দেশজুড়ে

সবচেয়ে বড় দুর্গামণ্ডপ সিকদার বাড়িতে সাজ সাজ রব

বাগেরহাটে ৬০৫টি মণ্ডপে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে প্রতিমা শিল্পীরা।

Advertisement

কোনো কোনো মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। আবার কোনোটিতে চলছে দেব-দেবীকে রঙিন করার কাজ। তবে এ বছর দেশের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও বেশি প্রতিমা নিয়ে সিকদারবাড়ির দুর্গা উৎসব হতে যাচ্ছে। এবার এই মণ্ডপে ৬৫১টি প্রতিমা নিয়ে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ দুর্গা উৎসব আয়োজন করছে বলে দাবি ব্যবসায়ী লিটন সিকদারের।

১৯ সেপ্টেম্বর শুভ মহালয়া অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এ বছর দেবী দুর্গা নৌকায় আগমন এবং ঘোড়ায় চড়ে গমন করবেন।

আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে দুর্গা উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ২৯ সেপ্টেম্বর বিজয়া দশমির মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৫ দিনব্যাপী এই উৎসব।

Advertisement

এবছর বাগেরহাট জেলার বেশ কয়েকটি মন্দিরে শতাধিক প্রতিমার মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। এদের মধ্যে সিকদার বাড়ি ছাড়াও চুলকাঠি বনিকপাড়া মণ্ডপ, ফকিরহাট মণ্ডপ, কাড়াপাড়া সার্বজনীন পূজামণ্ডপ অন্যতম। এবছর পূজামণ্ডপগুলোকে একটু বিশেষভাবে সাজানো হচ্ছে।

গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও জেলার বৃহৎ আয়োজন বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের সিকদারবাড়িতে।

গত বছরের চেয়ে আরও অর্ধশত প্রতিমা বাড়িয়ে এবার ৬৫১টি প্রতিমা নিয়ে দুর্গা উৎসব আয়োজন করা হয়েছে সিকদার বাড়িতে। সাত বছর ধরে ব্যবসায়ী লিটন সিকদার নিজ বাড়িতে এই দুর্গাপূজার আয়োজন করে আসছেন।

লিটন সিকদারের দাবি, প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পূজামণ্ডপ। গত বছর এখানে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয় ৬০১টি প্রতিমা দিয়ে। এ বছর তার সংখ্যা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৫১টিতে।

Advertisement

২০১০ সাল থেকে নিজ বাড়িতে দুর্গাপূজার এই আয়োজন শুরু হয়। প্রথমবার ২০১টি প্রতিমা দিয়ে শুরু হয় পূজা। প্রতি বছর দেশের ও দেশের বাইরের দর্শণার্থীরা অসংখ্য প্রতিমার সমন্বয়ে সিকদার বাড়ির দুর্গাপূজা দেখতে এখানে জড়ো হয়। এবার ৬৫১টি প্রতিমা মণ্ডপে স্থান পেয়েছে, যা দেখতে আরও ব্যতিক্রম বলে তিনি দাবি করেন।

সিকদার বাড়ির প্রতিমা তৈরির ভাস্কর মিলন বাছাড় বলেন, রামায়ণ ও মহাভারতের দেব-দেবীর নানা কাহিনি অবলম্বনে প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। প্রায় পাঁচ মাস ধরে ১৫ জন কারিগর দিনরাত প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। এখন শেষ সময়ে রঙতুলির কাজ করা হচ্ছে।

প্রতিমা তৈরি দেখতে আসা সুমনা সাহা জানান, মা দুর্গার আগমন উপলক্ষে আমরা উচ্ছ্বাসিত। বছরে একবারই মা আসেন। তাই এ সময়কে আমরা উপভোগ করতে চাই।

হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বাগেরহাট জেলা সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট মিলন কুমার ব্যানার্জি জানান, দুর্গোৎসবে আমাদের সব প্রস্তুতি ভালোভাবে চলছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর মহাআড়ম্বর পূর্ণ হবে আমাদের অনুষ্ঠান।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় বলেন, এ বছর বাগেরহাটের ৯ উপজেলা ও ৩ পৌরসভার ৬০৬টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে উৎসব। নয় উপজেলার মধ্যে চিতলমারী উপজেলায় সব থেকে বেশি ১৩৯টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

দুর্গোৎসবে জেলা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা সব প্রস্তুতি নিয়েছি। জেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপে কমপক্ষে একজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

তবে প্রয়োজন অনুযায়ী বেশিসংখ্যক পুলিশ সদস্যও মোতায়েন করা হবে। পুলিশের পাশাপাশি আনসার-ভিডিপির সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন।

পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার নাম ও মোবাইল নম্বর প্রিন্ট করে প্রত্যেক মণ্ডপের গায়ে লাগানো থাকবে। যাতে করে কোনো সমস্যা হলে দ্রুত পুলিশকে অবহিত করতে পারে।

শওকত আলী বাবু/এএম/এমএস