জাতীয়

কমতে শুরু করেছে চালের দাম

 

পাইকারি বাজারে কমতে শুরু করেছে সব ধরনের চালের দাম। একদিনের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি দাম কমেছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। রাজধানীর সবচেয়ে বড় চালের আড়ত বাবুবাজার, বাদামতলীসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

Advertisement

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চালের দাম কমতির দিকে। এর পেছনে দুটি কারণ। একদিকে সরকারের খোলাবাজারে চাল বিক্রি অন্যদিকে অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান পরিচালনা

অভিযান অব্যাহত থাকলে চালের দাম দু-তিনদিনের মধ্যেই সহনীয় পর্যায়ে আসবে বলে মনে করছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে চালের দামের অস্থিরতার মধ্যে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে চাল রফতানি করতে ভারত সরকারের অপারগতা  প্রকাশের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। দেশটির বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়। ফলে অস্থির হয়ে ওঠে চালের বাজার।

Advertisement

এমন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে চালের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হয়েছে’ বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। চলের দাম নিয়ন্ত্রণে অবৈধ মজুদদারের বিরুদ্ধে অভিযানে নামার নির্দেশনা দেন মন্ত্রী। শুরু হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান। এর প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে বাজারে।

বাবুবাজারের ‘হাজি রাইস’ এজেন্সির স্বত্বাধিকারী হাজি জিয়াউল হক সোমবার জাগো নিউজকে বলেন, চাতালগুলোতে পর্যাপ্ত চাল আছে। সরকার যদি অভিযান অব্যাহত রাখে তাহলে তারা দাম কমাতে বাধ্য হবে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চালের দাম কম থাকলে আমরা এক গাড়ি অর্ডার দিলে তারা দেড় গাড়ি পাঠায়। আর চালের দাম বাড়লে সবকিছু যেন উল্টে যায়। তখন বলে, আরও অনেক অর্ডার আছে, কম নেন। এভাবেই তারা চালের দাম বাড়ায়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে মিলার সংখ্যা কম ছিল, এখন বেড়েছে। তাদের মধ্যে বড় রাইস মিলারের সংখ্যা বেশি। তাদের অটো রাইস মিল সচল রাখার জন্য প্রতিযোগিতা করে ধান কেনে ও মজুদ করে। কিন্তু চাহিদা অনুসারে তারা বাজারে চাল ছাড়ে না। ফলে এক ধরনের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি হয়। দাম বেড়ে যায়।

Advertisement

তবে গত দু’দিনে চালের দাম কমতির দিকে জানিয়ে এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ঈদের পর যেভাবে দাম বেড়েছে, তা অস্বাভাবিক। এখন অভিযানের কারণে বস্তাপ্রতি মানভেদে ৫০-১০০ টাকা দাম কমেছে। দাম আরও কমবে।

বাবুবাজারে বিভিন্ন আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি মিনিকেট ৫৯-৬০ টাকা, নাজিরশাইল ৬৪ ও আটাশ চাল ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই দরে বিক্রি হচ্ছে ঊনত্রিশ চাল। একই সঙ্গে স্বর্ণা (মোটা চাল) বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে।

বাবুবাজার ও বাদামতলীর ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মজুদকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের এ অবস্থান জনবান্ধব। এটা অব্যাহত রাখা উচিত। কেননা এতে আমাদের ব্যবসাও ভালো হয়। চালের দাম বাড়লে পুঁজি বেশি লাগে। চাতাল মালিকরাও চাল দিতে চান না। এখন যেমন কোনো চাতাল মালিকই চাল দিচ্ছেন না।

এ বিষয়ে বাদামতলীর চাল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, চাতাল মালিকদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ চাল মজুদ আছে। তারা বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চাল মজুদ করেছেন। এতে একদিকে মার খাচ্ছেন ছোট চাতাল মালিকরা, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের সাধারণ মানুষ। কারণ সবাই সিন্ডিকেটের কলে আটকে গেছে। এ অবস্থায় সরকারের এ অভিযান চালের সিন্ডিকেট ভাঙতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।

রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৮ থেকে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে নিম্নআয়ের মানুষের। হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। বিশেষ করে দরিদ্রসীমার নিচে বা কাছাকাছি থাকা প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রয়োজনীয় খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বন্যার কারণে দেশে চালের উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। এই ঘাটতি মেটাতে বিভিন্ন দেশে থেকে আমরা চাল আমদানি করছি। যেন বাজারে চালের কোনো সঙ্কট না থাকে।

তিনি বলেন, বাজারে চালের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে এটি সত্য। এর পেছনে কিছু ব্যবসায়ী ও একটি মহল দায়ী। তারা ভারত চাল রফতানি বন্ধ করেছে- এমন গুজব ছড়িয়ে এবং অবৈধভাবে চালের মজুদ করে দাম বাড়িয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতোমধ্যে জেলায় জেলায় তাদের চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে।

‘চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যেখানে যা করা দরকার তা করা হবে। শিগগিরই চালের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে’- আশান্বিত করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

এসআই/এমএ/এমএআর/আরআইপি