স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশনা মানছেন না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক-শিক্ষকরা! বর্তমানে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে বর্তমানে প্রায় তিন শতাধিক অতিরিক্ত চিকিৎসক-শিক্ষক ওএসডি সংযুক্তি হিসেবে এবং বিভিন্ন পদের বিপরীতে চাকরি করছেন! স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সর্বোচ্চ সংখ্যক অতিরিক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অবস্থান করছেন। তন্মধ্যে গাইনি বিভাগে সর্বোচ্চ সংখ্যক চিকিৎসক রয়েছেন। এছাড়া মিটফোর্ড, সোহরওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, বক্ষব্যাধি, ক্যান্সার এবং নতুন স্থাপিত জেনারেল হাসপাতালেও অতিরিক্ত সংখ্যক চিকিৎসক রয়েছেন।সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পারসোনাল-১ অধিশাখা থেকে উপসচিব এ কে এম ফজলুল হক ঢাকার সকল মেডিকেল কলেজ ও ইনস্টিটিউট প্রধানদের কাছে ওএসডি সংযুক্তি হিসেবে এবং বিভিন্ন পদের বিপরীতে অবস্থানরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক-শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।বিশেষ বাহকের মাধ্যমে আগামী সাতদিনের মধ্যে তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকায় অতিরিক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শিক্ষক থাকলেও ঢাকার বাইরে চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। শিক্ষক চিকিৎসকের অভাবে সেখানকার শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও রোগীদের চিকিৎসা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠককালে ঢাকায় অবস্থানরত অতিরিক্ত অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারি অধ্যাপকদের ঢাকার বাইরের সরকারি মেডিকেল কলেজে বদলির নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন।প্রায় দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তাদের প্রায় সকলেই এখনো বহাল তবিয়তে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করছেন!স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজমকে বলেন, সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও ওএসডি সংযুক্তি ও পদের বিপরীতে বর্তমানে রাজধানীতে কমপক্ষে ২৫০ থেকে ৩০০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক-শিক্ষক অবস্থান করছেন।নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুধুমাত্র মেডিকেল অফিসার (এমও) ছাড়া সিনিয়র চিকিৎসক/শিক্ষকদের বদলি, পদোন্নতি, ওএসডি, সংযুক্তি, পদের বিপরীতে পদায়নের এখতিয়ার শুধুমাত্র মন্ত্রণালয়ের।বিভিন্ন সময় মন্ত্রণালয় থেকে সিনিয়র চিকিৎসকদের ওএসডি করে সংযুক্তি ও পদের বিপরীতে নিয়োগের আদেশ দেয়া হলেও খোদ মন্ত্রণালয়ের কাছেই সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই!প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন সময় চিকিৎসকদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে চিকিৎসকদের গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিলেও চিকিৎসকরা যেকোনো মূল্যে ঢাকায় অবস্থান করতে চান।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিকিৎসকরা ঢাকার বাইরে পোস্টিং ঠেকাতে এবং ঢাকার বাইরে থেকে ওএসডি সংযুক্তি হিসেবে ও পদের বিপরীতে ঢাকায় পদায়ন পেতে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, সাংসদ, রাজনীতিবিদ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, বিচারকদের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে তদবির ও সুপারিশ করান। কখনো অনুরোধ আবার কখনো চাপের মুখে মন্ত্রণালয় ঢাকায় অতিরিক্ত চিকিৎসক পদায়ন দেন।মন্ত্রী, সচিবসহ শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক নির্দেশে বদলি, পদায়ন ও সংযুক্তি প্রদানের চিঠি প্রদান করায় কোনো তালিকা তারা রাখেন না। ফলে তাদের কাছে কত সংখ্যক অতিরিক্ত চিকিৎসক কোন প্রতিষ্ঠানে রয়েছে এর কোনো সঠিক হিসেব নেই।মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ২৯টি। অধিকাংশ মেডিকেল কলেজই ঢাকার বাইরে। রাজধানী ঢাকা ও তার আশেপাশের জেলা এবং বিভাগীয় শহরের হাতেগোনা কয়েকটি মেডিকেল কলেজ শিক্ষক থাকলেও অধিকাংশ সরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষকের অভাবে চিকিৎসা শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।সম্প্রতি ঢাকার বাইরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। সকলেই অভিযোগ করেন ঢাকায় চিকিৎসকের ছড়াছড়ি আর তাদের মেডিকেল কলেজে ন্যূনতম সংখ্যক শিক্ষক-চিকিৎসক নেই। এ কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং ইনস্টিটিউট প্রধানদের ডেকে দীর্ঘসময় বৈঠক করে ঢাকায় অতিরিক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শূন্যপদের বিপরীতে সমন্বয় করে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রায় দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও নির্দেশনাটি পালিত হয়নি।স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরীর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তালিকা চেয়ে মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠি হাতে পেয়েছেন।মোট কত সংখ্যক অতিরিক্ত চিকিৎসক অবস্থান করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তালিকা পেলে তবেই তা বলা যাবে। তবে শিক্ষক-চিকিৎসকের অভাবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শিক্ষা ও চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন।এমইউ/বিএ/আরএস
Advertisement