দেশজুড়ে

দান করা হাতে এখন দান নিচ্ছেন রোহিঙ্গা চেয়ারম্যান

 

সাহায্য-সহযোগিতা ও দানের জন্য এক সময় মানুষ তার কাছে এসে দীর্ঘ লাইন দিতো। গণমানুষের প্রতিনিধি হিসেবে নিজের সাধ্যমতো সবাইকে সহযোগিতা করতেন তিনি।

Advertisement

কিন্তু ভাগ্য আজ তাকে এক নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। যে হাতে একদিন তিনি অসহায় মানুষদের দান করতেন আজ সেই হাতে অন্যের কাছে দান চেয়ে হাত পাততে হয়েছে তাকে।

বলছিলাম, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের দক্ষিণ মংডু থানার ডংখালী গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান (স্থানীয় ভাষায় হুক্কাট্টা) মোহাম্মদ বাসের চেয়ারম্যানের কথা। যিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। সেই সঙ্গে আজ ত্রাণের জন্য হাত পাততে হয় তাকে।

প্রতিবেদকের কথা হয় এই জনপ্রিনিধির সঙ্গে। নিজের মাতৃভূমি ও পূর্বপরিচয়ের কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। হতাশা আর ক্ষোভের ভাষায় জানান, রোহিঙ্গাদের ওপর নিজ দেশের সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের কাহিনী।

Advertisement

তিনি বলেন, অং সান সুচিকে মনে করতাম রোহিঙ্গাদের আশা-ভরসা। মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে গৃহবন্দি থেকে শুরু করে বিভিন্ন নির্যাতন ভোগ করেছেন তিনি। মিলিটারিশাসিত মিয়ানমারে সুচিকে মনে করা হতো বার্মায় বসবাসরত সব নাগরিকের ঐক্যের প্রতীক। কিন্তু সুচি ক্ষমতায় এলে ঘটল এর উল্টো।

সেনাশাসিত সময়ে রাখাইন রাজ্যে যে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, এর সমস্ত রেকর্ড ভাঙল সুচিবাহিনী। সন্ত্রাসী দমনের নামে সাধারণ রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। সহায় সম্বলহীন করা হচ্ছে। সর্বোপরি দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। আরাকানে মূলত গণহত্যা চালানো হচ্ছে। যা অনেকেই জানে না।

মংডু থানার ডংখালী গ্রামের সাবেক এই চেয়ারম্যানের অভিযোগের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন রাখাইনের বুচিডং টংবাজার গ্রামের নুর নাহার, মংডু বড়ছড়া গ্রামের জুনু, ফাতেমা, রাজার বিলের খালেদা ও গড়াখালীর রশিদাও।

মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়ে আসা মংডু থানার ডংখালী গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বাসের আশ্রয় নিয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং এলাকায়।

Advertisement

মিয়ানমার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গ্রামে আমার দোতলা বাড়ি ছিল। এমন সুন্দর বাড়ি ওখানে আর কারও ছিল না। জমিজমা ছিল, ছিল হালচাষ। সব কিছু ছেড়ে এখানে আসতে হল শুধু পরনের কাপড় নিয়ে।

আমরা যদি মিয়ানমারে ফিরে যাই ওরা আমাদের মেরে ফেলবে উল্লেখ করে দেশটির সাবেক এই জনপ্রতিনিধি আরও বলেন, ভয় আর আতঙ্ক আমাকে তাড়া করছে এখনও। এলাকার মুরব্বি হিসেবে সরকারিভাবে গঠিত কমিটিরও একজন আমি।

তিনি বলেন, নিয়মিত যোগাযোগ থাকত স্থানীয় মংডু প্রশাসনের সঙ্গে। অথচ ওরাই প্রথমে এসে আমার সুন্দর বাড়িটি পুড়িয়ে দিল। সব শেষ করে দিল। নিঃস্ব করে পথে বসিয়ে দিল। এক সময় এলাকার অনেক অসহায় লোকজনকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতাম। এখন সেই হাত অন্যজনের কাছে পাততে হচ্ছে। ভাগ্যের কী নির্মমতা! তা বলে বোঝাতে পারবো না।

এদিকে রাখাইনের টংবাজারের নুর নাহার বলেন, মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। তবে ভিটেমাটি, ঘরবাড়ি ফিরিয়ে দিতে হবে। আমাদের রাখাইনদের মতো রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে এসেছি ঘরবাড়ি হারিয়ে। আজীবন থাকার জন্য আসিনি। জানতে চাইলে মিয়ানমার রাজারবিলের ফাতেমা বলেন, স্বামী মোহাম্মদ শুক্কুর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহত হয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে। আমি কয়েকদিন পর একমাত্র ছেলে আলী নুরকে নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এসেছি। এখনও স্বামীকে দেখতে পাইনি। প্রাণ বাঁচাতে খাবার জোগাড় করতে রাস্তায় বসেছি। জানি না এই নির্মমতার শেষ কোথায়। কোথায় আমাদের আশ্রয় হবে।

এএম/আরআইপি