সম্প্রতি দেশের বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে চালের দাম। গরিবের মোটা চালের দাম এখন ৫০ টাকার ওপরে। ৬০ টাকা ছাড়িয়েছে সরু চাল। সরকারের দূরদর্শিতার অভাবে চালের দাম এমন অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে বলে মনে করছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
Advertisement
বৃহস্পতিবার জাগো নিউজকে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, চালের ব্যাপারে সরকার দূরদর্শিতার অভাব দেখিয়েছে। কারণ জুন মাসেই দেখা গেছে সরকারের নিজস্ব স্টক (মজুদ) অনেক বড় মাত্রায় কমে গেছে। তারপর বন্যার আভাস তো আগে থেকেই ছিল এবং বন্যায় যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তখনও সরকার থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। পরে সরকার আমদানিতে গেছে। আমদানির কিছু কন্ট্রাক (চুক্তি) হয়েছে।
তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে আমদানি শুল্ক সরকার সময়মতো কমায়নি। আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে অনেক পরে এসে। কাজেই সরবরাহে কিছুটা সংকট দেখা দেয়। এরপর রোহিঙ্গারা আসায়, ব্যবসায়ীরা তো জানেই তাদের (রোহিঙ্গা) খাবার দিতে সরকারের চাল বেশি কিনতে হবে। এ জন্য চাহিদা বেড়ে গেছে। একদিকে সরবরাহ সমস্যা, অন্যদিকে চাহিদা বৃদ্ধির ফলে দাম বেড়ে গেছে।
চালের দাম কমানোর পদক্ষেপ হিসেবে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এখন যেসব আমদানির চুক্তি হয়েছে, সেগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডেলিভারি (সরবরাহ) নিতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতি থাকলে দাম বাড়াটা স্বাভাবিক, তবে ব্যবসায়ীদের বোঝাতে হবে শুধু মুনাফার চেষ্টা না করে সামাজিক দায়বদ্ধতার নিকে নজর রেখে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে।
Advertisement
চাল মজুদের বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এ ধরনের অভিযানের আমি খুব বেশি পক্ষপাতী না। কারণ এটি করতে গেলে দেখা যাবে মজুদদাররা একটি গোডাউনে মাল রেখে অন্য গোডাউন থেকে মাল সরিয়ে দেবে। যাতে সরবরাহের ওপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি হয়। কাজেই যতদূর সম্ভব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এবং কিছুটা ভয় দেখিয়ে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে।
ব্যবসায়ীদের চাল মজুদের বিষয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বেশি দামে বিক্রি করার আশায় মানুষ চাল মজুদ রাখে। আর ভবিষ্যতে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে এই প্রত্যাশাটা তখন আসে যখন চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান দেখা দেয়। কাজেই সরকারের স্টক বাড়ানো এবং আমদানির ক্ষেত্রে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সরকারের নজর দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ভারতের কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করা উচিত। কারণ মিডিয়া রিপোর্টে ব্যবসায়ীরা বলছে- আমদানি শুল্ক কমানোর কারণে ভারতের রফতানিকারকরা তাদের রফতানি মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। কাজেই আমদানি শুল্ক কমানোর খুব একটা সুফল আমরা পাচ্ছি না। এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করছি।
এমএএস/বিএ/এমএস
Advertisement