বিশেষ প্রতিবেদন

‘সরকারের কর্মসূচি চলবে না’- এমন শঙ্কা থেকে চালের মূল্যবৃদ্ধি

খোলাবাজারে চাল বিক্রিসহ সরকারের অন্যান্য কর্মসূচি চলবে না- এমন শঙ্কা থেকে সাম্প্রতিক সময়ে চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

Advertisement

চালের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বৃহস্পতিবার জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, যখন স্টক (সরকারের মজুত) ভালো রাখা উচিত ছিল, তখন সেটা রাখা হয়নি। এর সঙ্গে আমন ও বোর সংগ্রহের যে লক্ষ্য ছিল তাও পূরণ হয়নি। আমদানির পদক্ষেপও সময় মতো নেয়া হয়নি। এর সঙ্গে বন্যার প্রভাব তো ছিল।

সবমিলিয়ে বাজারে সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ঘাটতি দেখা দেয়। আবার যারা চাল বিক্রি করেন তাদের মধ্যেও একটা অনিশ্চয়তা ছিল যে, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট চাল নেই।

Advertisement

‘সুতরাং সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে সৃষ্টি হওয়া পার্থক্যের কারণে সামনের দিনে যে চাহিদা হবে, এর পরিপ্রেক্ষিতে খোলাবাজারে চাল বিক্রিসহ সরকারের বিভিন্ন যে কর্মকাণ্ড চলে তা সম্পন্ন করা যাবে না- এমন শঙ্কা দেখা দেয়। ফলে বাজারে চালের মূল্য বেড়ে যায়, যা এখন সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে’- যোগ করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, যারা স্বল্প আয়ের এবং যাদের মোট খরচের প্রায় ৭০ শতাংশই চলে যায় চালের পেছনে, তাদের ক্রয়ক্ষমতার ওপর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাদের জীবনযাত্রার মানের ওপরও চালের মূল্যবৃদ্ধির একটা প্রভাব আছে। সরকার তাদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

চালের দাম কমানোর উদ্যোগ হিসেবে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, অবশ্যই এখন আমদানি আরও বেশি করতে হবে এবং জি টু জি (সরকার থেকে সরকার) -এর বাইরে গিয়ে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে আমদানি বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে খোলাবাজারে চালের বিক্রি আরও সম্প্রসারিত করতে হবে।

‘১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির কর্মসূচি আবার চালু করা প্রয়োজন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি করতে পারলে বাজারের ওপর কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসবে এবং অপেক্ষাকৃত কম আয়ের মানুষের চালের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে। তবে এখন মূল কাজ হলো স্টক (মজুত) বাড়িয়ে খোলাবাজারে বিক্রি সম্প্রসারিত করা এবং জরুরি ভিত্তিতে আগামীর চাহিদার সঙ্গে স্টকের সমন্বয় করা।

Advertisement

অবৈধ চাল মজুতের বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি অতিরিক্ত মজুত করে, সেটার জন্য তো সুনির্দিষ্ট আইন আছে। সেই আইনের প্রয়োগ করতে হবে। ব্যবসায়ীদের স্পষ্ট সংকেত দিতে হবে যে, মজুত নির্দিষ্ট পরিমাণের বাইরে গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আইনের বাইরে ভয়-ভীতি দেখালে বাজারে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দেয়ার প্রয়োজন আছে। মূল বিষয় হলো, বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরবরাহ বাড়াতে হবে এবং খোলাবাজরে চাল বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, চাল আমদানিতে শুল্কছাড়সহ ব্যাংক থেকেও কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে। সুতরাং এখন নতুন করে ব্যবসায়ীদের আর কোনো সুবিধা দেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে চাল আমদানির ক্ষেত্রে যে সকল পদক্ষেপ নেয়া দরকার, সেখানে কিছুটা বিলম্ব-ভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। এটা যাতে আগামীতে না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

‘এখন পৃথিবীর যেখানেই চাল ও গম পাওয়া যাবে, সেখান থেকেই ক্রয় করে স্টক আগের মতো ১২-১৩ লাখ টনে নিয়ে যেতে হবে। এটি করতে পারলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে’- যোগ করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

এমএএস/এমএআর/এমএস