টানা তিন সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গত সপ্তাহে দেশের শেয়ারবাজারে কিছুটা পতন ঘটেছে। শেষ সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে (১৭ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স কমেছে দশমিক ৫৪ শতাংশ। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারটিতে লেনদেন কমেছে প্রায় এক শতাংশ।
Advertisement
এর আগে ঈদুল আজহার আগে দেশের শেয়ারবাজারে দেখা দেয়া চাঙা প্রবণতা ঈদের পরের দুই সপ্তাহ অব্যাহত থাকে। ফলে টানা তিন সপ্তাহ মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়। এতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায় ডিএসইর তিনটি সূচকই। সেই সঙ্গে রেকর্ড সৃষ্টি হয় বাজার মূলধনেও।
সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চারদিনই দরপতন ঘটেছে। প্রতিদিনই দর হারিয়েছে লেনদেন হওয়া সিংহভাগ প্রতিষ্ঠান। তবে ব্যাংক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে ছিল কিছুটা ব্যতিক্রম। সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের মধ্যেও ব্যাংক কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম বেড়েছে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে মূল্য সূচকের বড় পতন ঘটেনি।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩৩ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি বাড়ে ৮৮ দশমিক ৯২ পয়েন্ট বা ১ দশমকি ৪৫ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ১০৮ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ১২১ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট বা ২ দশমকি শূন্য ৬ শতাংশ।
Advertisement
অপর দুটি সূচকের মধ্যে শেষ সপ্তাহে ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ২৭ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি বাড়ে ৪৬ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৪ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বেড়েছিল ৩৯ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ২৭ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩০ শতাংশ।
অপরদিকে শেষ সপ্তাহে ডিএসই শরিহ সূচক কমেছে ২৩ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি বাড়ে ৩৭ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ২৫ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ১৬ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৬ শতাংশ।
সূচকের স্বল্প পতন হলেও শেষ সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৩৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে ২৩৬টিরই দরপতন হয়েছে। অপরদিকে দাম বেড়েছে ৮৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টির দাম।
শেষ সপ্তাহে মূল্য সূচক কমার পাশাপাশি কমেছে মোট ও দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ। সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২২১ কোটি ৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ১ হাজার ২৩২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১১ কোটি ৮১ লাখ টাকা বা দশমিক ৯৬ শতাংশ।
Advertisement
অপরদিকে শেষ সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৬ হাজার ১০৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হয় ৬ হাজার ১৬৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৫৯ কোটি ৫ লাখ টাকা।
গত সপ্তাহে মোট লেনদেনের ৯১ দশমিক ৪২ শতাংশই ছিল ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দখলে। এছাড়া বাকি ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত, ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরিভুক্ত এবং ১ দশমিক ৫২ শতাংশ ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের।
এদিকে গত সপ্তাহে মূল্য সূচক ও লেনদেন কমার পাশাপাশি ডিএসইর বাজার মূলধনের পরিমাণও কমেছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৪ লাখ ১৩ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৭৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা সপ্তাহজুড়ে হওয়া মোট লেনদেনের ৪ দশমিক শূন্য ৪৭ শতাংশ।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৮০ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা সপ্তাহের মোট লেনদেনের ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ১৭৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, এক্সিম ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সামিট পাওয়ার, উত্তরা ব্যাংক এবং প্রাইম ব্যাংক।
এমএএস/এমআরএম/আইআই