জাতীয়

বৃষ্টি ছাড়াই রাস্তায় ‘হাঁটুপানি’

ছবির দৃশ্যটি কোনো খাল, পুকুর বা ছোট জলাশয়ের নয়। এটি রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত সড়ক ‘ডিআইটি সড়ক’র হাজীপাড়ার চিত্র। বাড্ডার দিক থেকে মালিবাগ, কাকরাইল, পল্টন, মতিঝিল, খিলগাঁও, মানিকনগর ও যাত্রাবাড়ী যেতে হলে এ রাস্তাটিই ব্যবহার করতে হয় পরিবহন চালকদের। প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে শত শত পরিবহন যাতায়াত করে।

Advertisement

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হওয়ার পরও মাসের পর মাস এটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। বৃষ্টি না থাকলেও রাস্তাজুড়ে জমে রয়েছে নর্দমার পচা পানি। সেই সঙ্গে খানাখন্দ তো আছেই। বাংলাদেশ টেলিভিন ভবন পার হওয়ার পর আবুল হোটেল পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তাই যেন একটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

রোববার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির কোনো চিহ্ন না থাকলেও রামপুরা-মালিবাগ রুটের হাজীপাড়ায় রাস্তায় পানি জমে আছে। একটি স্থানে কয়েক টুকরো বাঁশ ও কাঠ উঁচু করে রাখা আছে, যা দেখে বোঝা যায় এটি একটি উন্মুক্ত ড্রেনের মুখ। কোনো সচেতন নাগরিক হয়তো পরিবহন চালকদের সতর্ক করতেই এই বাঁশ ও কাঠের টুকরোগুলো রেখে দিয়েছেন।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরই দেখা গেল, একটি যাত্রীবাহী বাস রাস্তাটির যে স্থানে জলাশয়ের মতো পরিণত হয়েছে, সেখানে এসে থেমে গেল। এরপর আরেকটি যাত্রীবাহী বাস এসে থামল তার পাশে। প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে দুটি বাস ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকল।

Advertisement

এরপর বাস দুটি সামনে এগোতেই ঘটল বিপত্তি। ‘স্বাধীন’ নামের একটি পরিবহন কোম্পানির ওই বাসটি রাস্তায়ই আটকে গেল। রাস্তার গর্তে চাকা আটকে বাসটি আর সামনে এগোতে পারছে না। চালক প্রায় আধাঘণ্টা চেষ্টা করে রাস্তার গর্তে আটকে পড়া চাকাটি তুলতে সক্ষম হন।

ওই বাসচালকের সঙ্গে এ সময় কথা বলতে গেলে তিনি বেশ বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘ভাই কী বলব, বলেন? সবই তো দেখতে পাচ্ছেন। বৃষ্টি নাই, তারপরও রাস্তায় হাঁটুপানি। আর যেখানে পানি নাই, রাস্তার সেই অংশও দেখুন। এমন রাস্তা দিয়ে কি গাড়ি চালানো যায়। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কা নিয়েই এ রাস্তায় গাড়ি চালাই। সহজ ভাষায় বললে বলতে হয় এটি কোনো রাস্তা না, এটি একটি মৃত্যুফাঁদ।’

এরপর কথা হয় সুপ্রভাত পরিবহনের বাসচালক মো. আলী হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলন, রোজার ঈদের আগে থেকেই এ রাস্তার অবস্থা খারাপ। আর কিছুদিন আগে হওয়া বৃষ্টির পর রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এ রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। বিশেষ করে রামপুরা কাঁচাবাজার থেকে হাজীপাড়া পর্যন্ত রাস্তার যে অবস্থা তাতে আমরাও সবসময় ভয়ে থাকি।

অপরদিকে দেখা যায়, হাজীপাড়ায় রাস্তায় পানি জমে যাওয়া এবং খানাখন্দের কারণে পরিবহন খুবই ধীরগতিতে চলছে। ফলে অঞ্চলটিতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। হাজীপাড়া থেকে সৃষ্টি হওয়া যানজটে আটকে পড়া পরিবহনের লম্বা সারি বেলা ১১টার দিকে প্রায় মধ্যবাড্ডা পর্যন্ত চলে আসে।

Advertisement

রামপুরা টেলিভিন ভবনের সামনে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কথা হয় সাবিনা আক্তার নামে এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি জানান, পল্টন যাওয়ার জন্য বাড্ডা থেকে সকাল ৯টার দিকে বাসে উঠেছেন। দেড় ঘণ্টায় মধ্যবাড্ডা থেকে আসতে পেরেছেন টেলিভিশন ভবন পর্যন্ত।

কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলন, ১০টা থেকে অফিস শুরু। অথচ টেলিভিশন ভবনের সামনে আসতেই সাড়ে ১০টা বেজে গেছে। জানি না কখন অফিসে গিয়ে পৌঁছাতে পারব। গাড়ি তো দেখি চলেই না।

এ সময় পাশ থেকে মরিয়ম আক্তার নামে আরেক যাত্রী বলেন, ভাই এ রাস্তায় সাধারণত সবসময় যানজট থাকে। বাড্ডা থেকে বাসে উঠলে মালিবাগ পৌঁছাতে সাধারণত ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। কিন্তু আজকের যাটজট অন্যদিনের থেকে বেশি। গাড়ি যেভাবে এগোচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে মালিবাগ যেতেই পাঁচ ঘণ্টা লাগবে।

হাজীপাড়ায় কাপড়ের ব্যবসা করেন মো. আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় খানাখন্দ রয়েছে অনেক দিন ধরেই। বৃষ্টি হলেই এই রাস্তায় হাঁটুপানি জমে যায়। তবে গত কয়েকদিন রাস্তায় কোনো পানি ছিল না। এমনকি গতকাল (শনিবার) যখন দোকান বন্ধ করেছি, তখনো রাস্তায় কোনো পানি দেখিনি। কিন্তু আজ সকালে দোকানে এসেই দেখি রাস্তায় হাঁটুপানি জমে রয়েছে। এর সবই ড্রেনের পানি।’

এমএএস/জেডএ/আরআইপি