রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রীর সেফ জোন প্রস্তাব ‘ষড়যন্ত্রের' অংশ: বিএনপি

রাখাইন থেকে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে জাতিসংঘে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘সেফ জোন’ বা নিরাপদ এলাকার প্রস্তাবকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছে বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব স্পষ্ট নয় দাবি করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে দলটি।

Advertisement

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত ‘মিয়ানমারে গণহত্যা ও বাংলাদেশের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কথা জানান।

বিএনপি আয়োজিত এ গোলটেবিল বৈঠকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দেশি-বিদেশি কূটনৈতিক এবং বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরা অংশ নেন।

বৈঠকে খন্দকার মোশাররফ রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। এগুলো হলো- জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ঐক্যের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের সসম্মানে ফিরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি তাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

Advertisement

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটে বিএনপির জাতীয় ঐক্যের আহ্বানকে প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাখ্যান করা দুখঃজনক। এই সংকটের স্থায়ী সমাধান করতে হলে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। এজন্য জাতীয় ঐক্যের দরকার। বিএনপি এই বিষয়ে অভিজ্ঞ। কারণ জিয়াউর রহমান (৭৮ সালে) ও খালেদা জিয়ার সময়েও (২০০৫ সালে) রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। তখন তাদের ফেরত পাঠিয়ে নাগরিকত্ব দিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করা হয়েছিল। সেই দায়বদ্ধতা থেকে বিএনপি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে।’

জাতীয় ঐক্যের ডাকে সাড়া না দিয়ে ক্ষমতাসীনরা দলীয় রাজনীতি করতে চাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকায় আন্তর্জাতিক মহলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা মিয়ানমারে গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদ গুরুত্ব দিয়ে এখনও রেজুলেশন নিতে পারেনি। আশা করি, তারা এমন পদক্ষেপ নেবে যাতে মানবিক বিপর্যয় সমাধান হয়।’

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মিয়ানমার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে গণহত্যা চালাচ্ছে। সমগ্র বিশ্ব সোচ্চার হলেও বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তারা এখনও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছে। আজকের সেমিনারের মূল বিষয় হচ্ছে জনসমর্থন তৈরি করা।’

Advertisement

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই ধরনের জাতীয় ইস্যুতে সরকার জাতীয় ও বিশ্বকে একত্রিত করলেও এখন উল্টো আমাদের, সরকারকে একত্রিত করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার এখন কোন অবস্থানে আছে সেটি পরিষ্কার নয়। লোক দেখানোর কারণে সরকার অবস্থান নিয়েছে।’

‘সেফ জোন’ প্রস্তাবের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সেফ জোন কোথাও কখনও কাজ করে না। কোনো দেশেই কাজ করেনি।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত-চীন-রাশিয়ার বিতর্কিত ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত করে খসরু বলেন, ‘এই অঞ্চলের যারা বড় শক্তি তারা এক্সক্লুসিভ জাতির পক্ষে কাজ করছেন। যদি ক্ষমতাধররা এই কাজ করেন তবে ভবিষ্যতে ভয়াবহ অবস্থা হবে। এটি শুধু মিয়ানমারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।’

মিয়ানমারের সঙ্গে হওয়া আগের চুক্তিগুলো ভিত্তি ধরে কাজ শুরু করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপি নেতা ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘১৯৭৮, ৯৩ ও ২০০৫ সালেও এই সংকট দেখেছি। আন্তর্জাতিক চাপ দিয়ে বার্মিজ সরকারকে বোঝাতে হবে রোহিঙ্গারা যতই ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা হোক না কেন তাদের নির্মূল করা যাবে না। এটা করা গেলে অনেকাংশে সংকট কমে যাবে। সেফ জোনের কথা বলে ছাড় দিলে চলবে না।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে দলের নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম খান, রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আবদুস সালাম, এম মোরশেদ খান, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, নিতাই রায় চৌধুরী, সুকোমল বড়ুয়া, মুজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল প্রমুখ। সেমিনার সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ।

সেমিনারে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, জাপান, কুয়েত, ইরান, ফ্রান্স, পাকিস্তান, সুইজারল্যান্ড, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও নেদারল্যান্ডসহ মোট ১২টি দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কূটনীতিকরা অংশ নেন। তবে এতে চীন, ভারত এবং রাশিয়ার কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।

সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত ইফতেখারুল করিম, ব্যারিস্টার নওশাদ জামিল ও এম মোর্শেদ খান।

সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাহবুব উল্লাহ, সাংবাদিক কবি আবদুল হাই শিকদার, এম আবদুল্লাহ, এস এম হাসান তালুকদার প্রমুখ অংশ নেন।

এমএম/এসআর/আইআই