বিনোদন

‘আজকাল চ্যানেল ব্যবসায় নোংরা রাজনীতি দেখতে কষ্ট লাগে’

এশিয়ায় তখনও স্যাটেলাইট চ্যানেলের ভাবনা তেমন করে জনপ্রিয়তা পায়নি। পাশের দেশ ভারতে দু-একটি চ্যানেল সবেমাত্র যাত্রা করেছিল। জিটিভি, এটিএন মিউজিক ছিল তাদের অন্যতম। ওই সময় বাংলাদেশের একমাত্র চ্যানেল বিটিভি। সেটাও পাড়া-মহল্লায় দু-তিনটার বেশি নয়। তেমনি এক সময়ে দুর্দান্ত দূরদর্শীসম্পন্ন মানুষটি স্যাটেলাইট চ্যানেল প্রতিষ্ঠার ঝুঁকিতে এগিয়ে এলেন। গড়ে তুললেন দেশের প্রথম স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলা। বেসরকারি টিভিতে বিজ্ঞাপন- এমন ভাবনাই ছিল না কারও। তাই বিজ্ঞাপনহীন চ্যানেল চালাতে হতো। মাসের পর মাস কোটি টাকার লোকসান গুণে তিনি মানুষকে বিনোদন দেয়ার চেষ্টা করেন। মূলত তারই ছত্রচ্ছায়ায়, অনুপ্রেরণায় আজকের স্যাটেলাইট চ্যানেলের এ জয়জয়কার। তিনি হলেন ড. মাহফুজুর রহমান। এক জীবনে ব্যবসা, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রচুর অবদান তিনি রেখেছেন, যা তাকে নন্দিত করেছে।

Advertisement

সর্বশেষ গেল ঈদে গান করে আলোচনায় এসেছেন তিনি। সেই প্রসঙ্গে নানা কথা জানতে ড. মাহফুজুর রহমানের মুখোমুখি হয়েছিলেন জাগো নিউজের বিনোদন বিভাগ প্রধান লিমন আহমেদ। তিনি জানান, বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ব্যবসার গোড়াপত্তন, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ, নিজের ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের অনেক গল্প। সেগুলো জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হবে কয়েক পর্বে। আজ থাকল দ্বিতীয় পর্ব

জাগো নিউজ : গল্প-আলাপে জানলাম আপনার পূর্বপুরুষরা আমদানি-রফতানি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেদিকে না হেঁটে আপনি টেলিভিশন চ্যানেলের ব্যবসায় কেমন করে এলেন?

ড. মাহফুজুর রহমান : আমিও পূর্বপুরুষদের মতোই আমদানি-রফতানি ব্যবসায় জড়িত ছিলাম। ’৭৫ সালের দিকে আমি ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হই রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। আমার ইচ্ছা ছিল সাইন্স নিয়ে পড়ব, ডাক্তার হবো। এসএসসি ও এইচএসসিতে আমি বিজ্ঞানেরই ছাত্র ছিলাম। কিন্তু সেই সুযোগ হয়নি। অবশেষে পলিটিক্যাল সাইন্স পড়লাম। কারণ, এ বিষয়টার শেষেও সাইন্স শব্দটি ছিল। তো দেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময় ব্যবসার জন্য উৎসাহমূলক অনেক সুযোগ ছিল। আমিও উৎসাহিত হয়ে ছাত্রাবস্থাতেই পোশাকের ব্যবসায় নেমে গেলাম। গার্মেন্ট (তৈরি পোশাক রফতানি) ব্যবসা করতাম। সেই ব্যবসা করার সূত্রেই আমার চ্যানেল ব্যবসায় আসা

Advertisement

জাগো নিউজ : গার্মেন্ট ব্যবসার সঙ্গে টিভি ব্যবসার কী করে সম্পর্ক থাকতে পারে? বিস্তারিত শুনতে চাই..

ড. মাহফুজুর রহমান : আসলে দেশ তখন পোশাক শিল্পে আজকের মতো এতো উন্নত ছিল না। এখনকার মতো ওই সময় বাংলাদেশে ভালো কাপড় তৈরি হতো না। উন্নতমানের কাপড় আমরা এখানে পেতাম না। সে কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের কাপড় কিনতে হতো। আমাকে প্রতি মাসে কাপড় কিনতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে হয়েছে। নিয়মিতই যেতাম বোম্বে (ভারতের মুম্বাই)। ১৯৯৪-১৯৯৫ সালের কথা। সেখানে কাপড় আমদানির জন্য যে ব্যক্তি আমাকে হেল্প করতেন, তিনি একদিন আমাকে বললেন, ‘চলো, তোমাকে জিটিভির অফিসে নিয়ে যাই।’ তার সঙ্গে সেখানে যাই। আমি অভিভূত হই সবকিছু দেখে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কী চমৎকার টিভি ব্যবসা চালাচ্ছে তারা। তখন ভারতে মাত্র তিন-চারটা টিভি চ্যানেল ছিল। এটিএন মিউজিক নামেও একটি চ্যানেল ছিল। মাদ্রাজে (বর্তমান চেন্নাই) ছিল সানটিভি। জিটিভি ঘুরে দেখে ইচ্ছা হলো যদি আমার দেশেও একটা চ্যানেল খুলতে পারতাম! তখন তো আমাদের বিনোদনের ওই একটাই বাক্স- সেটা বিটিভি। নতুন একটি চ্যানেল আনতে পারলে বৈচিত্র্যময় কিছু বিনোদন দর্শককে দেখানো যেত। আর মানুষ গ্রহণ করলে ব্যবসাও ভালো হবে।

তবে সেই পরিস্থিতি তখন আমাদের দেশে ছিল না। তাই কিছুটা মন খারাপ করেই ভাবতে লাগলাম কী করা যেতে পারে। তৈরি পোশাক রফতানির জন্য প্রায়ই আমাকে ইউরোপ ও আমেরিকায় যেতে হতো। সেসব দেশেও দেখতাম, সেখানকার টিভি চ্যানেলগুলো তাদের নিজস্ব ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। সে ভাষা আমি বুঝতাম না। কাজ শেষে হোটেলে গিয়ে ঘুমানো ছাড়া কিছুই করার থাকত না। বিদেশি ভাষার টিভি কি দেখা যায়? তখন আমি চিন্তা করলাম, আমরা যদি বাংলা ভাষায় একটা চ্যানেল করতে পারি এবং সেটা যদি পৃথিবীর সব জায়গায় নিয়ে যেতে পারি, তাহলে তো আমরাও বিদেশে বসে বাংলা টিভি দেখতে পারব। দেশের বাইরে আসা মানুষগুলো বিদেশে বসেও দেশের সবকিছু জানতে পারবে। এখানে আসলে একটা দেশপ্রেম কাজ করল মনের ভেতর।

সেই ভাবনা নিয়েই আমার ওই বোম্বের বন্ধুটিকে নিয়ে পরপর কয়েকবার বোম্বেতে জিটিভির অফিসে গেলাম। উদ্দেশ্য স্যাটেলাইট টিভি কীভাবে চালাতে হয় সে বিষয়ে ধারণা নেয়া। কারণ এ বিষয়ে আমার বা এই দেশের কারও কোনো জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা ছিল না। জিটিভির অফিসে গিয়ে আমি প্রস্তাব করলাম যে তাদের এখানে আমি অনুষ্ঠান চালাতে চাই। জিটিভি আমার প্রস্তাবে প্রথমে রাজি হলো। কিন্তু কিছুদিন পরে তারা আমাকে জানিয়ে দিল, তাদের ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাইরের অনুষ্ঠান জিটিভিতে চালাতে দেয়া হবে না। চ্যানেল করার স্বপ্নটি আমার সেখানে নতুন করে হোচট খেল।

Advertisement

তবে আমার আরেক ব্যবসায়ী বন্ধু একদিন আমাকে বোম্বের ‘এটিএন মিউজিক’ চ্যানেল অফিসে নিয়ে গেল। সিদ্ধার্থ শ্রীবাস্তব নামের এক ভদ্রলোক তখন সেই চ্যানেলটা চালাতেন। আমরা তাকে এক ঘণ্টার প্যাকেজ অনুষ্ঠান চালানোর প্রস্তাব দেই। তারা অনেক টাকা চেয়েছিল। শুরুতে ওই এক ঘণ্টার অনুষ্ঠান চালানোর জন্য আমাকে এক লাখ ডলার দিতে হয়েছিল। আমিও রাজি হয়েছিলাম স্রেফ নিজে এ ব্যবসায় নামতে চাই বলে। ঠিক করা হলো যে, এটিএন মিউজিক চ্যানেলে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টা একটি অনুষ্ঠান করবে বাংলা ভাষায়।

তখন এক ঘণ্টার অনুষ্ঠানে এক লাখ ডলার খরচ করে সেই অর্থ তুলে আনা সম্ভব ছিল না। তারপরও দেশপ্রেম থেকে বাংলা ভাষায় অনুষ্ঠান নির্মাণ করেছিলাম। অভিজ্ঞতাও হয়েছিল। আমরা বাংলাদেশ থেকে অনুষ্ঠান নির্মাণ করে সেটাকে বেটা ক্যাসেট করে হংকংয়ে পাঠাতাম। বোম্বেতে তারা ওই অনুষ্ঠান প্রচার করত না, হংকং থেকে সম্প্রচার করত।

জাগো নিউজ : কী ধরনের অনুষ্ঠান নির্মাণ করতেন আপনি?

ড. মাহফুজুর রহমান : বাংলা নাটক ও গানের অনুষ্ঠান নির্মাণ করতাম। চলচ্চিত্রের গান চালাতাম। তবে বেশি জনপ্রিয়তা পেত নাটকগুলো। আমাদের তো অভিজ্ঞতা ছিল না। বিটিভির কিছু অভিজ্ঞ লোকদের নিয়ে অনুষ্ঠান নির্মাণ করতাম।

জাগো নিউজ : সেই এক ঘণ্টার অনুষ্ঠান থেকে এটিএন বাংলার শুরুটা কীভাবে?

ড. মাহফুজুর রহমান : এনটিভি মিউজিক থেকেই আমি এটিএন নামটি নিয়েছিলাম। বলা যায়, আমার মনের ইচ্ছেটাকে পূরণ করতে এগিয়ে এসেছিল ওই চ্যানেলটি। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা বা ভালোবাসার জায়গা থেকেই আমি নিজের চ্যানেলের নাম দিয়েছিলাম এটিএন। পাশাপাশি বাংলাদেশে ‘এটিএন’ নামটি দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় ছিল। তাই ওই নামটিতেই চ্যানেল চালানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।

আর নিজের চ্যানেল করার ধাপটি শুরু হলো যখন ভারতের মোদি গ্রুপ মামলা করে এটিএন মিউজিক চ্যানেল বন্ধ করে দেয়। মোদি গ্রুপের সঙ্গে এটিএন মিউজিক চ্যানেলের লেনদেন ছিল, তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। এরপর চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যায়। আমরা বিপাকে পরে যাই। এক ঘণ্টা হলেও অনুষ্ঠানটি তো জনপ্রিয়তা পেয়েছিল! সেই অনুষ্ঠান প্রচার না করতে পারার জন্য খুব কষ্ট পেলাম।

প্রায় সময়ই আমি সিঙ্গাপুরের প্রযুক্তি মেলায় যেতাম। তেমনি একবার মেলায় গিয়ে সেখানে থাইল্যান্ডের থাইকম স্যাটেলাইটের লোকজনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। মালয়েশিয়াসহ অন্য আরও কয়েকটি দেশের স্যাটেলাইট কোম্পানির লোকজনও সেখানে ছিল। তারা আমার চ্যানেল প্রতিষ্ঠার আগ্রহের ব্যাপারে জানতে পেরে পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে এলো। থাইকম স্যাটেলাইটের পক্ষ থেকে আমাকে একটা প্রস্তাবও দেয়া হয়। তারা বলেছিল, ‘তোমরা যদি আমাদের ২৪ ঘণ্টা নাও, তাহলে তোমাদের স্পেশাল রেট ও ফ্যাসিলিটি দেব। আমাদের থাইল্যান্ডের টেলিপোর্টের মাধ্যমে বাংলাদেশে অনুষ্ঠান চালানোর ব্যবস্থা করে দেব। আমরা স্টুডিও তৈরির ব্যবস্থাও করে দেব।’ সবকিছু একসঙ্গে পাব সেই সুযোগ কাজে লাগাতে রাজি হই এবং তাদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করি।

টিভি প্রচারের লক্ষ্যে থাইল্যান্ডে একটি স্টুডিও স্থাপন করি। বাংলাদেশ থেকেও কয়েকজনকে থাইল্যান্ডে পাঠাই। বাংলাদেশে অনুষ্ঠান নির্মাণ করে সেটার বেটা ক্যাসেট ডিএইচএল কুরিয়ার সার্ভিসে থাইল্যান্ডে পাঠাতে হতো। সোমবারের অনুষ্ঠান আমরা তিন-চারদিন আগে, অর্থাৎ বৃহস্পতি বা শুক্রবারের মধ্যে পাঠিয়ে দিতাম। এভাবেই চলতে লাগল। বাংলাদেশসহ আরও বেশ কিছু দেশে তখন আমাদের টেলিভিশন সম্প্রচারিত হচ্ছে। আস্তে আস্তে বাড়ছে জনপ্রিয়তা। বিটিভি থেকে অনেকেই আমাদের এখানে অনুষ্ঠান নির্মাণে নিয়োজিত ছিলেন।

এটিএন বাংলার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা অনুষ্ঠানগুলো কিনতাম। তখন চ্যানেল আইয়ের ফরিদুর রেজা সাগর তাদের ইমপ্রেস টেলিফিল্ম থেকে নাটক, সিনেমা ও অনুষ্ঠান নির্মাণ করতেন। প্রতিদিন দুই ঘণ্টার জন্য অনুষ্ঠান তৈরির দায়িত্ব দিয়েছিলাম ইমপ্রেস টেলিফিল্মকে। দুই বছর অনুষ্ঠান চালানোর পর তার নিজেরাই চ্যানেল আবেদন করে সরকারের কাছে, পেয়েও যায়। বলা যায়, আমার এটিএন বাংলাতে প্রোগ্রাম চালানোর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেই ইমপ্রেস স্যাটেলাইট ব্যবসায় নামে, চ্যানেল আই প্রতিষ্ঠা করেছিল। অতীত ভুলে গেলে চলে না। এতো বড় টিভি মিডিয়া, এখানে সবাইকেই সমানভাবে কাজ করার পরিবেশ ও সুযোগ দেয়া উচিত। আমি কখনো কাউকে ছোট করে দেখিনি। যে যখন যা জানতে এসেছে আমি নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। মন থেকে চেয়েছি ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার জয় হোক। কারণ, বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ নেই। দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখা, মানুষকে বিনোদন দেয়া, দেশপ্রেমের তাগিদ থেকেই চ্যানেল ব্যবসায় এসেছিলাম। আজ এখানে নোংরা রাজনীতি দেখতে হয়। কষ্ট লাগে।

যাক, শুধু চ্যানেল আই নয়, এদেশে স্যাটেলাইট চ্যানেল ব্যবসার আজকের যে রমরমা অবস্থান, তার ভিত আমিই গড়ে দিয়েছিলাম এটিএন বাংলা প্রতিষ্ঠা করে। এজন্য আমাকে প্রচুর সময় ও শত শত কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে। আমার পরে যারা এসেছেন তাদের এই লোকসানের মুখ দেখতে হয়নি। কারণ, ততদিনে স্যাটেলাইট চ্যানেল বা ডিশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে দেশে। সরকারও এটিকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দেখছে।

একটা সময় দেখলাম নিউজের প্রতি দর্শকদের আলাদা ভালো লাগা আছে তখন নিউজ প্রচারে গুরুত্ব দিলাম। বেশ কয়েকজন সংবাদ পাঠক-পাঠিকাকে আমরা থাইল্যান্ডে পাঠালাম। এখান থেকে নিউজ ফ্যাক্স করে দিতাম, তারা সেখানে বসে পাঠ করত। কখনো নিউজের সঙ্গে ভিডিও দেখানোরও প্রয়োজন পড়ত। সেইক্ষেত্রে দুদিন নিউজটা প্রচার করতাম। কিছুদিন পর ভিডিও ডিএইচএলে পাঠানোর পর প্রচার হতো। মনে পড়ে, ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ করে আমরা দারুণ সাড়া পেয়েছিলাম

জাগো নিউজ : তখন বিজ্ঞাপন পেতে সমস্যা হতো না?

ড. মাহফুজুর রহমান : আমি অপেক্ষায় ছিলাম এ প্রশ্নের। এ প্রশ্নের উত্তরে আমি প্রথমেই দুটি শিল্প গ্রুপকে সম্মান জানাতে চাই, কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। সেগুলো হলো স্কয়ার গ্রুপ ও আকিজ গ্রুপ। বিশেষ করে আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আকিজ সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞ আমি। তিনি আমাকে এককালীন ৫০ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। আমি বলব, এই দুটি গ্রুপের কাছে আজকের সমগ্র টিভি মিডিয়াই কৃতজ্ঞ। কারণ, সেদিন তারা এটিএন বাংলার পাশে দাঁড়িয়ে এর বিকাশ ও বিস্তারে সাহায্য করেছিলেন বলেই পরবর্তীতে দ্রুতই আমাদের দেশে ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার পরিধি বিশাল হয়েছে, যা আজকের চমৎকার একটি অবস্থানে পৌঁছেছে।

তখন বেসরকারিভাবে চালানো টিভিতে বিজ্ঞাপন দেয়ার সাহস করেননি কেউ। এখন তো বড় বড় কোম্পানি টিভি, রেডিও, কাগজ এমনকি অনলাইন নিউজ পোর্টালেও বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। কিন্তু তখন দেশে শুধু বিটিভি (বাংলাদেশ টেলিভিশন) ছিল। বিজ্ঞাপনদাতারা সব বাজেট বিটিভির জন্য বরাদ্দ রাখতেন। আমরা নতুন একটা চ্যানেল করেছি। কিন্তু মাল্টিন্যাশনাল কোনো কোম্পানি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের জন্য বাজেট রাখত না।

তখনো আমরা বাংলাদেশে আর্থ স্টেশন বসানোর অনুমতি পাইনি। ওই সময় আমরা সরকারকে দেখাতাম, এই অনুষ্ঠানগুলো আমরা এক্সপোর্ট করছি। এটার জন্য আমাদের রেমিট্যান্সও আনতে হতো। সেই সময় অনেকের কাছেই আমরা গিয়েছি বিজ্ঞাপনের জন্য। কিন্তু তারা স্যাটেলাইট চ্যানেলের ধারণাটিকে পরিষ্কার বুঝতে পারেননি। তবে স্কয়ার গ্রুপ ও আকিজ গ্রুপ আমার পাশে ছিলেন। তারা শুরু থেকেই আমাকে লাখ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। বছর শেষে আমাকে শত শত কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে এটিএন বাংলা চালানোর জন্য। সেই লোকসান কিছুটা হলেও কমত স্কয়ার আর আকিজ গ্রুপের বিজ্ঞাপনে।

যা হোক, আসলে তখন স্যাটেলাইট চ্যানেল কেউ বুঝত না। সবকিছু ছিল টেরিস্ট্রিয়াল। সরকার অনুমতি না দেয়ার কারণে আমরা ভিডিও অনুষ্ঠান এক্সপোর্ট করার কথা বলেছিলাম। তখন সরকারকে রেমিট্যান্স দিতাম। আমি যেহেতু গার্মেন্ট ব্যবসা করতাম, দেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় আমার অফিস ছিল। ব্যবসার আয়ের টাকা দিয়ে অনুষ্ঠান তৈরি করতাম। আমার জন্য পুষিয়ে যেত। কিন্তু আমার পরপর টেন টিভিসহ আরও কিছু চ্যানেল এলো। এগুলো ছিল চ্যানেল আইয়ের আগে। সেই চ্যানেলগুলো সম্প্রচারে আসার আগেই অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এর ওপর এলো একুশে টেলিভিশন, যা ইটিভি নামেও পরিচিত। আস্তে আস্তে এলো বাকিরা, আরও আসছে।

এলএ/আরআইপি