জাতীয়

এলো বর্ষা

নীল নবঘনে আষাঢ় গগণেতিল ঠাঁই আর নাহিরেওগো আজ তোরা যাসনেঘরের বাহিরে।...

Advertisement

অথবা

এমন দিনে তারে বলা যায়এমন ঘনঘোর বরিষায় -এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরেতপনহীন ঘন তমসায়।

...কবিগুরুর বরষার কবিতা।

Advertisement

আকাশে মেঘের আনাগোনা থাকুক আর নাই থাকুক। বৃষ্টির ছিটেফোটা গায়ে পড়ুক আর নাইবা পড়ুক। গুড় গুড় শব্দে মেঘ ডাকুক আর নাই ডাকুক। নাইবা হল বর্ষণ। আজ পহেলা আষাঢ়। বাংলা ষড়ঋতুর দ্বিতীয় ঋতুটি বর্ষা। অপরূপ রূপবতী মেঘবতীর সঙ্গে বর্ষার সেই প্রথম দিন আজ। এই আষাঢ়ের প্রথম দিন আকাশের চিরচেনা সেই ঝরঝর শব্দে রিনিঝিনি বৃষ্টির ধ্বনি শোনা যাবে কিনা তা বলা যায় না।

 

কদম, কেয়া আর কেতকীর নয়নাভিরাম রূপের পসরা ও পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছল নৃত্যের আবাহনে এলো বরষা। আষাঢ়-শ্রাবণ এ দু’মাস বাংলায় বর্ষা। তবে নতুন করে এর আগমনী বার্তা দেয়ার প্রয়োজন নেই। গত কয়েকদিন রাজধানীসহ সারা দেশে বৃষ্টির মধুর বিড়ম্বনা বর্ষার আগমন বার্তা অবশ্য দেশবাসীকে জানিয়ে দিয়েছে।

 

জীবনানন্দ দাশ আষাঢ়কে বলেছেন ‘ধ্যানমগ্ন বাউল-সুখের বাঁশি’। বাঙালির অতি প্রিয় এই ঋতুর আগমনে পুরো প্রকৃতি তার রূপ ও বর্ণ বদলে ফেলে। গাছপালা, তরুলতা সবকিছুই যেন গ্রীষ্মের দহন থেকে পরিতৃপ্তি পেতে স্নান করে ওঠে।

 

বর্ষা ঋতুকে বরণ করে নিতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বর্ষা উৎসবের আয়োজন করেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার লিচুতলাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হবে সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি আর বর্ষা কথনের নানা অনুষ্ঠান।

Advertisement

 

অনেকের কাছে বর্ষা ভোগান্তিরও বটে। কেননা আষাঢ় মানেই বৃষ্টির ঘনঘটা। বৃষ্টির তোড়ে যাওয়া যায় না ঘরের বাইরে। বিশেষ করে নগরে রাস্তায় বের হওয়া অনেক সময়ে চরম দুর্ভোগই নিয়ে আসে। কমে যায় দিনমজুরের আয়-উপার্জন। গ্রামাঞ্চলেও অনেক সময়ে কাজে ব্যাঘাত ঘটে।

 

তবে বাঙালি মনন বর্ষার সৌন্দর্যকে বিশেষভাবেই দেখে। বর্ষা এমন এক ঋতু যেখানে রোমান্টিকতার আবেশই বেশি। রিমঝিম শব্দে বৃষ্টি নামার সঙ্গেই মানব হৃদয়েও নাড়া দেয় আরেক ছন্দ। সেই ছন্দেই বর্ষা হয়ে ওঠে মধুময়। বর্ষাতেই জলভেজা কেতকি (কেয়া) দূর থেকে সুবাস এনে দেয়। গ্রামের ঝাউবনে, বাঁশ বাগানে, নদী তীরে চর এলাকায় বর্ষাতেই সবচেয়ে বেশি ফোটে নাম না জানা কত বনফুল। ক`জনাই বা জানি সেই সব বনফুলের কথা। যেগুলো দৃষ্টিতে এসে মন রাঙ্গিয়ে দেয়। বাঙালি সংস্কৃতিতে বর্ষার প্রতীকী ফুল কদম।

 

‘বাদল দিনে প্রথম কদম ফুল করেছ দান...‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কী ভেবে কদমকে এভাবে টেনে এনেছেন তার ব্যঞ্জনা তিনিই দিয়েছেন গানের সুরে। "এসো নীপ বনে ছায়াবীথি তলে/এসো করো স্নান নব ধারা জলে...

 

এসএইচএস