আন্তর্জাতিক

ইউনূসের খোলা চিঠিতে এবার যুক্ত হলেন অমর্ত্য সেন

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তাণ্ডব বন্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে ১২ জন নোবেল বিজয়ীসহ বিশ্বের প্রখ্যাত ৩০ জন ব্যক্তি খোলা চিঠি লেখেন গত ১৩ সেপ্টেম্বর। সেই চিঠিতে নিজের নাম যুক্ত করেছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।

Advertisement

মঙ্গলবার ইউনূস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লামিয়া মোরশেদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, অমর্ত্য সেন বলেছেন, সাধারণত তিনি যৌথ কোনো বিবৃতিতে নিজের নাম যোগ করেন না। তবে রোহিঙ্গাদের করুণ পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় রেখে তিনি স্বাক্ষর করেছেন। এ কথা তিনি মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেন।

উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী আরিফ নাকভি ওই খোলা চিঠিতে নিজেদের নাম যোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। ফলে এখন পর্যন্ত ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬ জন। এই ৩৬ জনের মধ্যে নোবেল বিজয়ী ১৩ জন।

বাংলাদেশ থেকে একামাত্র নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের ডাকে সাড়া দিয়ে শান্তিতে নোবেল জয়ী আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, মালালা ইউসুফজাই, শিরিন এবাদী, বেটি উইলিয়াম্স, মেইরিড মাগুইর, অসকার আরিয়াস সানচেজ, লেইমাহ বোয়ি, তাওয়াক্কল কারমান, জোডি উইলিয়াম্স ওই খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।

Advertisement

এছাড়া আরও যুক্ত হন ভারতের কবি জাভেদ আখতার ও অভিনেত্রী শাবানা আজমি এবং পাকিস্তানের মানবাধিকার নেত্রী আসমা জাহাঙ্গীর।

ইতালির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমা বোনিনো, মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়েদ হামিদ আলবার, নরওয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গ্রো হারলেম ব্রান্ডটল্যান্ড, আসিয়ানের সাবেক মহাসচিব সুরিন পিটসুয়ান এবং থাইল্যান্ডের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাসিত পিরোমিয়া রয়েছেন।

এই লোকজনকে মুহাম্মদ ইউনূস লেখেন, গত বছর রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমরা কয়েকজন নোবেল বিজয়ী এবং বিশ্বের বিশিষ্ট কয়েকজন নাগরিক সে ব্যাপারে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে আপনাদের নিকট অনুরোধ করেছিলাম।

সেই ডাকে আপনারা সাড়া দিলেও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। নিরাপরাধ মানুষদের ওপর নির্যাতন বন্ধ এবং রাখাইন রাজ্যে স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আমরা আবারও আপনাদের অনুরোধ করছি।

Advertisement

মুহাম্মদ ইউনূস ওই খোলা চিঠিতে আরও বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তাণ্ডবে শত শত রোহিঙ্গা নিহত হচ্ছে। বাস্তুচ্যুত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে অনেক গ্রাম। ধর্ষণ করা হচ্ছে নারীদের; শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে, আটকে রাখা হচ্ছে পুরুষদের। অথচ মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।

আরও বলা হয়, ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশরা চলে গেলে স্বাধীন মিয়ানমারে বিভিন্ন সরকারের আমলে রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী সে দেশের নাগরিক ছিল। সংসদ সদস্য এমনকি মন্ত্রীও ছিল রোহিঙ্গাদের। ১৯৮০-র দশকে সামরিক শাসক হঠাৎ করেই রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশের নাগরিক মানতে অস্বীকার করে। তার পর থেকেই রোহিঙ্গা বিতাড়নের সামরিক ও রাজনৈতিক কৌশল শুরু হয়।

সহিংসতা বন্ধ করে মিয়ানমার সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তারা। এছাড়া কফি আনানের নেতৃত্বাধীন ‘রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশন’-এর সুপারিশ বাস্তবায়নেরও দাবি জানান।

আনন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কিছু সুপারিশও করা হয় খোলা চিঠিতে।

কেএ/আইআই