জাতীয়

চিড়া-গুড় নয় দরকার সামিয়ানা আর চাল

সাম্প্রতিক সহিংসতায় মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়েছে। কক্সবাজারের নিবন্ধিত ক্যাম্পগুলোতে জায়গা না পেয়ে অনেকে খোলা মাঠে, কেউ ধানক্ষেতে কেউবা আবার রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে বসে আছেন ত্রাণের আশায়, দু-বেলা খাবারের আশায়।

Advertisement

সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকে ত্রাণ নিয়ে আসলেও সেগুলো পর্যাপ্ত নয় এবং অনেক ত্রাণ সামগ্রী অপ্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করেছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তত্ত্বাবধায়করা।

প্রতিদিনই ট্রাক ভরে ত্রাণ আনছেন দেশি- বিদেশি অনেক সংস্থা। এদের মধ্যে অধিকাংশই চিড়া, মুড়ি, খই ও গুড়ভর্তি বস্তা বিতরণ করছেন। তবে এগুলোর অনেক কিছুই খেতে পারছেন না রোহিঙ্গারা। ৪-৫ দিন হেঁটে তারা যে পরিমাণ দুর্বল হয়েছেন এবং যে মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে তারা বাংলাদেশে এসেছেন তা থেকে মুক্তির জন্য তাদের প্রয়োজন ভাত-মাছের মতো ভারী খাবার এবং ওরস্যালাইন। ত্রাণ সামগ্রী হিসেবে চাল প্রয়োজন তাদের।

এছাড়া গত এক সপ্তাহে কক্সবাজার এলাকায় প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। এতে ক্যাম্প ও ক্যাম্পের বাইরের রোহিঙ্গারা ভিজে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ত্রাণ সামগ্রীর পাশাপাশি জরুরিভাবে তাদের থাকার জন্য সামিয়ানা প্রয়োজন।

Advertisement

কক্সবাজারের নিবন্ধিত ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের অন্যতম তত্ত্বাবধায়ক নবী হোসাইন নোমান জাগো নিউজকে বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য এখন অনেক সামিয়ানা আনতে হবে। পর্যাপ্ত সামিয়ানার অভাবে অনেকে বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাচ্ছেন। অনেকে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই যারা ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে ত্রাণ আনছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপনারা সামিয়ানা নিয়ে আসুন, সামিয়ানা লাগানোর জন্য বাঁশ সরবরাহ করুন। অন্যান্য ত্রাণের তুলনায় আপাতত এটাই খুব জরুরি।

১৯৯১ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন রোহিঙ্গা মোহাম্মদ আইয়ুব। তিনি কুতুপালং ক্যাম্পের লিডার এবং তত্ত্বাবধায়ক। রোহিঙ্গাদের ত্রাণের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল, ডাল ও তেল দরকার। রান্নার ব্যবস্থা আমরা নিজেরাই করবো। রোহিঙ্গারা গত ৭ থেকে ১০ দিন ধরে যে পরিশ্রম করছেন তাদের তিনবেলা ভারী খাবার না দিলে দুর্বল হয়ে পড়বে। এছাড়াও তাদের জন্য জরুরিভাবে বিশুদ্ধ খাবার পানি, প্যারাসিটামল ও খাবার স্যালাইন প্রয়োজন। টিউবওয়েল এবং ল্যাট্রিন প্রয়োজন

কক্সবাজার জেলার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা পাঁচ বছরের নিচের শিশুরা সবচেয়ে বেশি অপুষ্টিতে ভুগছে। টানাবৃষ্টি ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে সর্দি, কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া,পাতলা পায়খানাসহ ক্যাম্পগুলোতে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের কারণে বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

সরেজমিনে কক্সবাজারের কুতুপালং এবং বালিখালি ক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকটি এনজিও অস্থায়ী ল্যাট্রিন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। খাবারের জন্য ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করছে রোহিঙ্গারা। যারা হুড়োহুড়ি করে নিতে পারছেন তারাই কেবল শুকনো খাবার পাচ্ছে। যারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল তারা বসে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছেন।

Advertisement

একটি বিদেশি সংস্থা রোহিঙ্গা নারীদের মাঝে গুড়ো দুধের প্যাকেট বিতরণ করলেও এদের অনেকেই আবার সেগুলো স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে বাংলাদেশি টাকা সংগ্রহ করছেন। ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে দুই লাখ ৯৯ হাজার ৯৫৬ জনের পুষ্টি সহায়তা প্রয়োজন। এর মধ্যে পাঁচ বছরের নিচে শিশুর সংখ্যা এক লাখ ৫৪ হাজার। এছাড়া, পুষ্টি সহায়তা দরকার এমন ৯১ হাজার ৫৫৬ জন কিশোরী ও রোহিঙ্গা নারীর মধ্যে ৫৪ হাজার ৬৩৩ জন অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদায়ী মা রয়েছেন।

এআর/এআরএস/আরআইপি