জামায়াতে ইসলামকে ছাড়লে যেকোনো সময় বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে সরকার দলীয় সংগঠন আওয়ামী লীগ। সরকার বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতে ইসলামীকে সরানোর নানা কৌশল নিয়ে ব্যর্থ হলেও সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদির সফরের পর বিষয়টি ফের সামনে আসে। সংলাপ বা আলোচনায় জামায়াতই এখন প্রধান অন্তরায়, এমনটিই মনে করছে আওয়ামী লীগ।আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ‘সরকার যেকোনো সময় যেকোনো গণতান্ত্রিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। বিএনপি জামায়াতে ইসলাম এবং জঙ্গিদের সঙ্গ ছাড়লেই আলোচনার পথ উন্মুক্ত হবে।’তবে বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দিন এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘সরকার বিএনপিকে দুর্বল করার জন্যই জামায়াত ছাড়ানোর কৌশল নিতে পারে।’মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকা রাখা জামায়াতে ইসলামীর ওপর ভর করে খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপি জোট দু’বার ক্ষমতায় এলেও শুরু থেকেই এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে। বিশেষ করে ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর জামায়াতকে নিয়ে নতুন করে বিপাকে পড়ে বিএনপি।ওই নির্বাচনে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মহাজোট সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করলে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যকার সম্পর্কে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের মুক্তির আন্দোলনে জামায়াত বিএনপিকে পাশে চাইলেও বিএনপি দৃশ্যত কোনো সাড়া দেয়নি। আর এ কারণেই বিরোধী জোটের বৃহৎ এ দুটি সংগঠনের মধ্য ফাটল দেখা দেয়।আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গ না পেয়ে ‘একলা চলো’ নীতি অবলম্বন করে জামায়াত ধ্বংসাত্বক কর্মকাণ্ডে মরিয়া হয়ে ওঠে। ২০১৩ সালের পর থেকে জামায়াত এককভাবে সর্বাত্মক শক্তি দেখালেও সম্প্রতি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনে জামায়াত এবং তার ছাত্র সংগঠন শিবির-ই সব চেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালায় বলে অভিযোগ ওঠে।সরকারের পতনের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে জামায়াতের কর্মকাণ্ড নিয়ে ২০ দলীয় জোট এবং জোটের বাইরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে বিএনপি। জামায়াত প্রসঙ্গে প্রশ্ন তোলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও।সম্প্রতি নেরন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে এসে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠককালেও জামায়াত-জঙ্গি প্রসঙ্গে কথা হয় বলে মিডিয়ায় প্রকাশ পায়। আর এতে করেই বিএনপি-জামায়াতের জোটগত সম্পর্কের বিষয়টি ফের আলোচনায় গুরুত্ব পায়। সরকার জামায়াত অজুহাতেই বিএনপিকে আলোচনার টেবিল থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারছে বলে অনেকে মনে করেন।অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জামায়াত অজুহাত আওয়ামী লীগের পুরনো। আওয়ামী লীগও জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করেছে। সুযোগ পাইলে এখনো করবে। তবুও আলোচনার জন্য জামায়াত যদি বাধা হয়ে থাকে তাহলে আমি মনে করি, গণতন্ত্রের স্বার্থে জামায়াতের নিজে থেকেই জোট ছাড়া উচিত।’আওয়াম লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ‘বিএনপি এখন গণতান্ত্রিক দল নয়। জামায়াতের আদর্শে পরিচালিত হয়ে বিএনপি মূলধারার রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছে। বিএনপির আমলেই দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান। গত তিন মাসের আন্দোলনে বিএনপি জামায়াত-শিবিরকে দিয়ে যে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, তা বিশ্বের কাছে পরিষ্কার। সুতরাং বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ছে এমনটি প্রমাণ করলেই আলোচনার পরিবেশ তৈরি হবে।’রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নীতি অনুসরণ বা তাদের পরামর্শে বিএনপি-জামায়াত জোট করেনি। সুতরাং আওয়ামী লীগের চাপে কাউকে জোট থেকে বাদ দেয়াও ঠিক হবে না। কাউকে জোটে রাখা বা সরে যাওয়া হতে হবে নিজেদের মতের ভিত্তিতে। জামায়াতের কাঠামো বাংলাদেশের যেকোনো গণতান্ত্রিক দলের থেকে উন্নততর। সুতরাং জামায়াত বুঝে-শুনে যদি জোট থেকে সরে যায়, তবেই ভালো।’জামায়াত জোট ছাড়লেই আলোচনা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেই প্রধানমন্ত্রী আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা সব সময় আলোচনায় বিশ্বাস করি। জামায়াত ছাড়লেই বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় আন্তরিক হবে সরকার।’এএসএস/বিএ
Advertisement