মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তবে নিবন্ধন কার্যক্রমে সাড়া নেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গাদের। নতুন-পুরাতন প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের ক্যাম্পসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও নিবন্ধিত হয়েছে মাত্র ৩৮ হাজার। যা মোট রোহিঙ্গার মাত্র ৩ দশমিক ২ শতাংশ।
Advertisement
কক্সবাজার স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নানা কারণে আগে থেকে (এ বছরের আগস্টের আগে) ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করে আসছে। তাদের মধ্যে ৩২ হাজার নিবন্ধিত। বাকি প্রায় পৌনে ৪ লাখ রোহিঙ্গা অনিবন্ধিত অবস্থায় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস করছেন। এ অবস্থায় চলতি বছর দুই ধাপে আরও প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সরকার নতুন করে তাদের নিবন্ধনের কাজ শুরু করলে তেমন সাড়া মিলছে না।
কক্সবাজারের কুতুপালং এলাকার রোহিঙ্গা নিবন্ধন কার্যক্রমের বিষয়ে বিজিবির সমন্বয়ক ও অতিরিক্ত পরিচালক (যোগাযোগ) মেজর কাজী ওবায়েদুর রেজা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে ১০টি বুথে ১২ বছরের ঊর্ধ্ব রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন করা হচ্ছে। মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর পর্যন্ত মোট ৬ হাজার রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি অনুযায়ী নিবন্ধনের সংখ্যা অনেক কম। প্রচার প্রচারণা কিছুটা কম। পাশাপাশি অনেকে বিভিন্ন স্থান থেকে ক্যাম্পে আসছেন, তারা নিবন্ধন সম্পর্কে ঠিকমত জানেন না। আরেকটু বেশি প্রচার করলে নিবন্ধনের সংখ্যা আরও বাড়বে।’
Advertisement
সরেজমিনে কুতুপালংয়ের নিবন্ধন বুথগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষ ও নারী রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা লাইন করা হয়েছে। নিবন্ধনের অপেক্ষায় লাইনে মাত্র ৬০-৭০ রোহিঙ্গা অপেক্ষা করছেন। তবে তাদের মধ্যে অনেকেই না জেনে নিবন্ধনের লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তাদের ভাষায়, নিবন্ধন করলে খাবার আর ত্রাণ পাওয়া যাবে।
কুতুপালং রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে এবং একাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে আগ্রহ নেই তাদের। সরকারের সুযোগ-সুবিধা কিংবা দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারেও এখনই ভাবছেন না তারা। আপাতত তাদের দরকার খাবার।
বুড়িচং থেকে পালিয়ে আসা তানিয়া নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘নিবন্ধনের জন্য বারবার মাইকিং করতে শুনেছি কিন্তু বার্মার (মিয়ানমারের) যে অবস্থা দেখে এসেছি আমরা এখন বাড়ি ফিরে যেতে চাই না। আমাদের এবং আমাদের শিশুদের এখন খাবার, শুধু খাবার দরকার।’
সাইফুল্লাহ ইকবাল নামের এক রোহিঙ্গা জানান, ‘শুনেছি নিবন্ধনের পর আমাদের দেশে পাঠিয়ে দেবে। তাই আমরা নিবন্ধন করতে চাই না।’
Advertisement
অনেকে আবার উল্টো প্রশ্ন করলেন, নিবন্ধন করে কী লাভ? তাদের মতে, দেশটিতে যে অবস্থা তা এখনই ফেরত যাওয়ার মতো না।
গত মাসের (আগস্ট ২০১৭) শেষ সপ্তাহে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ও রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ সদস্যসহ বহু রোহিঙ্গা হতাহত হয়। ওই ঘটনার পরপরই অভিযান শুরু করে দেশেটির সেনাবাহিনী। অভিযানে রাজ্যটিতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ, বাড়ি-ঘরে আগুনসহ নানা ধরনের নির্যাতন চলছে। এরপর থেকেই প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ পালিয়ে আসছে।
জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা-আইওএম সর্বশেষ সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) নতুন করে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৪ লাখ ২০ হাজার বলে জানিয়েছে। মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা না গেলে এ সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে আইওএম।
এদিকে, গতকাল (মঙ্গলবার) রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক চাপে ভীত নয় মিয়ানমার। মিয়ানমার সেনাবাহিনী শান্তিরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। শান্তি না আসা পর্যন্ত সেনা অভিযান চলবে। আমরা শান্তি এবং ঐক্য চাই। যুদ্ধ চাই না।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যারা পালিয়ে গেছে তাদের মধ্যে যারা পুনর্বাসনের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন যে কোনো সময় তাদের সঠিক অবস্থান যাচাই করবে মিয়ানমার।
সাঈদ আলমগীর/এআর/আরএস/আইআই