দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে দীর্ঘস্থায়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। শনিবার সংস্থার ধানমণ্ডিস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত টিআইবির সদস্যদের বার্ষিক সভায় এ আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হওয়া, বাজেটে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ রাখা, মানবপাচার, দেশে গণতান্ত্রিক সংকট, গুম ও বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড বৃদ্ধিতে সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও টিআইবির সমঝোতা স্মারকের উল্লেখ করে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে একযোগে কাজ করলে জনসাধারণকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করা সম্ভব হবে বলে সদস্যরা বার্ষিক সভায় অভিমত ব্যক্ত করেন।সম্প্রতি সংসদে উত্থাপিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রসঙ্গে সদস্যরা নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সকল সদস্য, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্যসহ বিচারপতি, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনীতিকদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ নিশ্চিত ও নিয়মিত হালনাগাদ করা; কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সম্পূর্ণরূপে বিলোপ করা; মানি-লন্ডারিং প্রতিরোধে এবং পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করা এবং কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পকে নিরুৎসাহিত করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতা, ভোট জালিয়াতি, কারচুপি এবং ভোটকেন্দ্র দখলে সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারায় নির্বাচন কমিশন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়ী করেন সদস্যরা। এছাড়া সভায় টিআইবির সদস্যগণ জানুয়ারি-মার্চ মাসের রাজনৈতিক সংকট দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার পাশাপাশি সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি এম হাফিজ উদ্দিন খান। এতে সভাপতিত্ব করেন টিআইবির সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামান বীর বিক্রম, পিএসসি এবং সঞ্চালনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।এম হাফিজ উদ্দিন খান তার বক্তব্যে বলেন টিআইবির কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। সুতরাং বিভিন্ন খাতের ওপর গবেষণা এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশেষ করে তরুণদেরকে সম্পৃক্ত করে সবাই মিলে একসঙ্গে দুর্নীতি-বিরোধী সামাজিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।বার্ষিক সদস্য সভা শেষে এক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। এতে ন্যায্যতা, সুশাসিত ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি দমনে দরকার কার্যকর, স্বাধীন ও সক্ষম প্রতিষ্ঠান; ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জাতীয় সম্পদ ব্যবহারে জবাবদিহিতা; আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা; শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ; বিনিয়োগের নিরাপত্তা; জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা; জনগণের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন; নারী ও সকল সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে আরো সক্রিয় ও উদ্যোগী হতে সরকারকে আহ্বান জানানো হয়।এসএ/বিএ/আরআই/এসআরজে
Advertisement