হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব নবরাত্রী উপলক্ষে টাঙানো সাবেক পর্নস্টার এবং বলিউডের হার্টথ্রব অভিনেত্রী সানি লিওনের ছবি সম্বলিত ম্যানফোরস কনডমের বিলবোর্ড সরিয়ে নেয়ার জন্য চাপ শুরু হয়েছে। নবরাত্রীকে কেন্দ্র করে ম্যানফোর্স কনডমের বিলবোর্ড টাঙানো হয়েছিল দেশটির পশ্চিমের রাজ্য গুজরাটের বেশ কিছু শহরের রাস্তার ধারে। কিন্তু অনেকেই ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে কনডমের বিলবোর্ড টাঙানোর বিষয়টি মানতে পারেননি।
Advertisement
বৃহস্পতিবার থেকে নয় দিনব্যাপী নবরাত্রী উৎসব শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগেই বিলবোর্ডগুলো টাঙিয়ে দেয়া হয়। কনডম বিক্রিতে ভারতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ম্যানফোর্স’র বিলবোর্ডগুলোতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক সানি লিওনের আবেদনময়ী ছবি দেখা যায়।
সানি লিওন ম্যানফোর্স কনডমের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। বিলবোর্ডের স্লোগানে লেখা হয়, ‘এই নবরাত্রীতে খেল, কিন্তু ভালোবাসার সঙ্গে।’
অতীতে নীল দুনিয়া কাঁপালেও বলিউডে এখন সানির অবস্থান বেশ পাকাপোক্ত। বলিউডের সুপার-ডুপার হিট ছবিতে দেখা যাচ্ছে তাকে। অগণিত ভক্ত রয়েছে তার।
Advertisement
তবে রক্ষণশীল হিন্দুরা সানিকে তুলোধুনা করতে ছাড়ছে না; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অনেকেই নেতিবাচক সমালোচনা করছেন তার। কনফেডারেশন ফর অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স সরকারের কাছে অভিযোগও করেছে; যেন অবিলম্বে তা নিষিদ্ধ করা হয়, সেই দাবিও উঠেছে।
ভোক্তাবিষয়ক মন্ত্রী রাম ভিলাস পাসান ওই অভিযোগের ব্যাপারে জানান, ‘আমাদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে কব্জা করে বেআইনি এবং দায়িত্বহীনভাবে নিজেদের পণ্য বিক্রি করার চেষ্টা করা হয়েছে।’
কনফেডারেশন ফর অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্সের সাধারণ সম্পাদক প্রবীন খানডেলওয়াল জানান, ‘নবরাত্রী একটি পবিত্র উৎসব। সেখানে সব নারীকে প্রতীকী করে উৎসবের সঙ্গে কনডম যুক্ত করা অত্যন্ত আপত্তিকর।’
তিনি আরও জানান, ‘বিজ্ঞাপনে কনডম শব্দের উল্লেখ নেই। কিন্তু নবরাত্রী উৎসবে ম্যানফোর্স কনডম ব্যবহারের ইঙ্গিত রয়েছে। সেটা একেবারেই অনৈতিক।’
Advertisement
অভিযোগের ভিত্তিতে সুরাত এবং ভাদোদারা শহর থেকে পুলিশ কয়েক ডজন বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলেছে। তবে কনডম প্রতিষ্ঠান এবং অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান খানডেলওয়াল। যাতে তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।
বুধবার রাতে ম্যানফোর্স কনডম এক টুইটে বলছে, তারা কনডমের বিলবোর্ডগুলো সরিয়ে নেবেন। তবে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আরও দাবি করা হয়, নবরাত্রী উপলক্ষে টাঙানো তাদের বিলবোর্ড খারাপ কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
১৯৯০ সালের উৎসবের সময়কার ঘটনা। অনেক তরুণ সেবার কোনো রকম পদ্ধতি ছাড়াই শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। ফলে দু’মাস পরেই বহু নারী গর্ভবতী হয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। অনেকে গর্ভপাত ঘটান।
চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রমে মানুষজনকে বোঝাচ্ছেন নিরাপদ যৌনতার কথা। তরুণ-তরুণীদের নিরাপদে যৌনতার দিকে খোলাখুলিভাবে আসার আহ্বান করা হচ্ছে। সম্প্রতি অনেক তরুণী দোকানে গিয়ে কনডম কিনছেন। বলা হচ্ছে, এটা খারাপ কিছু নয়।
ফেডারেশন অব গুজরাট স্টেট কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান জসওয়ান্ট পাটেল জানান, ‘গত ১০ বছরে উৎসব উপলক্ষে কনডমের বিক্রি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘কনডমের বিক্রি কিন্তু সাধারণ ওষুধ কিংবা সাধারণ দোকানের জিনিসপত্রের মতো করে হয় না। দোকানের এক কোণে রাখা হয় কনডমের প্যাকেট; সেটাও রাখঢাক করে।’
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রুবি মেহতা জানান, ‘উৎসব উপলক্ষে নারীদের গর্ভ ধারণের সংখ্যা বেড়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘কনডম এখন হাতের নাগালে। গত ২০ বছরে দম্পতিরা অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। কিন্তু তরুণদের সচেতন করার মতো তেমন উপায় নেই। সে কারণে প্রতি বছর অন্য সময়ের তুলনায় নবরাত্রী উৎসবের পর গর্ভবতীরা দ্বিগুণহারে আমাদের ক্লিনিকে আসে।’
তিনি বলেন, ‘ম্যানফোর্সের ধারণা খুবই চমৎকার। আর সানি লিওন তরুণদের উৎসাহিত করছেন; এতে দোষের কিছু নেই।’
তিনি মনে করেন যৌন শিক্ষা আর বিজ্ঞাপন এক নয়। বিদ্যালয়েও যৌনতার ব্যাপারে শিক্ষার গুরুত্বের কথা বলেন তিনি। তরুণীদেরও এ ব্যাপারে যথাযথ শিক্ষা নেয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেন এই বিশেষজ্ঞ।
সূত্র : বিবিসি।
কেএ/এসআইএস/জেআইএম