দেশজুড়ে

৫ কোটি টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন রাজশাহীর কৃষকরা

প্রণোদনা পাচ্ছেন রাজশাহী অঞ্চলের ৫৪ হাজার ৬৯৬ জন কৃষক। বীজ, সার ও আনুষাঙ্গিক খরচ বাবদ তারা পাচ্ছেন ৫ কোটি ৬৭ লাখ ২৯ হাজার ৬৪০ টাকা। সম্প্রতি বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের এ সহায়তা দিচ্ছে সরকার।

Advertisement

আঞ্চলিক কৃষি দফতর জানিয়েছে, আসন্ন রবি মৌসুম ও খরিক-১ মৌসুমে এ প্রণোদনা পাবেন কৃষকরা। এরই মধ্যে অর্থ বরাদ্দ মিলেছে। কার্যক্রম বাস্তবায়নে হয়ে গেছে জেলা কৃষি পুনর্বাসন কমিটির বৈঠক। এখন জেলা কৃষি পুনর্বাসন কমিটি বৈঠক করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে।

রাজশাহী অঞ্চলিক কৃষি অধিদফতরের হিসাবে, প্রণোদনা পাচ্ছেন রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৫৪ হাজার ৬৯৬ জন কৃষক।

এর মধ্যে গম চাষে ৯ হাজার জন, ভুট্টা চাষে ৯ হাজার ৬০০ জন, সরিষা চাষে ২৭ হাজার ৫০০ জন, মুগ ডাল চাষে ৬ হাজার ৪০০ জন, তিল চাষে ২ হাজার ১০০ জন এবং বিটি বেগুন চাষে ৯৬ জন কৃষক প্রণোদনা পাবেন। এক বিঘা করে ফসল চাষে এ প্রণোদনা মিলবে।

Advertisement

প্রণোদনার অংশ হিসাবে এক কোটি ৯৪ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ টাকার বীজ, ২ কোটি ৩৬ লাখ ৭৭ হাজার ১২০ টাকার ডিএপি এবং ৭ লাখ ১১ হাজার ৬৭০ টাকার এমওপি সার পাবেন। এছাড়া পরিবহন বাবদ ৫৫ লাখ ১৮ হাজার ৮০০ টাকা এবং আনুষাঙ্গিক খরচ বাবদ ৯ লাখ ১৯ হাজার ৮০০ টাকা পাবেন কৃষকরা।

জানা গেছে, রাজশাহী ও নাটোরের সাড়ে চার হাজার করে কৃষক গম চাষে প্রণোদনা পাচ্ছেন। প্রত্যেকে ২০ কেজি করে গম বীজ ও ডিএপি সার এবং ১০ কেজি করে এমওপি সার পাবেন।

দুই হাজার ৪০০ জন করে কৃষক ভুট্টা চাষের আওতায় আসবেন রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার। প্রত্যেকে পাবেন দুই কেজি করে ভুট্টা বীজ, ২০ কেজি ডিএপি এবং ১০ কেজি করে এমওপি সার।

সরিষা চাষে প্রণোদনা পাচ্ছেন রাজশাহীর ৭ হাজার ৫০০, নওগাঁর ১২ হাজার, নাটোরের ৩ হাজার এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫ হাজার কৃষক।

Advertisement

এরা পাচ্ছেন এক কেজি করে বীজ, ২০ কেজি ডিএপি এবং ১০ কেজি করে এমওপি সার। এক হাজার ৫০ জন করে কৃষক তিল চাষে প্রণোদনা পাচ্ছেন রাজশাহী ও নাটোরে। এক কেজি করে বীজ, ২০ কেজি ডিএপি এবং ১০ কেজি করে এমওপি সার পাচ্ছেন এরা।

এদিকে, মুগ চাষে প্রণোদনা পাচ্ছেন রাজশাহীর ২ হাজার, নওগাঁর ৭০০, নাটোরের ৩ হাজার এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৭০০ কৃষক। এরা পাচ্ছেন ৫ কেজি করে বীজ এবং ১০ কেজি ডিএপি ও এমওপি সার।

এছাড়া বিটি বেগুন চাষে রাজশাহীর ৩৬, নওগাঁর ২৪, নাটোরের ২৪ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১২ কৃষক প্রণোদনা পাচ্ছেন। এরা ১৫ কেজি করে ডিএপি ও এমওপি সারসহ ২ গ্রাম করে বীজ পাবেন প্রত্যেকে।

আঞ্চলিক কৃষি দফতরের কর্মকর্তারা জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর প্রণোদনার অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই দিনই বিষয়টি তাদের জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

নির্দেশনা পেয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে জেলা দফতরগুলোতে। এ নিয়ে তারা বৈঠকও করেছেন। এখন ইউনিয়ন কৃষি পুনর্বাসন কমিটি তালিকা তৈরি করবে। আর এ কাজ বাস্তবায়ন করবে উপজেলা কৃষি পুনর্বাসন কমিটি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী। তিনি বলেন, যেসব কৃষকের নূন্যতম দেড় বিঘা জমি রয়েছে তারাই কেবল প্রণোদনার আওতায় আসবেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে প্রণোদণা পৌঁছে দিতে কাজ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে, সম্প্রতি বন্যায় রাজশাহী জেলায় ৩৭২ কোটি ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার ফসলহানি হয়েছে। নষ্ট হয়েছে ১২ হাজার ৭৫৭ হেক্টর রোপা আউশ, ২ হাজার ৫৭৩ হেক্টর রোপা আমন, ৪৯০ হেক্টর সবজি, ২৩৬ হেক্টর পান এবং ১৮০ হেক্টর মরিচ খেত।

নওগাঁয় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ ৪৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সেখানকার ১৩ হাজার ২০৯ হেক্টর রোপা আউশ, ৩৮ হাজার ৭৪৩ হেক্টর রোপা আমন এবং ১৭০ হেক্টর সবজি খেত নষ্ট হয়েছে।

নাটোরে ফসলহানি হয়েছে ১৩৫ কোটি এব লাখ ৭০ হাজার টাকার। নষ্ট হয়েছে ১৭৪ হেক্টর রোপা আউশ, ৯ হাজার ২৮৭ হেক্টর রোপা আমন এবং ২ হাজার ২১৬ হেক্টর বোনা আমন খেত।

এছাড়া বন্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক হাজার ৮৫০ হেক্টর রোপা আউশ, ৩ হাজার ৬৫২ হেক্টর রোপা আমন এবং ২৫২ হেক্টর সবজি খেত নষ্ট হয়েছে। টাকার অংকে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ ৬৭ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন এই অঞ্চলের চাষিরা।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/জেআইএম