বিশেষ প্রতিবেদন

প্লাস্টিকের বস্তা : সোনালী আঁশের দিন ফেরাতে ফের ‘হোঁচট’

পাটের পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তায় চাল সংরক্ষণের ঘোষণায় হোঁচট খেল সোনালী আঁশের দিন ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ। পাটের বস্তার মোড়কে যেকোনো পণ্য সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণ করে। ফলে ধারণা করা হচ্ছিল, পাটের সোনালী দিন ফিরে আসছে।

Advertisement

কিন্তু বর্তমান জরুরি পরিস্থিতিতে প্লাস্টিকের বস্তায় চাল সংরক্ষণের সিদ্ধান্তে ঘুরে-ফিরে লাভ হলো চাল ব্যবসায়ীদের। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন পাটচাষী এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্লাস্টিকের বস্তাতেই চাল সংরক্ষণ ও আমদানির কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, যে ভাবেই হোক, যে বস্তাতেই হোক চাল আসতে হবে। প্লাস্টিকের বস্তাসহ ব্যবসায়ীরা যে যেভাবে খুশি চাল পরিবহন করতে পারবেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ওই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বি-মত পোষণ করেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।

Advertisement

তিনি বলেন, চালমিল মালিকরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারকে বিভ্রান্ত করছেন। চালের দাম বৃদ্ধিতে পাটের বস্তা ব্যবহারের কোনো প্রভাব নেই। তাই আগামী তিন মাস বিদেশ থেকে আমদানি করা চালে শুধু প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করা যাবে। তবে অভ্যন্তরীণ চালের ক্ষেত্রে অবশ্যই পাটের বস্তা ব্যবহার করতে হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বক্তব্য অনুযায়ী পাটের বস্তার পরিবর্তে ব্যবসায়ীরা প্লাস্টিকের বস্তায় চাল পরিবহন ও সংরক্ষণের অনুমতি পাওয়ায় পাটচাষী ও জুটমিল মালিকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কারণ ধান, চালসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন ও সংরক্ষণে প্লাস্টিকের বস্তা এখন ব্যবহার করা যাবে।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ধান, চালসহ ১৭টি পণ্যে পাটের বস্তা ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করায় গত দু’বছরে পাটের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে কৃষকও পাটের ভালো দাম পায়। এবার সারাদেশে যখন রেকর্ড পরিমাণ পাট উৎপাদ হয়েছে তখন পাটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তায় পণ্য পরিবহন পাটের দামের ওপর প্রভাব ফেলবে।

পাটের বস্তা ব্যবহারের ফলে দেশের জুটমিলগুলোতে লাখ লাখ পাটের বস্তা উৎপাদন হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি এম বারিক খান জাগো নিউজকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা শর্তেও অনেক ব্যবসায়ী পাটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করছেন। দেশে চালের ক্রাইসিস চলার কারণে জরুরি ভিত্তিতে চাল আমদানি করা হচ্ছে। বিদেশ থেকে প্লাস্টিকের বস্তায় চাল আসছে। এখন বাণিজ্যমন্ত্রীর ঘোষণার ফলে দেশের চালকল মালিকরাও প্লাস্টিকের বস্তায় চাল সরবরাহ করবেন। ফলে পণ্যের মোড়ক হিসেবে পাটের বস্তার যে ব্যবহার ছিল তা এখন কমে যাবে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বেসরকারি পাটকল মালিকরা।

Advertisement

‘এমনিতেই পাটের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না চাষীরা। এরপর পাটের ব্যবহার কমে গেলে তারা পাট উৎপাদনে উৎসাহ হারাবেন। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের সার্বিক অর্থনীতি। জরুরি প্রয়োজনের বাণিজ্যমন্ত্রী এমন ঘোষণা দিলেও পরবর্তীতে পণ্যের মোড়কে পাটের ব্যবহার ফের নিশ্চিত করা হবে’ বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এফএইচএস/এমএআর/আইআই