বরিশালের আগৈলঝড়া উপজেলার ছয়গ্রাম এলাকায় পারভীন বেগম নামে এক গৃহবধূর শরীরে অ্যাসিড ছুঁড়ে ঝলসে দিয়েছে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে দগ্ধ ওই গৃহবধূকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দগ্ধ পারভীন নেত্রকোণা জেলার মদন থানার হাসিমপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের মেয়ে।রোববার দুপুরে হাসপাতালে পারভীন বেগমকে দেখতে যান জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এসময় হামলাকারীদের সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তারা।পরিদর্শনকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। আগে জিডি করেও কেনো তিনি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পায়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে পুলিশের কারো বিরুদ্ধে গাফলাতির অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।দগ্ধ পারভীন জানান, গার্মেন্টে কাজ করার সুবাদে ২০০১ সালে আগৈলঝড়া উপজেলার ছয়গ্রামের সোহাগ ব্যাপারীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর বিয়ে করে তিনি স্বামীর বাড়ি আগৈলঝড়ায় বসবাস করেন। বিয়ের পর তার শ্বশুর এবং শ্বাশুড়ি তাকে মেনে নিতে পারেনি। এ কারণে বিভিন্ন সময় তারা তাকে নির্যাতন করতো। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের চাপে এক সময় স্বামীও তাকে সহ্য করতে পারছিলেন না। বিয়ের তিন বছরের ব্যবধানে একবার তিনি অন্তঃসত্ত্বা হলে তখন স্বামীর নির্যাতনে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়।বিদেশে পাঠানোর নাম করে গত কয়েক মাস আগে তার স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি। এরপর তিনি তার দাদী শ্বাশুড়ির কাছে থাকতেন। কিছুদিন আগে কে বা কারা তার ঘরের বেড়া কেটে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে। বিষয়টি তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানালেও কোনো প্রতিকার পাননি। এরপর তিনি নির্যাতনের অভিযোগে গত সপ্তাহে আগৈলঝড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয় তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি।পারভীন জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার তিনি ঘরের বাইরে এলে মুখোশধারী ৩/৪ জন দুর্বৃত্ত তাকে লক্ষ্য করে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারে। এতে তার শরীরের পেছন দিক (পিঠ) ঝলসে যায়। তার ডাক চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।পারভীন বলেন, তিনি স্বামীর সংসার করতে চান। কিন্তু, যারা তাকে অ্যাসিড ছুঁড়েছে তারা তাকে হত্যাও করতে পারে। তাই তিনি অ্যাসিড হামলাকারীদের কঠোর বিচার চান। তাকে ঘর ছাড়া করার জন্যই এ হামলা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।শেরে বাংলা মেডিকেলের সার্জারী বিভাগের (মহিলা) প্রধান অধ্যাপক ডা. এ এম এস এম সারফুজ্জামান রুবেল জানান, এটা কেমিকেল বার্ন। তার শরীরের ১০/১২ ভাগ পুড়ে গেছে। রোগী আশঙ্কামুক্ত। কিছুদিন চিকিৎসা দিলে সুস্থ হয়ে যাবে। তবে শরীরের দাগ থেকে যাবে।সাইফ আমীন/এআরএ/আরআই/ এমএএস
Advertisement