উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার দুপুর ১২টা থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। বিকেল ৩টায় ৪ সেন্টিমিটার উপরে ও বিকেল ৬টায় বিপদসীমার (বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৪০মিটার) ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর প্রবাহিত হওয়ায় চরাঞ্চলের ১০ সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। অপরদিকে খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের সুপরীটারীতে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকায় নির্মিত ৪শ ফিট বালুর বাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ বাঁধটি নির্মাণের নামে মাত্র কাজ করে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছে ইউপি সদস্য তফেল উদ্দিন। তিস্তা পাড়ের ছোটখাতা, পূর্ব খড়িবাড়ী, দক্ষিণ খড়িবাড়ী গ্রামে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যান বন্যা কবলিত স্থান পরিদর্শন করেছেন। তিস্তা পাড়ের চরাঞ্চলের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে কাজ করা হচ্ছে।এদিকে তিস্তায় পানি বৃদ্ধির কারণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইচ গেট খুলে রাখা হয়েছে বলে জানান তিস্তা ব্যারেজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুরুতুজ্জামান। এদিকে তিস্তাপাড়ের বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের সূত্র মতে পানি বৃদ্ধির কারণে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার তিস্তাপারের নিম্নাঞ্চলের ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।অপরিকল্পিতভাবে খালিশা চাপানির ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের সুপরীটারীতে তিস্তা নদীতে ৪শ মিটার বালুর বাঁধ তৈরি করা হয়। শুক্রবার রাতে তিস্তার নদীর মাটির বাঁধটি বিধ্বস্ত হয়েছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, তিস্তা নদীতে বালুর বাঁধটি নির্মিত করার নামে ইউপি সদস্য তফেল উদ্দিন নামে মাত্র কাজ করে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস সর্তকীকরণ কেন্দ্র সূত্র মতে পাহাড়ী ঢল ও উজানের ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে শনিবার সকাল থেকে তিস্তা নদীতে ঢল নেমেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার, গোলমুণ্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের গ্রাম ও নদীর চর প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছোটখাতা, পশ্চিম বাইশপুকুর, পূর্ব বাইশপুকুর, কিসামত ছাতনাই, পূর্বছাতনাই ঝাড়শিঙ্গেরশ্বর, বাঘেরচর, টাবুর চর, ভেণ্ডাবাড়ী, ছাতুনামা, হলদিবাড়ী, একতারচর, ভাষানীর চর, কিসামতের চর, ছাতুনামা। এ চরাঞ্চলের ৩ হাজার পরিবারের ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জাগো নিউজকে জানান, শনিবার সকাল থেকে তিস্তার নদীর পানি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে শুরু করেছে। ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চলের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে। খগাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন জাগো নিউজকে জানান, কিসামত ছাতনাই চরের প্রতিটি বাড়ি হাটু পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই গ্রামের ২৫০টি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য বলা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম জাগো নিউজকে জানান, তিনি বন্যা কবলিত স্থান পরিদর্শন শেষে উপজেলার ৭টি ইউপি চেয়ারম্যানদের চরাঞ্চলে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি বলেন, পশ্চিম বাইশপুকুর ও পূর্ব বাইশপুকুরে গ্রামের বাঁধে গ্রাম পুলিশসহ ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে হু হু করে পানি বৃদ্ধি পায়। অনেকের মতে, এবার বর্ষার শুরুতেই তিস্তা নদীতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিতে পারে। তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জাহেদুল ইসলাম/এমজেড/এমএস
Advertisement