চলছে ‘লাভেলো মিস ওয়ার্ল্ড’ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা। ২৫ হাজার প্রতিযোগী থেকে বর্তমানে সেরা ১০ জন লড়ছে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব লড়াইয়ে। এর মধ্য থেকে বিজয়ী একজন যাবেন ৬৭তম বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে। এটি আয়োজন করছে অন্তর শোবিজ ও অমিকন এন্টারটেইনমেন্ট।
Advertisement
সুন্দরী অন্বেষণের এ আয়োজনে উপস্থাপনা করছেন ইন্ডিয়ান তারকা ‘মিস কলকাতা’ শিনা চৌহান। বর্তমানে তিনি ঢাকায়ই আছেন। উঠেছেন রাজধানীর একটি হোটেলে। এর আগে একাধিকবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের উপস্থাপনা করতে এসেছেন শিনা। এছাড়া এদেশে ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ নামের একটি ছবিতেও অভিনয় করেছেন।
‘মিস ওয়ার্ল্ড’ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় উপস্থাপনার অভিজ্ঞতা ও ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় জাগো নিউজের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। আলাপের চুম্বন অংশ তুলে ধরা হলো...
জাগো নিউজ : কতদিন পর ঢাকা এলেন?শিনা : তা ঠিক বলতে পারব না। তবে আমার প্রতি বছরই দু-একবার এখানে আসা হয়। সেজন্য বাংলাদেশকে আমার সেকেন্ড হোম মনে হয়। আর এখানকার মানুষের আতিথেয়তায় আমি এত মুগ্ধ যে সেটা বলে বোঝাতে পারব না।
Advertisement
জাগো নিউজ : ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের মেয়েরা প্রথমবার অংশ নিতে যাচ্ছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? শিনা : বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার একটি বড় প্ল্যাটফর্ম এটি। তাছাড়া এই প্রথমবার এত বড় পরিসরে এদেশের মেয়েরা প্রতিযোগিতাটিতে অংশ নিতে যাচ্ছে। এটা তো হান্ড্রেড পারসেন্ট পজেটিভ একটা ব্যাপার বলে আমি মনে করি। এই প্রতিযোগিতাটি শুধু সুন্দরী অন্বেষণের নয়। ‘বিউটি ইউথ দ্য পারপাস’ মানে এর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা হবে বলে আমি মনে করি। আর এটা আমার পারপাসের সঙ্গে খুব ভালো যায়।
জাগো নিউজ : কেন? শিনা : আমি মিস কলকাতা ছিলাম। মিস ইউনিভার্স, সুস্মিতা সেনের সঙ্গে এক মাস গ্রুমিং করেছি। আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সব পরামর্শ পেয়েছি তার কাছ থেকে। তিনি সবসময় আমাকে বলতেন, নারীদের আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে হয়। আত্মবিশ্বাস রাখবে। তার কাছ থেকে যেগুলো শিখেছি তা এখনও প্রয়োগ করি। এরপর দর্শকদের মাঝ থেকে সেরা ক্রেস্ট পেয়েছিলাম। ওই প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়েই আজকে আমি এই স্টেজটা পেয়েছি।
জাগো নিউজ : মিস ওয়ার্ল্ডের উদ্দেশ্যগুলো কী কী বলে আপনার মনে হয়?শিনা : ভালো প্রশ্ন। একটা বিষয় পরিষ্কার করে বলি। ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ কিন্তু শুধুমাত্র বিশ্ব সুন্দরী খুঁজে পাওয়ার বিষয় নয়। এখানে সোশ্যাল ওয়ার্ক জড়িত। অনেকেই হয়তো ভাবছে এখানে মেয়েদের গ্ল্যামার্স বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু তা নয়, মিস ওয়ার্ল্ডের প্রধান থিম হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারী হয়ে সমাজটাকে আপনি কীভাবে ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন করতে পারবেন। এটাই মূল লক্ষ্য থাকে।
জাগো নিউজ : বাংলাদেশের মিস ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন?শিনা : আমার সঙ্গে যখন এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় তখন আমি শুনেই ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। কারণ আগেই বলেছি এর সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়ন জড়িত, বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড জড়িত আছে। তাই আমি এই অফারকে ওয়েলকাম জানিয়েছি। অন্তর শোবিজ এবং অমিকন এন্টারটেইনমেইন্ট এটির মূল উদ্যোক্তা। অন্তর শোবিজের চেয়ারম্যান স্বপন চৌধুরী, অমিকন এন্টারটেইনমেইন্টের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান, লাভোলো’র দাতো একরাম তারাই আমাকে এখানে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
Advertisement
জাগো নিউজ : আপনি তো ইন্ডিয়ার মেয়েদের প্রতিযোগিতা দেখেছেন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে ১০ জন মেয়ে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার জন্য লড়ছে, তাদের মধ্যে সম্ভাবনা কেমন দেখছেন? শিনা : আমি দেখেছি ১০টি মেয়ের মধ্যে পাচ-ছয়জন মেয়ে খুব পরিশ্রম করছে। তারা খুব ডেডিকেট। তারা এখানে যেভাবে গ্রুমিং করছে আমার মনে হচ্ছে তাদের মধ্যে দু-একজন বিশ্বমঞ্চে ভালো করবে। এখান থেকে বেরিয়ে সমাজে নারীদের জন্য বিভিন্ন কাজ করবে এ প্রত্যাশা আমার। তবে সবার জন্যই আমার শুভকামনা থাকল।
জাগো নিউজ : বিশ্বমঞ্চে যাওয়ার জন্য মেয়েদের কোন যোগ্যতাকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে?শিনা : এখানে আসলে অনেকগুলো যোগ্যতাকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। নাচ, এক্সপ্রেশন, হাঁটা, চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের প্রতি মানসিকতার দিকও বিবেচনা করা হচ্ছে। নারীরা অসহায় নয়, তাদের যদি সুযোগ দেয়া হয় তাহলে তারা অনেক কিছু অর্জন করে দেখাতে পারে সেই আত্মবিশ্বাসটাও দেখা হয়। এগুলোই প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে বের করে আনা হচ্ছে।
জাগো নিউজ : গ্র্যান্ড ফিনালেতে কি কি চমক থাকবে?শিনা : ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানটি এনটিভিতে লাইভ দেখানো হবে বলে শুনেছি। সেখানে আমি নিজে মঞ্চে কিছু চমক রাখব। আমার সাথে এদেশের সবচেয়ে বড় কয়েকজন তারকাও উপস্থিত থাকবেন। এর মধ্যে অনেকেই আইকন হিসেবে থাকবেন। তারাও অনেক ধরনের চমক দেবেন। আর প্রতিযোগীদের চমক তো থাকছেই। ভরপুর একটি অনুষ্ঠান হবে বলে আশা রাখছি।
জাগো নিউজ : আপনি নিজেও তো জাতিসংঘের ‘ইয়ুথ ফর হিউম্যান রাইটস’ নিয়ে কাজ করছেন... শিনা : আমি একজন পারফর্মার। কাজের পাশাপাশি আমাদের উচিত সমাজের জন্য কিছু অবদান রাখা। তাই মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছি। নিজেদের অধিকার নিশ্চিত হওয়া সম্পর্কে মানুষকে জানাতে চাই। আমরা যদি আমাদের অধিকার সম্পর্কে জানি তাহলেই কিন্তু তা আদায় করতে উদ্বুদ্ধ হবো। তাই শিক্ষা, সমতাসহ অধিকারের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করি। যেমন মানবপাচার, শিশুশ্রম, নারী নির্যাতন বন্ধ হওয়া অনেক জরুরি। এছাড়া শিক্ষা বিস্তার হলে সমাজের উন্নয়ন ঘটে। সেই নিয়েও কাজ করছি।
জাগো নিউজ : এদেশের ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ ছবিতে কাজ করেছেন। এই ছবিটিকে নিজের ক্যারিয়ারে কীভাবে মূল্যায়ণ করেন?শিনা : এ ছবিতে কাজের সুবাদে বাংলাদেশের দর্শকদের সঙ্গে আমার বন্ধনটা আরও শক্ত হয়েছে। আর একটি ব্যাপার হলো ‘পিঁপড়াবিদ্যা’র সুবাদেই কলকাতার দুটি বাংলা ছবিতে ডাক পেয়েছি। একটির নাম ‘জাস্টিস’। ‘কৃষ্ণগহ্বর’ নামে আরেকটা ছবিতে অভিনয় করেছি বিজ্ঞানীর ভূমিকায়। এখানে আমার সহশিল্পী কৌশিক গাঙ্গুলী ও শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। এর কাহিনি খুব সুন্দর। আমরা অর্ধেক কাজ করেছি। বাকি চিত্রায়ন শুরু হবে ডিসেম্বরে। এ ছবির পরিচালক অয়ন চ্যাটার্জি। আগামী বছর ছবিটি মুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে।
জাগো নিউজ : আর কী কী কাজ করছেন?শিনা : কিছুদিনের মধ্যেই কলকাতায় নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে আমার একটা ডিজিটাল ছবি মুক্তি পেতে যাচ্ছে। কিছু ওয়েব সিরিজ, শর্টফিল্ম করেছি। আমেরিকায় কিছু শো করেছি। বাংলাদেশ থেকে ফিরে দিল্লিতে গিয়ে কিছু শর্টফিল্মে কাজ করব।
জাগো নিউজ : ঢাকার ছবিতে কাজ করতে ইচ্ছা হয় না?শিনা : হ্যাঁ অবশ্যই। এখন তো বেশি জয়েন্ট ভেঞ্চারে ছবি নির্মিত হচ্ছে। এদেশের জাজ ও কলকাতার এসকে বেশকিছু ছবি করছে। ভেঙ্কটেশও এখানে লগ্নি করতে চায় বলে শুনেছি। আমারও খুব ইচ্ছে যৌথ প্রযোজনার ছবিতে কাজ করবো। তবে গল্প, চরিত্র পছন্দ হতে হবে। আর ঢাকার একক ছবির অফার ‘পিঁপড়াবিদ্যা’র পর আর পাইনি। যদি পাই, তখন ভেবে দেখব। আমি মনে করি এদেশে অনেকে ভালো নির্মাতা আছেন।
জাগো নিউজ : নির্মাণে আসার ইচ্ছা আছে?শিনা : একদম না। নির্মাতা হওয়ার ইচ্ছা আমার কখনো আসে না। তবে প্রযোজনা আমাকে টানে। হিন্দি ছবি কিংবা কলকাতার ছবি প্রযোজনায় আসতে পারি। তবে সেটা আরও পরে।
এনই/এলএ