দেশজুড়ে

মিশনে যাওয়ার স্বপ্নই কাল হলো মনোয়ারের

আফ্রিকার মালিতে পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে নিহত ৩ বাংলাদেশির মধ্যে সেনা সদস্য মো. মনোয়ার হোসেনের (৩০) বরিশালের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। সন্তানহারা মা রওশন আরা এখন ছেলের শোকে দিশেহারা। অবুঝ দুই মেয়ে নিয়ে বাকরুদ্ধ স্ত্রী ইভা আক্তার।

Advertisement

বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের দুই ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে সবার বড় মনোয়ার হোসেন। ২০০৩ সালে সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে যোগ দেন তিনি। ২০০৮ সালে একই এলাকার মো. কবির হাওলাদারের মেয়ে ইভা আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয়। তাদের দুই মেয়ে নুসরাত জাহান ইলমুন (৭) এবং তাসমিন (দেড় বছর)। ছোট ভাই রবিউল ইসলাম সদ্য পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি পেয়ে প্রশিক্ষণরত। একমাত্র বোন জোহরা বেগম গৃহিণী।

শনিবার বিকেলেও মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা হয় তার স্ত্রী ইভা আক্তারের। বলেছিলেন তিনি ভালো আছেন। বড় মেয়ে নুশরাতকে বলেছিলেন ভালোভাবে লেখাপড়া করতে। অথচ রোববার বিকেল ৪টার দিকে খবর এল তার মৃত্যুর।

নিহত মনোয়ার হোসেনের শ্বশুর মো. কবির হাওলাদার জানান, চাকরি নেয়ার পর ১০ বছর আগে বরিশাল নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুতপুর এলাকায় এক খণ্ড জমি কিনেছিলেন মনোয়ার। টিনের ঘর তৈরি করে সেখানেই পরিবার-পরিজন থাকতো। বাবা না থাকায় বৃদ্ধা মাকেও নিজের বাসায় এনে রাখেন তিনি।

Advertisement

যশোর ক্যান্টনমেন্টে সেনা সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন মনোয়ার। সন্তানদের মানুষ করতে শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল মনোয়ারের। এরই মধ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে যাওয়ার সুযোগ জোটে তার কপালে। গত ৩০ মে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে যান মনোয়ার। সেখানে ভালোই কাটছিল তার দিন। প্রায় দিনই স্ত্রী, সন্তান, মাসহ নিকটাত্মিয়দের কাছে ফোনে খোঁজ খবর নিতেন তিনি। রোববার বিকেলে তার মৃত্যুর খবরে এলামেলো হয়ে যায় সব। শোকে ভেঙে পড়ে পরিবারের সবাই।

দ্রুত সময়ের মধ্যে মনোয়ারের মৃতদেহ ফেরত পাওয়া এবং তার বিধবা স্ত্রী, দুই এতিম সন্তান এবং সন্তানহারা মায়ের দায়িত্ব সরকারকে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।

রোববার সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মালিতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ হয়। এতে শান্তিরক্ষীরা সফলভাবে তাদের প্রতিহত করে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ দায়িত্ব পালন শেষে ক্যাম্পে ফেরার পথে আবারও তারা সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। সাহসিকতা ও সফলতার সঙ্গে তারা পুনরায় সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করেন।

তবে সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিদ্রোহীদের পুঁতে রাখা ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইজ (আইইডি) বিস্ফোরণে সেনা সদস্য মো. মনোয়ার হোসেনসহ তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত এবং চারজন আহত হন।

Advertisement

সাইফ আমীন/এফএ/জেআইএম