আন্তর্জাতিক

আগুনে ঝলসে যাওয়া রোহিঙ্গাদের আর্তনাদ

এক শিশুর হাত, মুখ, গলা ঝলসে গেছে আগুনে। হাসপাতালের বিছানায় মায়ের কোলে ব্যথায় কাতড়াচ্ছে সে। হাসপাতালের এক কর্নারে বিছানায় শুয়ে আছেন এক নারী। তারও পুরো শরীর আগুনে ঝলসে যাওয়া।

Advertisement

যন্ত্রণাময় এমন সাধারণ দৃশ্য এখন বাংলাদেশের বন্দর নগরী কক্সবাজার জেলার সদর হাসপাতালের। এই রোগীরা হচ্ছেন রোহিঙ্গা শরণার্থী; যারা প্রতিবেশি মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে দেশটির সেনাবাহিনীর হামলায় পালিয়ে এসেছেন।

হাসপাতালের একজন রোগী ৩০ বছর বয়সী শাহিদা বেগম। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী এসে আমার বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়। ওই সময় আমি ঘরের ভেতরে ছিলাম। পালানোর কোনো পথ ছিল না, আগুন আমাকে গ্রাস করে নেয় এবং পুরো শরীর ঝলসে যায়।

তিনি বলেন, অসহ্য ব্যথা। এই যন্ত্রণার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো। রাখাইনের রাশিডং গ্রামে সেনাবাহিনীর দেয়া আগুনে পুড়ে গেছে শাহিদার বাড়িও। এর দুদিন আগেই তার তিন সন্তানকে হত্যা করা হয়। রোহিঙ্গা এই নারী বলেন, জীবন আর কখনোই আগের মতো হবে না।

Advertisement

পাঁচদিন আগে একই হাসপাতালে ১০ বছর বয়সী মেয়ে নুর কলিমাকে-সহ ভর্তি হয়েছেন দিলদার বেগম। তাদের পরিবারের একমাত্র জীবিত এখন তারা দুজনই। রাখাইনের সহিংসতায় দিলদার হারিয়েছেন তার স্বামী, ছোট ছেলে এবং শাশুড়িকে।

তিনি বলেন, ২৯ আগস্ট আমার পরিবারের ওপর হামলা হয়। সেনাবাহিনী এসে নির্বিচারে গুলি নিক্ষেপ করে।

‘আমার মেয়ে ও আমি কোনো রকমে রক্ষা পাই। কিন্তু সেনাবাহিনীর সহযোগী দুই বৌদ্ধ ভিক্ষু বড় ছুরি দিয়ে আমাদেরকে হত্যার চেষ্টা করে। আমরা মারা গেছি ভেবে তারা চলে যায়। আমরা বাড়িতে তিনদিন লুকিয়ে ছিলাম। পরে পালিয়ে এসেছি।’

সীমান্তে পৌঁছানোর জন্য তারা যে যাত্রা শুরু করেছিল তা একরকম ঝাপসা হয়ে আসে। শাহিদা বলেন, আমি অনেক যন্ত্রণায় ছিলাম।

Advertisement

আট বছর বয়সী মোহাম্মদ আনাস মুখে আঘাতের ক্ষত নিয়ে চুপচাপ বসে আছে হাসপাতালের বিছানায়। সেনাবাহিনীর হামলায় আহত আনাস ক্ষত নিয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। হাসপাতালে আনাসের সঙ্গী হয়েছে তার চাচা সৈয়দ আলম।

সৈয়দ বলেন, আমরা মনডুয়া জেলার লানখালি গ্রাম থেকে পালিয়েছি। ঈদের তিনদিন আগে এই গ্রামে হামলা হয়। আমরা পালিয়ে কাছের একটি পাহাড়ে আশ্রয় নেই। পালানোর সময় আমাদের পরিবারের ১০ সদস্য ছিল। কিন্তু এরমধ্যে মাত্র ছয়জন এখানে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। বাকিদের কপালে কী ঘটেছে; সেবিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য বলছে, ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পৌঁছেছে। রোহিঙ্গাদের এই পালিয়ে আসার ঘটনাকে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ‘দ্রুততম ক্রমবর্ধমান শরণার্থী সঙ্কট’ হিসেবে বলা হচ্ছে।

>>আল-জাজিরা অবলম্বনে সাইফুজ্জামান সুমন।

এসআইএস/জেআইএম