস্কুলগুলোতে চাকুরি লাভের ক্ষেত্রে বিএড সার্টিফিকেট জরুরি বলে যে কোনো বিএড কলেজে ভর্তি হতে হয়। আর জয়পুরহাট বিএড কলেজে তেমন ক্লাস হয় না। তাছাড়া যে ৩ জন শিক্ষক আছেন তারাসহ অধ্যক্ষও মাত্র বিএড পাশ। তারা উল্টো প্রশ্ন করেন, বিএড পাশ করা শিক্ষক কী ভাবে বিএড এর মতো কঠিন বিষয় পড়াবেন? তাদের কাছ থেকে শুধু কোর্স ফি আর পরীক্ষার ফি আদায় করা হচ্ছে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের মতো একটি বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এম এড পাশ করা শিক্ষক থাকলে পরীক্ষার ফলাফল ভালো হত বলেও তারা মন্তব্য করেন। এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে কলেজ পরিচালনা কমিটির (এডহক) সভাপতি সিরাজ আনোয়ার হায়দার কোনো সন্তোষজনক জবাব না দিয়ে জাগো নিউজকে বলেন, যেভাবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলে এই কলেজও সেভাবেই চলছে। জয়পুরহাট বিএড কলেজ অধ্যক্ষ সহিদুল ইসলামের সঙ্গে তার মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।এমজেড/এমএস
Advertisement