জাতীয়

গণশুনানি : বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে দুর্নীতি কমান

দেশের বর্তমান অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো একেবারেই অযৌক্তিক। এর কোনো প্রয়োজনও নেই। বাস্তবতা হলো- বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে এ খাতের দুর্নীতি কমালে সরকার বেশি রাজস্ব পাবে।

Advertisement

সোমবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ওপর গণশুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সেখানে ভোক্তা পর্যায়ের প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন।

ভোক্তা প্রতিনিধিরা বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য গণশুনানি নয় বরং কীভাবে বিদ্যুতের দাম কমানো যায় সে বিষয়ে গণশুনানি হওয়া দরকার।

বিইআরসি আইন-২০০৩ অনুযায়ী, গণশুনানির পর ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে বিইআরসি। এর আগে সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর।

Advertisement

২০১০-এর ১ মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে পাইকারি পর্যায়ে পাঁচবার ও খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।

সোমবার গণশুনানিতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে পাইকারি বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৭২ পয়সা (প্রায় ১৫ শতাংশ) বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানি গ্রাহক পর্যায়ে ৬ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বাড়ানো প্রস্তাব দিয়েছে।

খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে ডিপিডিসি গড়ে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ, ডেসকো ৬ দশমিক ৩৪, ওজোপাডিকো ১০ দশমিক ৩৬, আরইবি ১০ দশমিক ৭৫ এবং পিডিবি ১৪ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। কয়েকটি কোম্পানি গ্রাহক পর্যায়ে ডিমান্ড চার্জ ও সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে।

বিপিডিবি ও বিইআরসির তথ্য উপস্থাপনের পর কথা বলেন ভোক্তা প্রতিনিধিরা।

Advertisement

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম সামসুল আলম প্রায় এক ঘণ্টা বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে দেখান যে, বর্তমানে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। বরং উৎপাদন খরচের চেয়ে বেশি দাম নেয়া হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিলের অর্থের ব্যবহার না থাকায় সে অর্থ ‘নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানিকে’ ধার দেয়া হচ্ছে। স্বল্প ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপারে বিইআরসির আদেশ প্রতিপালিত হয়নি। কেন হয়নি? বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন ব্যর্থতার দায় কেন জনগণ নেবে?

কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিডি) সেক্রেটারি রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, জনস্বার্থপরিপন্থী কাজ হবে বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ালে। বরং কীভাবে বিদ্যুতের দাম কমানো যায় সে বিষয়ে গণশুনানি হওয়া দরকার। যেখানে আন্তর্জাতিকভাবে জ্বালানি তেলের দাম কমছে। বন্যা, রোহিঙ্গা ইস্যু, হাওরে বিপর্যয় এ বিষয় নিয়ে দেশের মানুষ যখন দিশেহারা তখন এমন এক শুনানিজনস্বার্থবিরোধী।

ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, মন্ত্রণালয়কে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বাতিল করতে হবে।

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।

গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিক কারণ আমি দেখতে পাচ্ছি না। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে বাড়িভাড়াসহ প্রতিটি জিনিসের দামই বেড়ে যায়। দেখা যায়, বিদ্যুতের দাম বাড়ল ৩০ টাকা কিন্তু বাড়িভাড়া বাড়ে ৩০০ টাকা।

এদিকে গণশুনানি চলাকালে ভবনের বাইরে মানববন্ধন করে গণমোর্চা ও বাংলাদেশ দেশপ্রেমিক পার্টি (বিডিপি)। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয় এখন বিভিন্ন কারণে সঙ্কটময় পরিস্থিতি চলছে দেশে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের অযৌক্তিক দাম বাড়ানো মানুষের জীবনে বিপদ ডেকে আনবে। বিদ্যুতের দাম যৌক্তিকভাবে কমানো উচিত। অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের ওপর গণশুনানির প্রয়োজন নেই।

গণশুনানিতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চেয়ারম্যন মনোয়ার হোসেন। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) পক্ষ থেকে তাদের দাবি উপস্থাপন করেন মহাব্যবস্থাপক বিপিডিবি কাওসার আমির আলি। কারিগরি মূল্যায়ন তুলে ধরেন বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির সদস্য মো. কামরুজ্জামান।

বিপিডিবি ছাড়াও বাকি পাঁচ বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাবের ওপর পর্যায়ক্রমে শুনানি হবে। মঙ্গলবার একই জায়গায় গণশুনানি হবে বিপিডিবির খুচরা মূল্যহার পরিবর্তনের প্রস্তাবের ওপর।

এমএ/জেডএ/এমএস