বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) বহির্বিভাগের সামনের রাস্তার পূর্বপাশের দেয়াল ঘেঁষে বসেছিল আনুমানিক ১০ বছর বয়সী এক শিশু। তার সামনে চিকিৎসকদের ব্যবহৃত একটি কাগজের প্যাড। ডান পায়ের দুই আঙুলে কলম আঁকড়ে ধরে সেই প্যাডের ওপর দ্রুতগতিতে নিজের নাম, বাবার নাম, ঠিকানা ও বিভিন্ন রঙের নাম ইংরেজিতে লিখছিল শিশুটি।
Advertisement
পথচারীরা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে অবাক বিস্ময়ে ক্ষুদে এ শিশুটির মুক্তার মতো ঝকঝকে লেখা পড়ছিলেন। শিশুটির পাশেই একটি লাল রঙের প্লাস্টিকের বোল রাখা। কেউ কেউ পকেট থেকে ৫-১০ টাকা বের করে সাহায্য দিচ্ছিলেন। কেউ কেউ শিশুটিকে দেখে বলছিলেন, আহারে বেচারা!
ছোট এই শিশুটির নাম দুখু মিয়া। জন্মগতভাবে বিকলাঙ্গ। বয়স ১০ বছর হলেও ছিপছিপে শরীরটি কঙ্কালসার। গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের রৌমারী থানার বকবান্দা গ্রামে। দরিদ্র এক কৃষক পরিবারে জন্ম। তার মা জানান, তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে দুখু মিয়া সবার বড়।
স্থানীয় একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে দুখু মিয়া। সে শুধু দুই পায়ের আঙুলে জোর পায়। ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনার প্রতি প্রবল আগ্রহ। পড়াশুনার পাশাপাশি সে লিখতে খুব পছন্দ করে। দিনের পর দিন দুই আঙুলে লেখালেখির ফলে তার লেখা সুন্দর হয়েছে। স্কুলের শিক্ষকরাও তার লেখার ব্যাপক প্রশংসা করেন।
Advertisement
দুখু মিয়ার মা জানান, গ্রামের এক পরিচিত লোক ছেলেটিকে ঢাকায় নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়ে বলেন, সেখানে লোকজন তার লেখা দেখে মুগ্ধ হয়ে কোনো সুব্যবস্থা করে দিতে পারে। তার মুক্তা ঝরা লেখা দেখে সরকারি অফিসে প্রতিবন্ধীদের বিশেষ কোটায় চাকরিরও ব্যবস্থা হতে পারে।
ওই লোকের কথা শুনে গত দুই মাস ধরে রায়েরবাজারে মাসিক তিন হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাটে ঘুরে ছেলেকে লিখতে বসিয়ে দেন। লোকজন খুশি হয়ে টাকা-পয়সা দিলে তাই দিয়ে চলছেন। নভেম্বরে স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষা। তার আগেই ছেলেকে স্কুলের পরীক্ষা দিতে নিয়ে যাবেন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, এ ছেলেটিকে একা ফেলে কোথাও যেতে পারেন না। কেউ যদি দয়া করে পড়াশুনার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দিত তাহলে কৃতজ্ঞ থাকতেন।
তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে কীভাবে করতে হবে জানতে চাইলে দুখু মিয়ার দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই দ্রুত দুই আঙুলে প্যাডের ওপর মোবাইল নম্বর লিখে দিল দুখু মিয়া।
Advertisement
এমইউ/বিএ/আরআইপি